নড়াইলে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে: ৪০ হাজার তালগাছ ডোঙ্গা হয়ে ভেসেছে!

0
330

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলে বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা কম নয় ।১২ বছরে ৪০ হাজার তালগাছ বর্ষা মৌসুমে চলাচলের বাহনডোঙ্গা হয়ে ভেসেছে।গত কয়েক বছরে সারা দেশের মতো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইলেও বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, সরকারিভাবে বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে যেখানে তালগাছ রোপণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেখানে এ জেলায় প্রতি বছর কাটা পড়ছে গড়ে অন্তত চার-সাড়ে চার হাজার তালগাছ। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে, যার সিংহভাগই ব্যবহার করা হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে চলাচলের বাহন ডোঙ্গা তৈরিতে।
বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয় ২০১৬ সালে। বজ্রপাতে ক্রমবর্ধমান মৃত্যুর কারণেই এমন ঘোষণা দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এ দুর্যোগে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে নেয়া হয় বেশকিছু পদক্ষেপ। এর মধ্যে অন্যতম হলো বেশি করে তালগাছ রোপণ।
গত কয়েক বছরে সারা দেশের মতো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইলেও বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে, সরকারিভাবে বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে যেখানে তালগাছ রোপণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেখানে এ জেলায় প্রতি বছর কাটা পড়ছে গড়ে অন্তত চার-সাড়ে চার হাজার তালগাছ। যার সিংহভাগই ব্যবহার করা হচ্ছে বর্ষা মৌসুমে চলাচলের বাহন ডোঙ্গা তৈরিতে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্ষা এলেই নড়াইলজুড়ে বেড়ে যায় ডোঙ্গার ব্যবহার। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে ঐতিহ্যবাহী জলযানটির চাহিদা। বর্ষা মৌসুমের চার মাসে জেলায় কমপক্ষে আট হাজার নতুন ডোঙ্গা বিক্রি হয়। একটি তালগাছ দিয়ে তৈরি করা যায় সর্বোচ্চ দুটি ডোঙ্গা। আকারের কারণে কোনো কোনো গাছ থেকে একটির বেশি তৈরি করা সম্ভব হয় না। এ হিসেবে প্রতি বর্ষায় গড়ে অন্তত চার হাজার তালগাছ কাটা পড়ে। ফলে গত ১২ বছরে জেলার তিন উপজেলায় তালগাছ কাটা পড়েছে অন্তত ৪০ হাজার।
আল-আমিন শেখ নামে স্থানীয় এক ডোঙ্গা ব্যবসায়ী ও কারিগর নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, নড়াইলের চাচুড়ী, তুলারামপুর ও দীঘলিয়াসহ বিভিন্ন হাটে তালগাছের তৈরি ডোঙ্গা বিক্রি হয়। এর মধ্যে নড়াইল-যশোর সড়কে তুলারামপুরের হাটটি বেশ বড়। এখানে হাট বসে প্রতি শুক্র ও সোমবার। প্রতি হাটে ডোঙ্গা বিক্রি হয় ১৫০টি পর্যন্ত। বর্ষা মৌসুমের আগে ও পরে সাড়ে চার মাসে এ হাটেই ডোঙ্গা বিক্রি হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার।
তুলারামপুর ছাড়াও ডোঙ্গা কেনাবেচা হয় জেলার আরো দু-তিনটি হাটে। এছাড়া অনেক কারিগর বাড়ি থেকেই ডোঙ্গা বিক্রি করেন। ফলে সব মিলিয়ে জেলায় প্রতি বছর ডোঙ্গা তৈরি হয় আট হাজারের মতো।
এছাড়া বহু আগে থেকেই এখানকার মানুষ তালগাছ দিয়ে ঘরের খুঁটি ও আড়াসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে। এ কারণেও প্রচুর তালগাছ কাটা হয়। কিন্তু আশঙ্কার কথা, প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ তালগাছ কাটলেও নতুন করে রোপণের বিষয়ে স্থানীয়দের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। নড়াইলজুড়ে
কথা হয় জেলার গ-ব গ্রামের সপ্ততিপর কৃষক ইমান উদ্দিন শেখের সঙ্গে। তিনি জানান, তার বাড়িতে ছয়-সাত বছর আগেও ৪০টিরও বেশি তালগাছ ছিল। অথচ এখন রয়েছে মাত্র চারটি। সব তালগাছই তিনি ডোঙ্গা তৈরির কারিগরদের কাছে বিক্রি করেছেন। অথচ গত ১০ বছরে তিনি নতুন করে একটি তালগাছও রোপণ করেননি।
এ অবস্থায় জেলায় বজ্রপাতে নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও বিভিন্ন এনজিও সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছরে বজ্রপাতে জেলায় অন্তত ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে লোহাগড়া উপজেলায় বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই কৃষক। বিলে ও ক্ষেতে কাজ করার সময়ই তাদের মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে কথা হলে সিভিল সার্জন মো. আসাদুজ্জামান মুন্সী, নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, ‘তালগাছ বেশ উঁচু হয়। বজ্রপাতও সাধারণত অপেক্ষাকৃত উঁচু বস্তুতে আঘাত হানে। ফলে বেশি করে তালগাছ থাকলে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমে আসবে।’
নড়াইলে পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে কয়েক বছর আগেও জেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে ও কৃষকের জমিতে অসংখ্য তালগাছ ছিল। বর্তমানে কিছু এলাকায় তালগাছের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এ অবস্থায় তালগাছ না কেটে ডোঙ্গা তৈরিসহ অন্য কাজে বিকল্প উপাদান ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। তিনি সরকারিভাবে তালগাছ কাটা বন্ধে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।
এ বিষয়ে কথা হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপপরিচালক চিন্ময় রায় নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান,‘প্রতি বছরই জেলার কৃষকদের বেশি করে তালের চারা রোপণের বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়। এ বছরও কৃষকদের মাঝে নির্ধারিত মূল্যে তালের চারা বিক্রি করা হবে। একই সঙ্গে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বড় তালগাছ না কাটার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’নড়াইল জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, গত বছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় তালের চারা রোপণ করা হয়েছে। এ বছরও বিভিন্ন সড়কের পাশে এ চারা রোপণ করা হবে।#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here