পাবনায় সাংবাদিক সুবর্ণা নদী হত্যার নেপথ্যে

0
373

খবর ৭১: পাবনায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধি সুবর্ণা নদীকে হত্যার ঘটনায় অভিযোগের তার সাবেক স্বামী ও শ্বশুরের দিকে। শহরে বিষয়টি প্রকাশ্য হলেও পুলিশ এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে তদন্তে নেমেছে। বছর দেড়েক আগে নদীর ডিভোর্স হয়। এই ডিভোর্সের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদালতে একটি মামলাও চলছে।

নিহত সুবর্ণা আকতার নদীর বোন চম্পা খাতুন বলেন, আমার বোন তার সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ জুন থানায় মামলাটি করেছিলেন। মামলা আদালতে বিচারাধীন। তার সাবেক স্বামী রাজিবের লোকজন নিশ্চিত ছিলেন যে তারা মামলায় হেরে যাবেন। আর এই কারণেই সুবর্ণা নদীকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তার বড় বোন।

তিনি আরো বলেন, আবুল হোসেনের ছেলে রাজীবের সঙ্গে বছর দুয়েক পূর্বে বিয়ে হয়। বছর দেড়েক আগে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর পর সুবর্ণা নদী পাবনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে একটি যৌতুক মামলা করেন। এ মামলায় সুবর্ণা তার সাবেক স্বামী রাজীব ও তার বাবা আবুল হোসেনসহ তিনজনকে আসামি করেন।

গতকাল মঙ্গলবার এ মামলার সাক্ষ্য দেয়ার দিন ছিল। এতে সুবর্ণা আদালতে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেন। মামলায় ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কায় আসামিরা পরিকল্পিতভাবে সুবর্ণাকে হত্যা করেছে বলে দাবি তার পরিবারের। তারা জানান, ইতিপূর্বেও সুবর্ণা নদীকে বিভিন্ন ভাবে শহরে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হয়। গত বছরের জুনে তার গলায় চাকু চালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় তারা। পরে সুবর্ণা নদী জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ মিলনায়তনে গত ২২ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করেন। পরে ওই বছরেই ৩ অক্টোবর একই দাবিতে ঢাকার ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনায়তনে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ সুবর্ণার সাবেক আবুল হোসেনকে আটক করেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে পুলিশ তা গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করতে চাইছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

আবুল হোসেনের মালিকানাধীন একটি ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসাতালের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাতেই আমাদের মালিক আবুল হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। তবে পুলিশ এখনো তা স্বীকার করেনি।

পাবনা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান বলেন, পুলিশের কয়েকটি ইউনিট কাজ করার ফলে ইতোমধ্যেই আমরা বিভিন্ন বিষয়ে পরিষ্কার ধারনা পেয়েছি। খুব শীঘ্রই তা পাবনা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হবে বলেও তিনি জানান। তবে অনেক চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেলেও তদন্তের স্বার্থে তা গোপন রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, পাবনা পৌর সদরের রাঁধানগর মহল্লায় আলিয়া মাদরাসার পশ্চিম পার্শের একটি গলির ভেতরে নদীর ভাড়া বাসার সামনে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক তাকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় তার মা মর্জিনা বেগম বাদী হয়ে কয়েকজনের নাম উল্লেকপূর্বক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মামলাটি নথিভুক্ত হলেই আমরা আরও পরিষ্কার করতে পারবো বলে তিনি জানান।

সুবর্ণা নদী আনন্দ টিভির পাবনা প্রতিনিধির পাশাপাশি অনলাইন পাবনা থেকে অনলাইন পোর্টাল দৈনিক জাগ্রত বাংলার সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন। রাজীবের সঙ্গে বিয়ের আগেও তার আরেকটি বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘরে তার ৯ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

সুবর্ণা নদী জেলার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর মেয়ে। এদিকে নিহতের লাশ পাবনা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে।
খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here