পাইকগাছায় মহিলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় স্বামীকে মারপিট॥আ’লীগ নেতা কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

0
281

শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা)প্রতিনিধি:
পাইকগাছায় শিক্ষা কর্মকর্তা স্ত্রী শোভা রায়কে অঙ্গ-ভঙ্গির মাধ্যমে উত্ত্যক্তের ঘটনার জের ধরে স্থানীয় ময়নুল ইসলাম(৪৪) নামের এক আ’লীগ নেতা ও কলেজ শিক্ষকের নেতৃত্বে তার স্বামী বাবলু ঘোষকে পিটিয়ে জখম করেছে। এঘটনায় শোভা রায়ের স্বামী বাবলু কুমার ঘোষ বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল রবিবার পাইকগাছা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ময়নুল ও তার এক সহযোগীসহ অজ্ঞাত আরো ৩/৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বিবরণ ও স্থানীয়রা জানায়,খুলনার ডুমুরিয়ার বাবলু কুমার ঘোষের স্ত্রী শোভা রায় পাইকগাছা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এসময় উপজেলার ৬ নং ওয়ার্ডের বাতিখালী গ্রামের সরদার হারুন অর রশিদের ছেলে স্থানীয় একটি কলেজের প্রভাষক ও আওয়ামীলীগ নেতা ময়নুল ইসলাম শিক্ষা কর্মকর্তা সঞ্চালককে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গির মাধ্যমে উত্যক্ত করে আসছেন। শোভা রাণী বিষয়টিকে ঘৃণার চোখে দেখে প্রথম থেকেই তার কড়া প্রতিবাদ করে আসছিলেন। এক পর্যায়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালেও ময়নুল তাকে দেখে অনুরুপ অঙ্গ-ভঙ্গি করেন। কর্মকর্তা শোভা যথারীতি এর প্রতিবাদ করেন। পরের দিন ২৭ মার্চ রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে শোভার স্বামী উপজেলা অফিসার কোয়ার্টারে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে উপজেলা নির্বাচন অফিসের সামনে পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা ময়নুল ও তার আরেক সহযোগী স,ম আঃ ওহাবের নেতৃত্বে আরো ৩/৪ জন অজ্ঞাত পরিচয় যুবক তার পথরোধ করে আকস্মিক মারপিট ও গালিগালাজ করতে থাকেন। বাবলু তার প্রতিবাদ করায় তারা চাকু ও লোহার রড দিয়ে তাকে মারতে উদ্যত হয়। এক পর্যায়ে বাবলুর চোখের নিচে চাকু বসে যায়। একই সময় লোহার রডে তার নাকের হাড় ভেঙ্গে গুরুতর আহত হয়। এক পর্যায়ে তারা তার পকেট থেকে ৮৫ হাজার ৬ শ’ টাকা বের করে নেয়। এসময় বাবলুর চিৎকারে স্বাক্ষীসহ অন্যান্যরা এগিয়ে এসে তাদের বাঁধা দিলেও তারা নিবৃত হয়নি। এক পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসলে তারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এসময় তারা তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে অবস্থার আরো অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
এদিকে অভিযুক্ত ময়নুল পাইকগাছা উপজেলা আ’লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ফসিয়ার রহমান মহিলা কলেজের প্রভাষক হওয়ায় এ ঘটনায় মামলা না করতে বিভিন্ন মহল থেকে সেই প্রথম থেকেই শোভা দম্পতিকে কখনো চাপ আবার কখনো অনুরোধ করা হচ্ছিল। মহল বিশেষ এনিয়ে স্থানীয় ভাবে মিমাংসারও চেষ্টা করা হয়। তবে সর্বশেষ বিষয়টির কোন সুরাহা না হওয়ায় বাবলু ঘোষ খানিকটা সুস্থ্য হয়ে গত ৮ এপ্রিল রবিবার পাইকগাছা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দঃবিঃ ৩৪১,৩২৩,৩২৪,৩২৬,৩০৭,৩৭৯ ও ৫০৯ ধারায় ময়নুলকে প্রধান করে একটি মামলা করেছেন।
সর্বশেষ এ ঘটনায় উপজেলার সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী মহল থেকে শুরু করে রাজনৈতিকসহ সর্বস্তরে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। তারা এর সুষ্ঠু বিচার চান।
এব্যাপারে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শোভা রায়ের নিকট জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন,তিনি পাইকগাছা উপজেলায় যোগদানের পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানমালায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এসময় অনেক অনুষ্ঠানে অভিযুক্ত ময়নুল ইসলামও সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করতেন। যার এক পর্যায়ে বিভিন্ন সময় ময়নুল নানা অঙ্গ-ভঙ্গির মাধ্যমে তাকে উত্যক্ত করতে থাকেন। সর্বশেষ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠামালা চলাকালে তিনি তার উদ্দেশ্যে অনুরুপ উত্যক্ত করলে তার কড়া প্রতিবাদ করেন তিনি। ২৭ মার্চ তার স্বামীর উপর অতর্কিত হামলাটি তারই বহিঃপ্রকাশ।
এদিকে শিক্ষা কর্মকর্তা শোভা রায়ের স্বামীর উপর হামলার ঘটনায় ঐদিনই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস কক্ষ ও পরে আ’লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডঃ সোহরাব আলী সানার মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষকে ডেকে একটি সমন্বয় প্রচেষ্টা করা হয়। তবে ক্ষতিগ্রস্থদের এতে মনোঃপুত না হওয়ায় তারা তা মেনে নেয়নি।
খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here