নয়াপল্টনে তরিকুল ইসলামকে আজ বিএনপির শেষ শ্রদ্ধা

0
252

খবর৭১ঃ বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের মরদেহ আজ সোমবার নেয়া হবে চিরপরিচিত নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখানে তাকে দলের পক্ষ থেকে  শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে।

সকাল ১০টায় নয়াপল্টনে তরিকুল ইসলামের প্রথম জানাজা হবে।

দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোববার বিকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলে রেখে গেছেন।

বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান  বলেন, আজ সকাল ১০টায় তরিকুল ইসলামের মরদেহ নেয়া হবে তার চিরপরিচিত নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখানে দলের পক্ষ থেকে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে। সেখানে তার প্রথম জানাজাও অনুষ্ঠিত হবে।

বেলা সোয়া ১১টায় তার মরদেহ নেয়া হবে জাতীয় সংসদ ভবনে। দক্ষিণ প্লাজায় হবে দ্বিতীয় জানাজা।

পরে মরদেহ হেলিকপ্টারে নেয়া হবে জন্মস্থান যশোরে। যশোর ঈদগা মাঠে তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

এর পর পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

এর আগে রোববার সন্ধ্যা ৭টায় তরিকুলের মরদেহ হাসপাতাল থেকে তার শান্তিনগরের বাসায় নেয়া হয়।

সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশের। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও আত্মীয়স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা একনজর দেখতে ছুটে আসেন। এরপর রাতে তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়।

যশোর সদর থেকে চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য তরিকুল ইসলাম চার-দলীয় জোট সরকারের তথ্য এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে তিনি প্রথমে সমাজকল্যাণ এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আসার আগে তিনি ভাইস চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। যশোর পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন তরিকুল ইসলাম।

তার মৃত্যুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, এলডিপি চেয়ারম্যান অলি আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মো. ইসহাক ও মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজের একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম শোক জানিয়েছেন।

এ ছাড়া শোক জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।

তরিকুলের মৃত্যুর খবরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। হাসপাতালের সামনে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। খবর পেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ছুটে যান।

সেখানে তিনি প্রয়াত নেতার স্ত্রী নার্গিস ইসলাম, ছেলে সুমিত ও অমিতের সঙ্গে কথা বলেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, আমিনুল হক, শায়রুল কবির খানও হাসপাতালে ছিলেন। মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছি না ভাই নেই।

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী দর্শনের আপাদমস্তক এক নেতা।’

আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘তরিকুল ভাই আমাদের নেতা ছিলেন। ৫০ বছর একসঙ্গে আমরা ছিলাম। মজলুম এ জননেতা আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার প্রথম ছিল রাজনীতি, শেষও রাজনীতি। এ রাজনীতি ছিল দেশের মানুষের জন্য, দেশের জন্য। তরিকুল ইসলামই আমাদের আদর্শ।’

তরিকুল ইসলামের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোরে। বাবা আবদুল আজিজ ব্যবসায়ী ছিলেন। যশোর জিলা স্কুল থেকে ১৯৬১ সালে তিনি প্রবেশিকা (ম্যাট্রিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে আইএ এবং ১৯৬৮-তে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

কলেজের শহীদ মিনার জরাজীর্ণ হওয়ায় ১৯৬২ সালে সহপাঠীদের নিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে পাকিস্তান সামরিক সরকারের রোষানলে পড়ে গ্রেফতার হন তিনি। কারাগারে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে তার পরিচয়। সেই সূত্রে তিনি বাম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।

১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের জন্য রাজবন্দি হিসেবে যশোর ও রাজশাহীতে ৯ মাস কারাভোগ করেন। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ায় গ্রেফতার হন।

১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন তরিকুল। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন। ন্যাপ থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) হয়ে পরে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৭৬ সদস্যের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য তরিকুল ইসলাম।

সেই সঙ্গে বিএনপির যশোর জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। ১৯৮০ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

পরে পর্যায়ক্রমে দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ পান। আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত তরিকুল ইসলাম দলের বিভিন্ন সময়ের দুর্দিনে নেতৃত্বে ও পাশে ছিলেন বলে তৃণমূলে নেতাকর্মীদের কাছে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয়।

যশোরের উন্নয়নে তরিকুল ইসলামের অবদান অপরিসীম। যশোর মেডিকেল কলেজ, যশোর কারিগরি প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ও করোনারি কেয়ার ইউনিট, বিভাগীয় কাস্টমস অফিস, বেনাপোল স্থলবন্দর, যশোর মডেল পৌরসভার উন্নয়নে তিনি অবদান রেখেছেন।

এ ছাড়া তরিকুল ইসলাম যশোর সরকারি সিটি কলেজ পরিচালনা পরিষদের নির্বাহী সদস্য, যশোর ইনস্টিটিউটের সহকারী সম্পাদক, যশোরের সর্ববৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘জাগরণী চক্র’র সভাপতি, কিংশুক সংগীত শিক্ষা কেন্দ্রের প্রধান উপদেষ্টা ও যশোর ক্লাবের নির্বাহী সদস্য ছিলেন। যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে আধুনিকীকরণে তরিকুল ইসলামের বিশেষ অবদান রয়েছে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here