খবর৭১:ভারতের দুই বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে এ বিষয়ে দিল্লির অবস্থান পরিষ্কার করেছেন দেশটির কর্মকর্তারা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’কে তারা বলেছেন, পাকিস্তানের হামলায় ভারতীয় বিমান দুর্ঘটনা হয়নি। যা হয়েছে তার জন্য দায়ী যুদ্ধবিমানের পাইলট। এর আগে পাকিস্তান জানায়, দেশটির আকাশসীমায় বুধবার ভারতের দুই যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। দুই বিমানের একটি আজাদ কাশ্মিরে ভূপাতিত হয়। অন্যটি ভারতের দখলকৃত কাশ্মিরে গিয়ে ভূপাতিত হয়।
২৭ ফেব্রুয়ারি ভূপাতিত ভারতীয় যুদ্ধবিমান
২৭ ফেব্রুয়ারি ভূপাতিত ভারতীয় যুদ্ধবিমান
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মিরের পুলওয়ামাতে ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। এতে ভারতীয় বাহিনীর অন্তত ৪৪ সদস্য নিহত হয়। পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ওই হামলা সংঘটিত হয়েছে দাবি করে ভারত। একে কেন্দ্র করে ২৬ ফেব্রুয়ারি নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে কাশ্মিরের পাকিস্তান অংশে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বাহিনী। পরদিন পরদিন পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করলে ভারতীয় দুই যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করে পাকিস্তানি বাহিনী।
পাকিস্তানের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের যে আত্মরক্ষা অধিকার রয়েছে তা বোঝাতেই আত্মরক্ষামূলক এ হামলা চালানো হয়েছে। পাকিস্তান নিজ থেকে কোনও হামলা করতে চায় না। কিন্তু ভারত যদি হামলা করে তবে তার পাল্টা জবাব দেওয়া হবে।
ইসলামাবাদ বলছে, অন্য কোনও উদ্দেশ নেই বলেই প্রকাশ্যে হামলা চালানো হয়েছে। অন্য উদ্দেশ্য থাকলে এভাবে হামলা চালানো হতো না। তবে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত যদি প্রমাণ ছাড়াই কথিত সন্ত্রাসবাদীদের উপস্থিতি দাবি করে হামলা করতে পারে তাহলে আত্মরক্ষার অধিকারের বলে একই কাজ পাকিস্তানও করতে পারে। তবে ইসলামাবাদ চায়, ভারত শান্তি স্থাপনের সুযোগ দিক। পাকিস্তান মনে করে ভারতের উচিত পরিণত গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে কোনও সমস্যার সমাধান করা।
এদিকে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে কাশ্মিরের পাকিস্তান অংশে ভারতীয় বাহিনীর হামলার পর থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমর্থন পেতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দিল্লি। এর অংশ হিসেবে হামলার একদিনের মাথায় পাকিস্তানের নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসেবে পরিচিত চীনে উড়াল দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। সেখানে তিনি চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে পুলওয়ামা হামলা নিয়ে আলোচনা করেন।
রাশিয়া, ভারত ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের ১৬তম সম্মেলনে অংশ নিতে সুষমা স্বরাজের এ সফর।
সফরে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ঝি-র সঙ্গে সাক্ষাতে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতীয় বিমান হামলার পক্ষে আওয়াজ তোলেন সুষমা স্বরাজ। তিনি বলেন, সন্ত্রাস দমন করতে পাকিস্তান কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলেই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে ভারত। একইসঙ্গে পুলওয়ামার ঘটনা নিয়ে ভারতের নাগরিকদের মধ্যে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে সেটাও তুলে ধরেন সুষমা। তিনি বলেন, ফের হামলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলেই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছে ভারত।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান তাদের দেশে থাকা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু তাই নয়, জঙ্গিদের উপস্থিতির কথাই মানতে চায়নি ইসলামাবাদ। দিল্লির কাছে খবর ছিল, আবার নতুন করে আঘাত হানার পরিকল্পনা করেছে জয়েশ-ই-মোহাম্মদ। এমতাবস্থায় তাদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। আর এই হামলায় যাতে কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের মৃত্যু না হয় তাও বিবেচনায় রাখা হয়েছিল।
সুষমা স্বরাজ বলেন, দিল্লি উত্তেজনা আর বাড়াতে চায় না। ভারত দায়িত্বশীল দেশের ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, আমি এমন একটা সময়ে এখানে কথা বলতে এসেছি, যখন ভারতের নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পুলওয়ামার চেয়ে বড় হামলা আর কখনও হয়নি।
এর আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সিঙ্গাপুর ও আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি পাকিস্তানে ভারতের বিমান হামলা নিয়ে কথা বলেন। এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ছাড়াও ভারতের পক্ষ থেকে রাশিয়া, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মতো প্রভাবশালী দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে।
ভারতের সরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে, ফোনালাপে সুষমা স্বরাজ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওকে জানিয়েছেন কেন ভারতকে এই হামলা চালাতে হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন, ভারত শুধু জয়েশ-ই-মোহাম্মদের ঘাঁটিকেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। সূত্র: এনডিটিভি, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
খবর৭১/জি