পাইকগাছায় পান চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা

0
683

খবর৭১:শেখ মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা)ঃআবহাওয়ার প্রতিকূল পরিবেশে বরজে পান না টিকলেও দাম ভাল পাওয়ায় পাইকগাছায় এবার পানের আবাদ বেড়েছে। তুলনা মূলক পানের আবাদে খরচ বেশী হলেও অধিক মুনাফা লাভের আশায় উপজেলার অধিকাংশ চাষী চাষের শ্রেণী পরিবর্তন করে এখন ঝুঁকছেন পান চাষে । ছোট-বড় মিলিয়ে উপজেলায় পানের আবাদ হয়েছে ১৮৫ হেক্টর জমিতে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, পাইকগাছা উপজেলায় এবছর প্রায় ১৮৫ হেক্টর জমিতে পানের বরজ হয়েছে। যার মধ্যে রাড়–লী ইউনিয়নে সর্বোচ্চ ৯০ হেক্টর জমিতে,হরিঢালীতে ৫০ হেক্টর,কপিলমুনিতে ৪২ হেক্টর ও গদাইপুর ইউনিয়নে ৩ হেক্টর জমিতে। কৃষক ও কৃষি অফিস জানায়,লবণ পানি অধ্যুষিত জনপদের এ এলাকা পান চাষের জন্য উপযোগী ও দেশের বিভিন্ন পানের বাজারে এখানকার পানের চাহিদা বেশী হওয়ায় তারা পান চাষে ঝুঁকছেন। অনেকে আবার অন্য ফসলের শ্রেণী পরিবর্তন করে এগিয়ে এসেছেন পানের আবাদে।
এলাকাবাসী জানায়,প্রথমত শুধুমাত্র বারুই সম্প্রদায় বংশ পরম্পরায় পানের আবাদ ও পরে বরজের শ্রমিকরা অন্যের জমি ইজারা নিয়ে পান চাষ করলেও বর্তমানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ যুক্ত হচ্ছেন পানের আবাদে। ানা ব্যবসায়ীসহ সংশ্লীষ্টরা জানায়,অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে এবছর পানের দাম রেকর্ড পরিমাণ হওয়ায় মূলত কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে ব্যাপকভাবে।
উপজেলার কপিলমুনি জাফর আউলিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ মুফতি মাওঃ বোরহান উদ্দীন বলেন,চাকুরী থেকে অবসরের পর থেকে তিনি পান চাষে জড়িয়ে পড়েছেন। প্রথমত লাভ না হলেও বর্তমানে ভাল আছেন। ইউনিয়নের কাশিম নগর গ্রামের শহিদুল শেখ বলেন,গত প্রায় ৫ বছর পান চাষে মূলত তার ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। প্রায় দেড় বিঘা জমিতে পরিকল্পিত উপায়ে পান চাষ করে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরেছে তার। ভাল মানের বাড়ির পাশাপাশি এখন তিনি পানের টাকায় ছোট একটি গরুর ফার্মও করেছেন। রাড়–লী ইউনিয়নের কাটিপাড়া গ্রামের লক্ষণ দাশ জানান,তিনি প্রায় ১০ বছর যাবৎ পান চাষ করছেন। বর্তমানে ২ বিঘা জমিতে পানের বরজ রয়েছে তার। পান চাষের অর্থে সংসারের যাবতীয় খরচ সহ ৪টি সন্তানের লেখাপড়া করাচ্ছেন তিনি। তার বড় মেয়ে অনার্স,মেঝ মেয়ে এইচএসসি,সেঝো মেয়ে দশম শ্রেণি ও ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া-লেখা করছে। সবার সব প্রকার খরচ যুগিয়েও তিনি বাড়তি সঞ্চয় করছেন নিয়মিত। তবে বাড়ির সকলেই পানের আবাদে তাকে সহযোগিতা করেন। বিগত বছর যে পানের পোন (৮০টি) ৫০ টাকা দরে বিক্রি হত এ বছর তা বিক্রি হয়েছে ২শ’ থেকে ২৫০ টাকা কোন কোন দিন ৩শ’ টাকা পর্যন্ত।
এদিকে এলাকার পানের উৎপাদনকে ঘিরে উপজেলার বাণিজ্যিক কেন্দ্র কপিলমুনতে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ খুলনার অন্যতম প্রধান পানের পাইকারী মোকাম। সপ্তাহের বৃহস্পতি ও রবি বার হাটকে কেন্দ্র করে আগের দিন সন্ধ্যা থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত বসে পানের হাট। এলাকার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারী পান ব্যবসায়ীরা উপস্থিত হন এ হাটে। বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা হাটবার ছাড়াও গাড়ি নিয়ে পান কিনতে ঘুরে বেড়ান জনপদের বিভিন্ন এলাকায়।
কৃষকরা জানায়,এ বছর শীত মৌসুমে বরজ থেকে বিপুল পরিমাণ পান ঝরে পড়ায় পানের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। তাই জমির হারি থেকে শুরু করে সব খরচ বাদে বিঘা প্রতি লাভের পরিমাণ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান,পরিকল্পিত উপায়ে আবাদ ও মাটির গুণে এলাকার পানের মান ভাল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন পানের মোকামে এখানকার পানের চাহিদা ও দাম বেশী। তিনি আরো বলেন,কাঠা ১৮০ পোন পান উৎপাদন হবে যার বাজার দাম প্রায় ১৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়। এক সময় সৌখিন ও সামান্য পরিমাণ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পান চাষ হলেও এখন প্রায় ১৮৫ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হচ্ছে। অতীতে পানের আবাদে লক্ষমাত্রা না থাকলেও এখন থেকে উৎপাদন ও আয়ের উপর লক্ষমাত্রা নির্দ্ধারণ হবে।

খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here