পিপিই ও এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারিঃ তদন্তে মাঠে নামছে দুদক

0
428
পিপিই ও এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারিঃ তদন্তে মাঠে নামছে দুদক

খবর৭১ঃ করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য কেনা পিপিই ও এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহে অনিয়মের ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক। সংস্থাটির পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলির নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের টিম এ সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছে। সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত, কাগজপত্র ও আলামতের ভিত্তিতে অগ্রগতি প্রতিবেদন তৈরি করে কমিশনে দাখিল করবে ওই টিম। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা এন-৯৫ মাস্ক ও পিপিই সরবরাহের দুর্নীতির বিষয়ে কিছু খবর পেয়েছি। আমাদের টিমকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

দেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে সরকার চিকিৎসা সেবা সচল রাখতে জরুরি ভিত্তিতে পিপিই ও এন-৯৫ মাস্ক কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য প্রথম দফায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএমআইকে এ পিপিই ও এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করে। ওই প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতি ধরা পড়ার পর তাদের সরবরাহকৃত মাস্ক ও পিপিই চিকিৎসকরা প্রত্যাখ্যান করেন। এর ধারাবাহিকতায় তারা বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্তি সচিব সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে ওই তদন্ত কমিটি একতরফা তদন্ত করেছে। তাদের তদন্ত রিপোর্ট এখনও আলোর মুখ দেখেনি। তবে ওই তদন্ত রিপোর্টের সুপারিশের ভিত্তিতে সিএমএসডির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সহীদউল্লাহকে প্রত্যাহার করা হয়।

এদিকে সদ্য প্রত্যাহার হওয়া পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সহীদউল্লাহ ৩০ মে জনপ্রসাশন সচিব বরাবর একটি লিখিত আবেদন (অভিযোগ) দাখিল করেন। সূত্র জানায়, ওই আবেদনের একটি কপি দুদকও পেয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের তদন্ত টিম একতরফা সিএমএসডির ওপর অভিযোগের দায় চাপিয়েছে। অথচ এন-৯৫ ও পিপিই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জেএমআইর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, এন-৯৫ মাস্ক ও পিপিই কেনাকাটায় দুর্নীতি হয়েছে এ অভিযোগের বিষয়ে কমিশন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেছে। করোনা মহামারী প্রারম্ভেই এসব সামগ্রী ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু হয়, টেন্ডার হয়। যে কোনো প্রয়োজনে যে কোনো প্রতিষ্ঠান ক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করবে এটা স্বাভাবিক। এসব ক্রয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি কিংবা জাল-জালিয়াতির ঘটনা ঘটলে দুদক আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এন-৯৫ মাস্ক এবং পিপিই ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাধ্যমে অনিয়ম-দুর্নীতি বা প্রতারণার কিছু তথ্য পেয়েছি। এছাড়া দুদকের হটলাইন ১০৬- এও বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। কমিশন এ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রতিবেদন সংরক্ষণ করছে। এছাড়া কমিশনের গোয়েন্দা ইউনিটকেও এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কমিশন সার্বিকভাবে এসব কেনাকাটার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে আসছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় তদন্ত সম্পন্ন করেছে বলে আমরা জেনেছি। আমরা তাদের ওই প্রতিবেদনটি সংগ্রহ করব। এখন বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এরপরই পূর্ণাঙ্গ কমিশন বসব এবং এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, মাস্ক বা পিপিইর মতো অতীব গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী যা চিকিৎসক, নার্স বা স্বাস্থ্য কর্মীদের জীবনের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই এসব অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হচ্ছে এবং দ্রুততার সঙ্গে অনুসন্ধানসহ এ সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। দুদক যেহেতু স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ তাই এ অভিযোগের বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের মাধ্যমে জনগণকে অবহিত করা হবে।

আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় তৃণমূল পর্যায় (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) থেকে শুরু করে রাজধানীর বড় বড় হাসপাতালের বিষয়ে আমরা যেসব অভিযোগ পাচ্ছি সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হবে এবং অভিযোগের সত্যতা সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্র জানায়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহীদউল্লাহর লিখিত আবেদনের অভিযোগ দুদক টিম পর্যালোচনা করছে। তাতে স্বাস্থ্য খাতের ঠিকাদারদের গডফাদার হিসেবে পরিচিত মিঠু ও তার নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে দুদক টিম জেএমআইর কর্ণধারসহ সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের তদন্তে কি ধরনের ফাঁকফোকর রাখা হয়েছে তা কেন নির্ভুল তদন্ত করা হয়নি তা জানতে ওই কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবে দুদক টিম। এদিকে করোনার কারণে দুদকের চলমান অনুসন্ধান ও তদন্তে কোনো ধরনের শিথিলতা নেই বলে জানান তিনি। এমনকি ক্যাসিনো কাণ্ডে জড়িতদের বিষয়েও কোনো ধরনের শিথিলতার সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।

অপরদিকে দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্রটি আরও জানায়, সরকার স্বাস্থ্য খাতে নতুন করে কয়েক হাজার কোটি টাকার যে বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে, তার সঠিক ভাবে ব্যবস্থাপনা হয় কিনা এর বিষয়েও নজর রাখবে দুদক। এর মধ্যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক পরিচালকসহ অন্তত ৫০ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজ চলমান রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here