নড়াইল আওয়ামী লীগে কোন্দল,সাংগঠনিক হাবুডুবু খাচ্ছে বিএনপি

0
778

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
আওয়ামী লীগের দুর্গে ফাটল বিএনপিতে দৈন্যদশা নড়াইল-১ (সদর ও কালিয়া) আসন আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিতি পেলেও অভ্যন্তরীণ বিরোধে তাতে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিকে কাজে লাগাতে পারছে না বিএনপি বা অন্য কোনো বিরোধী দল। সাংগঠনিক দৈন্যদশায় হাবুডুবু খাচ্ছে বিএনপি। নড়াইল আওয়ামী লীগের কোন্দল নতুন নয়। নিয়ন্ত্রণহীন এ কোন্দলের কারণেই ২০০১ সালের নির্বাচনে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগ এখন দুটি ধারায় বিভক্ত। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, দলের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস ও কবিরুল হক মুক্তি এমপি। অন্যটির নেতৃত্বে দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, নড়াইল পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাস, জেলার সিনিয়র সহসভাপতি ফজলুর রহমান জিন্নাহ ও সহসভাপতি মোল্যা ইমদাদুল হক। ইতিমধ্যে বর্তমান এমপি কবিরুল হক মুক্তি ও দলের কালিয়া উপজেলা সাবেক সভাপতি মোল্যা ইমদাদুল হক আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইছেন। তাদের মধ্যে বনিবনা নেই। দু’জনেই ব্যস্ত পরস্পরের বিরুদ্ধাচরণে। মোল্যা ইমদাদুল হক জানান, বর্তমান এমপি কবিরুল হক মুক্তি ভোট পান তার বাবা এখলাস বিশ্বাসের কারণে। তবে তার সময়ে এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছে, তা গতানুগতিক। তিনি আওয়ামী লীগকে নিয়ে ভাবেন না। তিনি করেন তার নিজস্ব দল মুক্তি লীগ। তার সময়ে এলাকায় খুন, সন্ত্রাস বেড়েছে। অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এলাকাছাড়া হয়েছে। এলাকার মানুষ তার প্রতি অসন্তুষ্ট। তাই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি। কবিরুল হক মুক্তি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে গ্রুপিং থাকতেই পারে। তবে নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়ে না। আর ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করলেও সব সময় দলের কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি সেসবের বিরোধিতা করে। তারা আওয়ামী লীগের অর্জনকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তার পরও সার্বিক বিচারে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। বর্তমান এমপি মুক্তি জানান, তার বাবা কালিয়া পৌরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনিও দুইবারের পৌর মেয়র। এমপি হওয়ার পর তার সময়েই চাপাইল ঘাটে মধুমতি ব্রিজ ও রঘুনাথপুর ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া নবগঙ্গা নদীর ওপর বারইপাড়া সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। মধুমতি ও নবগঙ্গা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা, ভরাট হওয়া কয়েকটি খাল পুনঃখনন, ৯০ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা ও বেশিরভাগ রাস্তা পাকা করা হয়েছে। নড়াইল-ফুলতলা সড়ক নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। এসব কারণে এ আসনে তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী আছে বলে মনে করছেন না কবিরুল হক মুক্তি। এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আরও রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনে দু’বারের এমপি, নড়াইলের পুত্রবধূ অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. আবদুল মান্নান ও কমান্ডার ওমর আলী। মহিলা যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি জানান, তিনি নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। নারীকে রাষ্ট্র ও সমাজের মূলধারায় না আনলে সামগ্রিক উন্নয়ন অসম্ভব। তিনি এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছেন। সেইসঙ্গে নড়াইলের সার্বিক উন্নয়নেও কাজ করছেন। তাই তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটও এ আসনের মনোনয়ন সমীকরণকে জটিল করে তুলেছে। কারণ জাসদের (আম্বিয়া) কেন্দ্রীয় সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া এ আসনে জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি বেশ আশাবাদী। একই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন কালিয়া উপজেলা জাসদের (ইনু) সভাপতি আকতার হোসেন রাঙ্গা। আবার ওয়ার্কার্স পার্টিরও দৃষ্টি রয়েছে এ আসনে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তিনি এবারও ১৪ দলের মনোনয়ন চাইবেন। দলের পলিটব্যুরোর এ সদস্য জানান, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে তিনি সামান্য ভোটে হেরেছিলেন। এবার জনমত জরিপে তার অবস্থান অনেক ভালো। অন্যদিকে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বলে এ দলের নেতাকর্মীরা নিষ্ফ্ক্রিয়প্রায়। ২০০৯ সালের পর এ জেলায় দলের সম্মেলন হয়নি। দলীয় কর্মসূচিও পালিত হয় না অনেক দিন। সর্বোপরি কোন্দলে জড়িয়ে স্পষ্টত দুটি বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। দলের জেলা সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী হাসান জানিয়েছেন, এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বন্দ্ব-বিরোধ মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় অফিসে বৈঠক হয়। সেখানে দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি হয়। জেলা সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা এ হামলা করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে দলের প্রার্থী বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, খুলনা মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি শাহারুজ্জামান মর্তুজা, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. শফিকুল হায়দার পারভেজ এবং যশোর চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সুজা। এর মধ্যে বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম দলের একটি গ্রুপের বিরোধিতার মুখেও মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে বেশিরভাগ নেতাকর্মী মনে করছেন। দলকে তিনিই সংগঠিত করেছেন- এমন দাবি জানিয়ে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন তিনি। তবে শাহারুজ্জামান মর্তুজা বলেন, বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম দুইবার মনোনয়ন পেয়েও জয়ী হতে পারেননি। তিনি নিজের ইউনিয়নেই হেরেছেন। তার পক্ষে আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়া অসম্ভব। শাহারুজ্জামান মর্তুজা দলের মনোনয়ন পেলে জয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। জেলা জাতীয় পার্টি সভাপতি শরীফ মুনির হোসেন, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিপ্লব বিশ্বাস, জেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি কারি আইয়ুব হোসেন মিনা, জেলা মুজাহিদ কমিটির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান, জেলা ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি হাফেজ খবিরুদ্দিনও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে ১৯৭৩ সালে বর্তমান এমপি কবিরুল হক মুক্তির বাবা এখলাস বিশ্বাস, ১৯৭৯ সালে বিএনপির এমএ বাশার, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির অধ্যক্ষ এমএ সাঈদ, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্রনাথ সাহা, ১৯৯৬ সালে বিএনপির মুনিরুল ইসলাম টিপু, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ধীরেন্দ্রনাথ সাহা, ২০০১ সালে বিএনপির ধীরেন্দ্রনাথ সাহা, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কবিরুল হক মুক্তি, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের কবিরুল হক মুক্তি বিজয়ী হন।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here