নড়াইল সদর হাসপাতালের রোগীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত, চিকিৎসকদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে কমিশন বাণিজ্যে অভিযোগ!

0
293

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
নড়াইল সদর হাসপাতাল রোগীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত, চিকিৎসকদের ডায়াগনস্টিক কমিশন বাণিজ্যে অভিযোগ! সম্প্রতি হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা গেছে, দ্বিতীয় তলার বারান্দায় তিনদিন ধরে প্রসব বেদনা নিয়ে কাতরাচ্ছেন মসাঘুনি গ্রামের কুলসুম (২২)। এ কয়দিনে চিকিৎসক এসেছেন মাত্র একবার। নার্স বলেছেন চিকিৎসক নেই। সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। সদরের ভদ্রবিলা গ্রামের এক রোগীর স্বজন আশরাফুল আলম অভিযোগ করেন, তার রোগী দুদিন ধরে মেঝেতে পাটি বিছিয়ে পড়ে আছে। খাবার পর্যন্ত দেয়া হয়নি।
অনেক চিকিৎসকের বেসরকারি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে কমিশন বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ভদ্রবিলা গ্রামের রোগী কুলসুম বেগম (৬০) জানান, এক চিকিৎসক তাকে বাইরে থেকে পরীক্ষা করিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন। সদরের হাড়িগাড়া গ্রামের আবুল কালাম অভিযোগ করেন, তার স্ত্রীর কিছু পরীক্ষা বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করিয়ে আনলে চিকিৎসক তাকে নির্দিষ্ট একটি প্যাথলজি সেন্টার থেকে আবার পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলেন।
এক দশকেরও বেশি সময় আগে নড়াইল সদর হাসপাতালকে ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। অথচ এখনো আগের জনবল ঘাটতিই পূরণ হয়নি। জেলার প্রায় নয় লাখ মানুষের জন্য একমাত্র আধুনিক হাসপাতালটিতে জনবল সংকটে চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ছোটখাটো সমস্যার কারণেও রোগীদের পার্শ্ববর্তী যশোর, খুলনা অথবা রাজধানীতে রেফার করা হচ্ছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নড়াইল সদর হাসপাতালটি ২০০৭ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেয়া হয়। আগে থেকেই হাসপাতালে জনবল সংকট ছিল। এর মধ্যে শয্যা বাড়ালেও জনবল বাড়ানো হয়নি। হাসপাতালটিতে বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসক থাকার কথা অন্তত ৩৯ জন, বর্তমানে আছেন মাত্র ১৫ জন। মেডিকেল অফিসারের ১৫টি পদের মধ্যে আছেন ছয়জন, কনসালট্যান্ট ১৭ জনের বিপরীতে আছেন ছয়জন, অ্যানেস্থেসিয়ার দুটি পদই শূন্য। লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন অ্যানেস্থেসিস্টকে ডেপুটেশনে এনে জরুরি কাজ চালানো হচ্ছে। এছাড়া টেকনিশিয়ান অ্যাসিসট্যান্টসহ চতুর্থ শ্রেণীর অন্তত ২০৮ জন লোকবল থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৯২ জন। অথচ গত মাসেও দিনে গড়ে ১৫০ জন রোগী ভর্তি ছিল। বহির্বিভাগে প্রায় ৩০০ জন ও ইমারজেন্সিতে প্রায় ১০০ রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরম জনবল সংকটের মধ্যেও অনেক চিকিৎসক অনিয়মিত। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সপ্তাহে মাত্র দুদিন রোগী দেখেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আ ফ ম মশিউর রহমান বাবু নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, এক বছর আগে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ পেলেও ত্রুটির কারণে তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এজন্য রোগীদের বাইরে থেকে এক্স-রে করে আনতে হচ্ছে। আলট্রাসনোগ্রামের কোনো ব্যবস্থা নেই বলেও জানান তিনি। তবে প্যাথলজিতে সব ব্যবস্থাই আছে বলে জানা গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন ৬০ থেকে ১৩০ জন রোগীকে বেড না পেয়ে মেঝেতে থাকতে হয়। তারা হাসপাতালের খাবারও পান না। বেড নিয়ে কর্মচারীদের বাণিজ্য করার অভিযোগও রয়েছে। দুর্গন্ধের কারণে টয়লেট ব্যবহার করা যায় না।
এদিকে প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে এসে বহির্বিভাগে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাসেবা না পেয়েই ফিরে যাওয়া রোগীর সংখ্যা কম নয়। অধিকাংশ চিকিৎসকের চেম্বার বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে। প্যাথলজি বিভাগ বন্ধ হয়ে যায় দুপুর ১২টার পরই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জসিমুদ্দিন হাওলাদার নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, তিনি নতুন এসেছেন। কোনো অনিয়ম থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
তবে শিগগিরই জনবল সংকট সমাধানে আশার কথা শোনাতে পারেননি নড়াইলের সিভিল সার্জন মুন্সি আসাদুজ্জামান দিপু তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here