নড়াইল-মাগুরা প্রায় ৪৩ কিলোমিটার সড়কের রাস্তার চেয়ে গর্ত বেশী, ঘটছে নানা ধরনে দূর্ঘটনা

0
529

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইল-মাগুরা প্রায় ৪৩ কিলোমিটার সড়কের রাস্তার চেয়ে গর্ত বেশী, ঘটছে নানা ধরনে দূর্ঘটনা। নড়াইল থেকে সড়ক পথে মাগুরা যাওয়ার অতি গুরুত্বপূর্ণ নড়াইল-মাগুরা সড়ক। নড়াইল জেলার অভ্যন্তরে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করলেও দীর্ঘ প্রায় ২/৩ বছর ধরে এই সড়কটির বেহাল দশা। পিচ-খোয়া উঠে গেছে অনেক আগে, এর পর তৈরি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে নাকাল অবস্থা হয়। প্রতিদিন এই রাস্তায় হেলেদুলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। ছোটবড় দূর্ঘটনা এই রাস্তায় নিত্যদিনের ব্যাপার, দূর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনগুলো ধীরে চলতে বাধ্য হচ্ছে। এ সড়কে নিত্যদিন যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নড়াইল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল-মাগুরা সড়কটির দৈঘ্য প্রায় ৪৩ কিলোমিটার। এর কিছুটা অংশ নড়াইল সওজের অধীনে। বাকি রাস্তাটুকু মাগুরা সওজ এর আওতায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল-মাগুরা সড়কে কয়েকটি বড় বাজার এবং বাণিজ্য কেন্দ্র থাকায় এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রীবাহি বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যান, ইজিবাইক ও অটোরিকশাসহ নানা ধরনের যানবাহন চলাচল করে। পার্শ্ববর্তী শহর মাগুরা যেতে ৪৩ কিলোমিটার এবং দেশের এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা মিঠাপুর বাজার থাকায় এই রাস্তার ব্যস্ততা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের পাশে কাগজীপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজগীপাড়া দাখিল মাদ্রাসা, হবখালী আদর্শ মহাবিদ্যালয়, সিঙ্গিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ ১০/১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে এই পথ ব্যবহার করেন। হবখালী আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন , প্রতিদিন ২ কিলোমিটার পথ বাসে এসে আমাদের কলেজে আসতে হয় এবং কলেজের বিভিন্ন কাজে আমাকে প্রায়ই নড়াইল শহরে ৮ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। কলেজ থেকে নড়াইল শহরে যেতে ৩০ মিনিটের পথ এই রাস্তায় সময় লাগে প্রায় ৪০-৫০ মিনিটেরও বেশি। এই রাস্তাকে বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ রাস্তা বেল মনে হয়। সড়কের নড়াইল থেকে ঘোড়াখালি মোড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এবং ধোন্দা থেকে ময়েনখোলা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়ক মোটামুটি চলাচলযোগ্য। অন্য সড়কের পিচ ও খোয়া উঠে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। কোথাও পিচ ডেবে গিয়ে রাস্তার ভিতরেই খাদের তৈরি হয়েছে, যানবাহন চলছে হেলেদুলে ঝুঁকি নিয়ে। দূর্ঘটনা এড়াতে যানবাহন চালাতে হয় ধীর গতিতে। এই সড়কের এক কিলোমিটার পথ যেতে অন্তত ১০ মিনিট সময় লাগে।রাস্তা ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দকে ভরপুর। জায়গায় জায়গায় শুধু পিচই নয় খোয়াও উঠে গেছে। শুধু যানবাহন নয়, পথচারীদের চলাফেরায়ও অসুবিধা হচ্ছে। প্রায় একই অবস্থা দেখা গেছে সড়কের কাগজীপাড়া, সুবুদ্ধিডাঙ্গা, পাজারখালী বাজার, ময়েনখোলা, বাগডাঙ্গা ও সিঙ্গিয়া এলাকায়। ময়েনখোলা এলাকার রাস্তার পাশের দোকানদাররা জানান,এই রাস্তায় প্রতিদিন দূর্ঘটনা ঘটে, রাস্তায় ধুলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দোকানের মালামাল। ক্রেতারা দোকানে এসে দাঁড়াতেও পারছে না রাস্তার ধুলার কারণে। আমাদের ছেলে মেয়েরা স্কুলে গেলে বাড়ি না আসা পর্যন্ত চিন্তায় থাকতে হয়, সরকারি এত উন্নয়নের কথা শুনি, পদ্মা সেতু হচ্ছে ৪ বছরে আর আমাদের এই ছোট রাস্তাটি কবে ভালো হবে কে জানে। পাজারখালী বাজারের ব্যবসায়ী বাবু বলেন, রাস্তার কারণে বাইরে থেকে মালামাল আনতে পারছি না, এতে করে আমাদের বাজারই নয় বিভিন্ন বাজারে সময় মত ও সুষ্ঠু ভাড়া দিয়ে আনতে পারছে না তাদের প্রয়োজনীয় মালামাল। এমনকি কাঁচা বাজারেরও মালামাল আনতে পোহাতে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা। এ সড়ক পথে মাল আনতে দ্বিগুণ টাকা লাগে। তাই বিভিন্ন বড় বড় শহর থেকে ট্রলারে মাল আনতে হয়। কিন্তু ট্রলারতো সব সময়ে যায় না। এত খারাপ অবস্থা আশপাশের উপজেলার সড়কে নেই। এলাকার সচেতন মহল বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজের জন্য শহরের বিভিন্ন এলাকায় আসা যাওয়া করতে হয়। কিন্তু রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে, আমরা সময় মত এবং নিরাপদে আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারছি না। অনেক সময় আবার পড়তে হয় সড়ক দূর্ঘটনার কবলে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক মাসে নড়াইল-মাগুরা সড়কে প্রায়ই দেখা মিলছে সড়ক দূর্ঘটনার। কিছু দিন আগে নড়াইল থেকে যাওয়ার পথে ময়েনখোলা নামক স্থানে রাস্তার কারণে এক ইজিবাইকের চাকা খুলে আহত হন একই পরিবারের ৩ সদস্য, যাদের মধ্যে এক মহিলার গলার হাড় ভেঙ্গে যায়। তার কিছুদিন পরই ধোন্দা এলাকায় একটি বাস খাদে পড়ে অনেক যাত্রী আহতের ঘটনা ঘটে। এভাবে বিভিন্ন সময়ে দূর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণও হারাতে হয় অনেকের। এলাকার দাবি অতিদ্রুতই এ রাস্তার সংস্কার করা হোক এবং সকলে যাতে নিরাপদে রাস্তায় যাতায়াত করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হোক। এ বিষয় নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায় বলেন, অন্যান্য জেলার রাস্তার থেকে নড়াইলের রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। বিশেষ করে নড়াইল-ফুলতলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটিও ছিল অনেক খারাপ, কয়েক দিন আগেই অবশ্য এই রাস্তাটি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখির পর রাস্তাটির কাজ করা হয়েছে। এরকম অনেক রাস্তাও এখনো নড়াইলের বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে। সড়ক বিভাগের উচিত নড়াইলের ব্যস্ততম রাস্তাগুলির দিকে নজর রাখা। প্রত্যেকটি ব্যস্ততম রাস্তাতে সবসময় যাতে চলাচলের সুব্যবস্থা থাকে তারপ্রতিও তাদের নজর রাখা উচিত। এতে করে শুধু মানুষের চলাচলের সুবিধা হবেনা বাণিজ্যিক দিক থেকে হবে প্রসার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here