পাইকগাছার ২০টি গ্রামের পানীয় জলের উৎস্য-নাবা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রজেক্টের পুকুরটি মাছ চাষে ইজারা দিচ্ছে জেলা পরিষদ

0
222

শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা):
লোনা পানি অধ্যুষিত পাইকগাছার অন্তত ২০ টি গ্রামের সাধারণ মানুষের সূপেয় পানির একমাত্র আাঁধার কপিলমুনির নাবা সরকারি পুকুরটি মৎস্য চাষের নিমিত্তে বিক্রির জন্য ইজারা দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে খুলনা জেলা পরিষদ। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ভূক্ত পুকুরটির ইজারা বিজ্ঞপ্তিতে পানীয় জলের সংকটের আশংকায় রীতিমত আতংকগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন নাবাসহ দু’ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। বিশুদ্ধ পানীয় জলের নিরপত্তায় পুকুরটির ইজারা বন্ধে তারা ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
উপজেলার অধিকাংশ এলাকার নলকূপ সমূহের পানি লবনাক্ত ও আর্সেনিকযুক্ত হওয়ায় জনপদের মানুষ বিশুদ্ধ পানির যোগান মেটাতে বিকল্প ব্যবস্থায় পানি সংগ্রহ করে থাকেন। তম্মধ্যে এলাকার বিভিন্ন সরকারি ও বে-সরকারি পুকুরে স্থাপিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রজেক্ট অন্যতম। উপজেলার কপিলমুনির ও লতা ইউনিয়নের অন্তত ২০ টি গ্রামের সাধারণ মানুষ দীর্ঘ দিন যাবৎ নাবার সরকারি পুকুরে স্থাপিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রজেক্ট থেকে পানির যোগান মিটিয়ে থাকেন। এলক্ষে তারা পুকুরটির পানির দূষণরোধে স্ব উদ্যোগে এর চারপাশে বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন। এর আগে স্থানীয় কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদ কর্মসৃজন কর্মসূচী জনবল ও এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে যৌথভাবে পুকুরটি সংষ্কার করেছে।
কপিলমুনি ইউপির স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মিন্টু জানান,লোনা পানির চিংড়ি অধ্যুষিত পাইকগাছার অধিকাংশ এলাকার নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক,আয়রন ও লবণ বিদ্যমান। সূপেয় পানির যোগান মেটাতে জনপদের সাধারণ মানুষ দীর্ঘ দিন যাবৎ তাই বিকল্প পদ্ধতিতে পানি সংগ্রহ করে থাকেন। নাবাসহ কপিলমুনি ও লতা ইউনিয়নের হাউলি,প্রতাপকাটি,কাজীমুছা,শামুকপোতা,গদারডাঙ্গা,পুটিমারী,হালদার চক,হানিরাবাদ,তেঁতুল তলা,শঙ্কর দানা,গঙ্গার কোনা,ধোলা,ভৈরব ঘাটা,গুচ্ছ গ্রামসহ জনপদের অন্তত ২০ টি গ্রামের সাধারণ মানুষ ও বিস্তিীর্ণ অঞ্চলের মৎস্য ঘেরের খাবার পানির যোগান মেটাতে নাবার সরকারি পুকুরের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রজেক্টটি ব্যবহার করা হয়। তবে জেলা পরিষদের পক্ষে সর্বশেষ উপজেলার একমাত্র নাবা পুকুরটির ইজারা দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেয়ায় এলাকাবাসীর পাশাপাশি তিনি নিজেও হতাশ।
প্রসঙ্গত,খুলনা জেলা পরিষদ গত ২৫ মার্চ অন্যান্য পুকুরের সাথে নাবা সরকারি পুকুরটি ১৪২৭ সালের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদে বিক্রির জন্য ২৫ হাজার ৫ শ’ টাকা সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ করে পুকুর ইজারার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন। যার স্মারক নং জেপখু/আট-১/২০১৮/১০৩(১৫০)। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলিম উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
এব্যাপারে কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কওছার আলী জোয়াদ্দার জানান,নাবা সরকারি পুকুরটির ইজারা বিজ্ঞপ্তির কথা জানতে পেরে তিনি এলাকাবাসীর স্বার্থে সদস্যদের সাথে নিয়ে তিনি জেলা পরিষদের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। তবে এখন সেটা বন্ধ সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
এব্যারে নাবা গ্রামের মৃত ফণী ভূষণ মন্ডলের ছেলে কার্ত্তিক মন্ডল,মৃত লক্ষী কান্ত সরদারের ছেলে বিশ্বনাথ সরদার ও মৃত অনীল শিকারীর ছেলে রবিন শিকারী জানান,এর আগে আর্সেনিক পরীক্ষায় তাদের এলাকার অধিকাংশ নলকূপ সমূহে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক,আয়রণ ও লবণাক্ত ধরা পড়ায় সেই থেকে তারা নলকূপের পানি বাদ দিয়ে বৃষ্টি,পুকুরসহ বিভিন্ন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রজেক্টের পানি সংগ্রহ করে পনীয় জল হিসেবে ব্যবহার করছেন। তবে তাদের এলাকাসহ লতা ও কপিলমুনি ইউনিয়নের অন্তত ২০ টি গ্রামের সাধারণ মানুষরা সকাল থেকে মধ্য রাত অবধি প্রকল্পটি থেকে নিয়মিত পানি সংগ্রহ করে সূপেয় পানির জোগান মেটান। এসময় তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন,বেশ কিছু দিন হল প্রকল্পের টিউব অয়েলটি বিকল হয়ে পড়ায় তা সংষ্কার বা নতুন করে ক্রয়ের সামর্থ নেই তাদের। সেখানে টেন্ডার কিনে কিভাবে তারা পুকুরটি প্রকল্পের জন্য রক্ষা করবেন? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে।

খবর ৭১/ এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here