পাকিস্তানে আত্মঘাতী হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৮

0
447

খবর৭১ঃ পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নবগঠিত বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির সমাবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৮ জন হয়েছে। দেশটির ইতিহাসে অন্যতম এই প্রাণঘাতী হামলায় আহত হন দেড়শর বেশি।

বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটার কাছে মাসটুং শহরে শুক্রবার বিস্ফোরণটি ঘটেছে।-খবর এএফপি ও রয়টার্সের।

২৫ জুলাই অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দফায় দফায় হামলায় দেশটিতে সহিংসতার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি সপ্তাহে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এটি তৃতীয় হামলা।

নিহতদের মধ্যে আসন্ন নির্বাচনে দলটির প্রার্থী সিরাজ রাইসানিও রয়েছেন। বেলুচিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী নবাব আসলাম রাইসানির ছোট ভাই নবাবজাদা সিরাজ রাইসানি বেলুচিস্তান মুত্তাহিদা মাহাজের (বিএমএম) প্রধান ছিলেন।

১৯৭০-এর দশকে দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নবাব ঘোষ বখশ রাইসানি। এ বছর জুনে নবগঠিত বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) সঙ্গে যোগ দেয় সিরাজের বিএমএম।

আসন্ন নির্বাচনে আপন ভাই নবাব আসলাম রাইসানির বিরুদ্ধেই পিবি-৩৫ মাসতুং আসনে নির্বাচনী প্রার্থী হয়েছিলেন সিরাজ।

তার কিশোর বয়সী ছেলে হাকমল রাইসানি ২০১১ সালে এ জেলাতেই গাড়িতে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। সেবার সিরাজ ওই গাড়িতে থাকলেও হামলা থেকে অক্ষতভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন।

কিন্তু তার পরও প্রাণের হুমকির কোনো তোয়াক্কা না করে তিনি রাজনীতি চালিয়ে যান।

কর্তৃপক্ষ বলছে, শুক্রবার একটি কম্পাউন্ডে রাজনৈতিক বৈঠক চলছিল, সেখানে ভিড়ের মধ্যেই আত্মঘাতী হামলাকারী নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছে।

সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা কাইয়ুম লাশহারি বলেন, সমাবেশে এক হাজারের বেশি লোক উপস্থিত ছিলেন।

নিজেদের সংবাদ সংস্থা আমাকে হামলার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। কিন্তু তারা বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়নি।

স্থানীয় সাংবাদিক আতা উল্লাহ বলেন, মানুষের দেহাবশেষ, রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন মাংসের টুকরা কম্পাউন্ডের চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।

সালাম বালোচ নামের এক রাজনৈতিক কর্মী বলেন, তিনি কান স্তব্ধ করে দেয়ার মতো শব্দ শুনেছেন। এর পর আগুন ও ধোয়ার কুণ্ডলী উঠে আসতে দেখেছেন।

উদ্ধারকর্মীরা আসার আগে লোকজন মরদেহ ও আহতদের রিকশাসহ বিভিন্ন গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান বলে সালাম বালোচ জানিয়েছেন।

জরুরি উদ্ধারকর্মীরা হতাহতদের অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে নিয়ে যান।দরিদ্রপীড়িত অঞ্চলটিতে বিদ্যুৎ না থাকায় অন্ধকারের মধ্যে তাদের পাশে দাঁড়ানো লোকজনকে কাঁদতে দেখা গেছে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হামলা থেকে যারা বেঁচে গেছেন, তাদের মাসটুং ও কোয়েটার আশপাশের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ সময়ে শোকাহত মানুষের ভিড় দেখা গেছে। নিহতদের কাফনের কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

বেলুচিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগা উমার বাংগালজেই বলেন, মৃত্যের সংখ্যা বেড়ে ১২৮ জন হয়েছে।

২০১৪ সালে পেশওয়ারে একটি স্কুলে তালেবান জঙ্গিদের হামলার পর এটিই সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী বিস্ফোরণ। ওই হামলায় নিহত ১৫০ জনের অধিকাংশই ছিল শিশু।

আফগান সীমান্তের কাছে বান্নু অঞ্চলে শুক্রবার একটি রাজনৈতিক শোডাউনের কাছে মোটরসাইলের ভেতরে রাখা বোমা বিস্ফোরণে চারজন নিহত ও ৩৯জন আহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এই আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গত মঙ্গলবার পেশওয়ার শহরে আওয়ামী ন্যাশনাল পার্টির (এএনপি) নির্বাচনী সমাবেশে বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানি তালেবান। তাতে নিহত ২২ জনের মধ্যে এএনপির স্থানীয় রাজনীতিবীদ হারুন বিলোর ছিলেন।

পরের দিন তার জানাজায় হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন।

পাকিস্তানে ইসলামিক স্টেটের নীরব উপস্থিতি রয়েছে। অতীতেও তারা সেখানে নৃশংস হামলা চালিয়েছে। গত বছর সুফিদের উপসনালয়ে এক হামলায় ৯০ জন নিহত হয়েছেন।

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে আফগান সীমান্তের বিশাল অঞ্চলে সরকারি ও সামরিক বাহিনীর অভিযানের পর দেশটির নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতি হয়েছিল।

বিশ্লেষকরা বলেন, পাকিস্তানিরা যদি উগ্রবাদের মূল কারণ সামাল দিতে না পারেন, তবে দেশটির জঙ্গিরা আরও হামলার সক্ষমতা অর্জন করবে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here