পদ্মায় রেল: ব্যয় বাড়ল সোয়া চার হাজার কোটি টাকা

0
684

খবর ৭১ঃ বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু প্রকল্পে রেলসংযোগের জন্য ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক। প্রথম সংশোধিত এই প্রস্তাবে মূল অনুমোদিত ব্যয় অপেক্ষা চার হাজার ২৫৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বেড়েছে।

মঙ্গলবার একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। ‘পদ্মা সেতু রেলসংযোগ (১ম সংশোধিত) প্রকল্প’সহ ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয় আজকের বৈঠকে।

পরে সাংবাদিকদের প্রকল্পগুলো সম্পর্কে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু রেলসংযোগ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০১৬ থেকে জুন ২০২৪ সালের মধ্যে বস্তাবায়িত হবে। আমাদের ঋণ পেতে দেরি হওয়ায় দুই বছর দেরি হয়েছে। প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবে মূল অনুমোদিত ব্যয় অপেক্ষা চার হাজার ২৫৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বেড়েছে।’

প্রকল্পের ব্যয় বাড়ার কারণ হিসেবে জানানো হয়, প্রকল্পে দেশি অর্থায়ন বেড়ে যাওয়া, প্রকল্প সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়া, জমি অধিগ্রহণ বেড়ে যাওয়া, সুপারভিশন পরামর্শক সেবা বৃদ্ধি, নির্মাণ কাজের ব্যয় বৃদ্ধি, প্রকল্প বাস্তবায়ন ইউনিটের জন্য অন্যান্য ইনপুরেটর ব্যয় বৃদ্ধির জন্য এই ব্যয় বেড়েছে।

প্রকল্প সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা চায়না সরকারের জি টু জি ঋণ। এখানে বছরে দুই শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে বলে জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী। তিনি বলেন, এটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে বাস্তবায়িত করবে।

প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার মধ্যে সরকারি তহবিল (জিওবি) ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

প্রকল্পের পটভূমি সম্পর্কে জানানো হয়, বাংলাদেশ সরকার ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তাবয়ন করছে। ইতোমধ্যে সেতু নির্মাণের অগ্রগতি দৃশ্যমান হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৮ এ সমাপ্ত হওয়ার জন্য নির্ধারিত। সেতুটির প্রধান উদ্দেশ্য দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী শহর ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতকরণ। ডাবল ডেক বিশিষ্ট এই উপরের ডেকে চার লেন সড়কপথ এবং নিচের ডেকে ব্রড গেজ সিঙ্গেল রেলওয়ে ট্রাকের সংস্থান রাখা হয়েছে।এতে করে ঢাকা থেকে যশোর,খুলনা, বেনাপোল ও মংলা পর্যন্ত সরাসরি রেলওয়ে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি বিদ্যমান ঢাকা স্টেশন থেকে শুরু হয়ে গেন্ডারিয়া- মাওয়া-পদ্মা সেতু (নির্মাণাধীন) -ভাঙ্গা জংশন পর্যন্ত সংযুক্ত করবে। এবং ভাঙ্গা জংশন হতে বিদ্যমান কাশিয়ানী জংশন স্টেশন হয়ে পদ্মবিলা জংশন হয়ে বিদ্যমান রুপদিয়া এবং সিঙ্গিয়া স্টেশনকে সংযুক্ত করবে। ঢাকা-গেন্ডারিয়া সেকশনে তিন কিলোমিটার ডাবল লাইনসহ প্রকল্পের আওতায় মোট ১৭২ কিলোমিটার নতুন ব্রডগেজ মেইন লাইন নির্মাণ করা হবে। নতুন এ রেলপথটি দূরত্ব কমাবে ঢাকা-যশোর, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-দর্শনার মধ্যে। নতুন এ রেলপথটি ভবিষ্যতে ভারতের কলকাতা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং চীন-মায়ানমার রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এতে বাংলাদেশ –চীন- মায়ানমার রেলওয়ে করিডোর গঠন করবে।

প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে নতুন এলাকা মুন্সীগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলার মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন হবে। ভবিষ্যতে এ রুটে দ্বিতীয় লাইন নির্মাণ এবং বরিশাল ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরকে এই রুটের সাথে সংযুক্ত করা হবে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঠিকাদার চীনের চায়না রেলওয়ে গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাণিজ্যিক চুক্তি করে রেল মন্ত্রণালয়। দুই ধাপে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে।

২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদিত ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এতে চীনের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এরইমধ্যে জানিয়েছেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী উদ্বোধনের দিন থেকেই পদ্মা সেতুতে রেল চলবে।

আজ একনেকে অনুমোদিত মোট ১৬টি প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৯৬ হাজার ২৩৪ কোটি ৭৭ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫২ হাজার ৬৮৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪৩ হাজার ২২১ কোটি ১৭ লাখ এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৩২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, রুপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প, কন্সট্রাকশন অব নিউ ১৩২/৩৩ কেভি অ্যান্ড ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন আন্ডার ডিপিডিসি প্রকল্প, ১৪টি চিনিকলে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন প্রকল্প, যশোরে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, কক্সবাজার, পাবনা ও আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল প্রকল্প, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর উন্নয়ন প্রকল্প, তথ্য কমিশন ভবন নির্মাণ প্রকল্প, বাংলাদেশ বেতার, সিলেট কেন্দ্র আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল সম্প্রচার যন্ত্রপাতি স্থাপন প্রকল্প, সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি লিংক রোড নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকার তেজগাঁওয়ে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প, আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নদীবন্দর স্থাপন প্রকল্প, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষা ও বালু নদীর তীর ভূমিতে, পিলার স্থাপন, তীর রক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং খাল উন্নয়ন প্রকল্প, পাঁচটি র‌্যাব ফোর্সেস ট্রেনিং স্কুল কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্প, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্প।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here