নড়াইলে শিশু মৃত্যুরহস্য ধামাচাপা দিতে ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব

0
263

হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল : নড়াইলের কালিয়া উপজেলার খাসিয়াল ইউনিয়নের শুড়িগাতি গ্রামের শিশু শরীফার মৃত্যু রহস্য ধামাচাপা দিতে ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে হত্যাকারিরা। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানার শুড়িগাতি গ্রামের টকুু মোল্যার আট বছরের মেয়ে শরিফা ঢাকায় এক সরকারি কর্মকর্তার বাসায় কাজ করতো। সেখানে তাকে ধর্ষন ও নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। এখন মৃত্যুরহস্য ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা ২০ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নড়াইল সদর হাসপাতালে শরিফার ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। এর আগে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শরিফার মৃত্যু হয়। ওইদিন (সোমবার) রাত ২টার দিকে শরিফার লাশ নড়াগাতির শুড়িগাতি গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। শিশু শরিফা ঢাকায় সরকারি এক কর্মকর্তার বাসায় প্রায় ৬ মাস যাবত গৃহকর্মীর কাজ করত। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নড়াগাতির বাঐসোনা বড় মাদরাসা মাঠে শরিফার জানাজা শেষে তাকে বাঐসোনা কবরস্থানে দাফন করা হয়। শরিফার মামা খসরুল ফকির জানান, নড়াইলের নড়াগাতি থানার গাছবাড়িয়া গ্রামের আলী মিয়া গাজীর ছেলে সাজ্জাদ হোসেনের ঢাকার বাসায় গৃহস্থালির কাজ করত তার ভাগ্নি শরিফা। প্রায় ছয় মাস আগে ওই বাসায় কাজ নেয় শরিফা। গত ৩০ মার্চ সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী শরিফার মায়ের মোবাইল ফোনে জানায় শরিফা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ খবর শুনে শরিফার মা নারগিস বেগম গত রোববার বিকেলে ঢাকায় গিয়ে দেখতে পান, তার মেয়েকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। খসরুল ফকির আরো জানান, শরিফার মৃত্যুর পর সরকারি ওই কর্তকর্তা তাকে এবং শরিফার মাকে মোবাইল ফোনে বলেন-‘তোমরা শরিফার মৃত্যু নিয়ে কোনো কিছু করো না। তোমরা যদি চাকরি চাও তাহলে তা দেয়া হবে। অথবা ২০ লাখ টাকা দেয়া হবে।’ খসরুল বলেন, আমার ভাগ্নি শরিফার মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে চাই। আমার ভাগ্নিকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে একাধিকবার শরিফা তার মাকে মোবাইল ফোনে বলেছিলো-মা আমি এখানে (সাজ্জাদ হোসেনের বাসায়) থাকতে পারছি না। আমার সমস্যা হচ্ছে। বাড়ি এসে তোমাকে সমস্যার কথা বলব। এদিকে, শরিফার মৃত্যুর কারণ হিসাবে অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা একেক সময় একেক ধরণের কথা বলেছেন বলে জানান খসরুল ফকির। অভিযুক্ত সাজ্জাদ হোসেন কখনো জানিয়েছেন, শরিফার পাতলা পায়খানা ও জ্বর হয়েছে, কখনো বলেছেন-ক্যান্সার হয়েছে। তবে, শরিফার গোপনস্থান দিয়ে রক্তক্ষরণের দৃশ্য দেখে কেউ সহ্য করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন তার মামা খসরুল ফকির। শরিফার মা নারগিস বেগম বিলাপ করে বলেন, আমি এ ঘটনার প্রকৃত বিচার চাই। সরকারি উধর্তন কর্মকর্তা বলে যেন আমাদের প্রতি অবিচার না হয়। প্রায় দুই বছর আগে ওর (শরিফা) বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। সংসারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম স্বামীকে (ভ্যানচালক) হারিয়ে আমার তিনটি শিশু সন্তান শরিফা, সাগর ও আকাশকে নিয়ে কোনো ভাবে জীবনযাপন করছি। দারিদ্রতার কারণে আমার ছেলে সাগর (সপ্তম শ্রেণি) ও আকাশ (পঞ্চম শ্রেণি) খুলনায় ওদের মামাবাড়ি থেকে পড়ালেখা করছে। নড়াইল সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সজল কুমার বকসি জানান, শরিফা ঢাকায় যেখানে চিকিৎসাধীন ছিল, সেখান থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র আসার পর বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেয়া হবে। এক্ষেত্রে দু’একদিন সময় লাগতে পারে। এ ব্যাপারে নড়াগাতি থানার ওসি বেলায়েত হোসেন জানান, শরিফার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। আর শিশু শরিফার পায়ূপথে কালো জমাটবাঁধা রক্তের দাগ দেখা গেছে। এদিকে, অভিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেনের সাথে সাংবাদিকরা মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

খবর ৭১/ এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here