রাকিব হাসান পটুয়াখালী প্রতিনিধি : দীর্ঘ নয় বছর পর বাবা-মায়ের বুকে ফিরলো বুদ্ধি প্রতিবন্ধী লাকী। পহেলা মার্চ ২০১৮ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সাভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) পটুয়াখালী ইউনিটের সহযোগিতায় নয় বছর পিতৃ স্নেহ, মায়া-মমতায় আগলে রাখা লাকিকে তার বাবার হাতে তুলে দেন আব্দুস সালাম। শুধু তাই নয়, লাকির অনাগত ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় রেখে পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন ব্লাস্ট, পটুয়াখালী ইউনিটে।
লাকীর বাবা সোলেমান মাঝি সাগরকন্যাকে জানান, তার ১ ছেলে ও ২ মেয়ে। ছেলে রুহুল আমিনের বয়স তখন ১৫ বছর এবং ছোট মেয়ে সোনিয়ার বয়স ৩ বছর। আট বছরের বড় মেয়ে লাকি বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। বড়ই অবুঝ। সবকিছুই দেরিতে বোঝে। অনেক কিছু বোঝেই না। নিজের মনে হাসে, নিজের মনে কাঁদে।
ঘরে অসুস্থ স্ত্রী। ২০০৯ সালের চৈত্র মাসের ভরদুপুরে একমাত্র ছেলে রুহুল আমিন মাঠের কাজ সেরে ঘরে ফিরেছেন অন্যান্য দিনের মতো। লক্ষ্য করলো, তার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বোন লাকি কোথাও নেই। পুকুর পাড়, পাশের বাড়ী কোথাও নেই। কেউ জানে না লাকির খবর। কেউ দেখেনি তাকে। যেখানে খবর পান ছুটে যান সেখানে। সবই উড়ো খবর, বিফল হয়ে ফিরে আসেন। মেয়েকে পাওয়া হয় না। মায়ের কান্না থামে না। ঘরে কোন উৎসব হয়না।
এদিকে, ওইদিন শেষ বিকেলে পটুয়াখালী সরকারী মহিলা কলেজের হোস্টেল সুপার আব্দুস সালাম লক্ষ্য করলেন, ছাত্রী হেস্টেলের সামনে ৮-৯ বছরের একটি মেয়ে ভারসাম্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করছে। মেয়েটি নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারছে না। কোথা থেকে এসেছে, কিভাবে এসেছে- কিছুই বলতে পারছে না। শুধুই ফ্যাল ফ্যাল করেই তাকিয়ে থাকে।
পিতৃ স্নেহে অসহায় মেয়েটিকে তিনি আশ্রয় দেন নিজ বাসায়। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত হতে শুরু করে লাকি। খুঁজতে থাকেন লাকীর পরিবার। কোথাও কোন হারানো বিজ্ঞপ্তি আছে কিনা জানার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই বরিশাল বিএম কলেজে বদলীর আদেশ পান। নতুন কর্মস্থলে পরিবারের সংগে থাকে লাকি। কিন্তু লাকির পরিচয় জানার হাল ছাড়েননি।
স্ত্রী, ছোট দুই ছেলে-মেয়ে ও তার নিরাপত্তা আর ভালবাসার ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠে লাকী। ধীরে ধীরে মনে পড়তে থাকে তার শৈশবের কথা। মনে পড়ে নিজের শিকড়ের কথা। হঠাৎ করে একদিন লাকি বলতে পারে তার বাবার কথা-বাবার নাম সোলেমান মাঝি। শুধু এটুকুই। এর কিছুদিন পর মায়ের কথা।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে লাকি বলতে পারে, তার গ্রামের নাম-পাজাখালী মাঝি বাড়ী। আশ্রয়দাতা আব্দুস সালাম যোগাযোগ করেন বেসরকারী আইনী সহায়তাদানকারী সংস্থা বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সাভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) পটুয়াখালী ইউনিটে। তারা লাকির শেকড়ের সন্ধানে নেমে পেয়ে যান লাকির বাবা-মাকে।
পহেলা মার্চ ২০১৮ বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সাভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) পটুয়াখালী ইউনিটের সহযোগিতায় জমা দিয়েছেন নয় বছরের পিতৃ স্নেহ, মায়া-মমতা আর লাকিকে আগলে রাখার অধিকার। সাথে করে নিয়ে গেলেন শুধু- ঝাঁপসা হয়ে আসা দু’চোখ। অবুঝ হলেও বাবা সোলেমান মাঝিকে এতদিন পড়ে কাছে পেয়ে বুকে ঝাপিয়ে পড়ে লাকী। সৃস্টি হয় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের। আর হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে কাছে পেয়ে খুশী মা সূর্য ভানু ও তার গোটা পরিবার।
খবর৭১/জি: