নড়াইলে ফেরিওয়ালা কোটিপতি’র খামার থেকে কৃষিপণ্য রাজধানী ঢাকাসহ পাশের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারে?

0
348

উজ্জ্বল রায় ,নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: এক পোয়া আটা কিনে পাতলা জাউ রান্না করে সবাই মিলে খেয়েছি। শাক-পাতা কুড়িয়ে তেল-লবণ ছাড়াই সেদ্ধ করে খেয়েছি। অনেকের কাছে হাত পেতেছি। কোনো সহায়তা পাইনি। কথাগুলো বলছিলেন জেলার বাসিন্দা শিবুপদ রায়।  সেই ফেরিওয়ালা এখন কোটিপতি। শুধু তাই নয় পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিকবার নির্বাচিত কাউন্সিলরও তিনি।মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় রাজাকার খলিল শেখের সহযোগিতায় পাক সেনারা বাবা কুমুদ রায়কে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে নবগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে, তখন আমার বয়স প্রায় ১২ বছর। অনেক খোঁজ করেও বাবার লাশ পাইনি। সংসারে মা ও দুই বোন। তাদের বাঁচাতে লেখাপড়া ছেড়ে  কলা, বিস্কুট, পাউরুটি বিক্রি করে সংসার চালাতাম। অনেক দিন না খেয়ে কেটেছে। এক পোয়া আটা কিনে পাতলা জাউ রান্না করে সবাই মিলে খেয়েছি। শাক-পাতা কুড়িয়ে তেল-লবণ ছাড়াই সেদ্ধ করে খেয়েছি। অনেকের কাছে হাত পেতেছি। কোনো সহায়তা পাইনি। কথাগুলো বলছিলেন নড়াইলের কালিয়ার বাসিন্দা শিবুপদ রায়।  সেই ফেরিওয়ালা এখন কোটিপতি। শুধু তাই নয় পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিকবার নির্বাচিত কাউন্সিলরও তিনি। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে,সরেজমিনে দেখা গেছে, নড়াইলের কালিয়া শহরের জিরোপয়েন্ট থেকে গোবিন্দনগর গ্রামের ভক্তডাঙ্গা বিলের দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। এখানেই শিবুপদ রায় ২৬৭ একর জমির ওপর গড়ে তুলেছেন মৎস্যসহ সমন্বিত কৃষি খামার। খামারে টমেটো, মিষ্টিকুমড়া, ঢেড়স, পেঁপে, করোলা, লাউসহ বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিশাল ঘেরে চিংড়ি, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ আমন ও বোরো ধানের আবাদ হচ্ছে। এসব কৃষিপণ্য রাজধানী ঢাকাসহ পাশের গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, বাগেরহাট, খুলনা, বরিশালের বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এখানে ২২ জন শ্রমিক নিয়মিত এবং এক থেকে দেড়’শ শ্রমিক খন্ডকালীন কাজ করে থাকেন। এই খামার থেকে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকার কৃষিপণ্যসহ মাছ বিক্রি করা হয়। পণ্য পরিবহন খরচ, শ্রমিক, ইজারা নেয়া জমির মালিকদের টাকা পরিশোধ করে শিবুপদ রায়ের বছরে লাভ থাকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। নড়াইলের শিবুপদ রায় নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান,  কলা, বিস্কুট, পাউরুটি বিক্রি করে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ টাকা আয় হতো। এ টাকা দিয়ে সংসার চালাতাম। একদিন আমার দেখা হয় বড়দিয়া মোকামের (বড়দিয়া নৌ-বন্দর) ভূষিমাল ব্যবসায়ী নিত্যানন্দ সাহার সঙ্গে। তিনি আমার কষ্টের কথা শুনে তার গদিতে (ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে) থাকা-খাওয়াসহ মাসে ৩০০ টাকা বেতনে কাজ দেন। সাত বছর দোকানে কর্মচারীর কাজ করেও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। সবশেষ ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনও পেয়েছি।তিনি নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, বেতনের টাকা জমিয়ে ১৯৭৮ সালের দিকে নড়াইলের কালিয়া পৌর এলাকায় ১৬ হাজার ৬০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ভূষিমালের দোকান দেন। ১৯৯৮ সালে ১০ একর জমি বন্দোবস্ত নিয়ে বাড়ির পাশে চিংড়ি চাষ করেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ঘেরের পাশাপাশি ধানছাটাই মেশিন (রাইচমিল) কেনেন। ২০১৫ সালে ভক্তডাঙ্গা বিলেই সমন্বিত কৃষি খামার গড়ে তোলেন। প্রথমে ২২৬ একরে পরে তা বাড়িয়ে ২৬৭ একর জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন। এ বছর ১০০ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। নড়াইলের ভক্তডাঙ্গার বিল সারা বছরই পানিতে তলিয়ে থাকে। ফসলাদি তেমন একটা হতো না। এ সমস্ত জমির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে ২০ বছর চুক্তিতে তাদের জমি বন্দোবস্ত নেয়া হয়। এ রকম প্রায় ৫০০ কৃষকের জমি বন্দোবস্ত নেয়া হয়। জমির মালিকদের বছরে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয় বলে জানান এ সফল উদ্যোক্তা।নড়াইলের ছোট কালিয়া গ্রামের অশোক কুমার ঘোষ নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, প্রতিদিনই তিন থেকে চার ট্রাক মালামাল এই খামার থেকে বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছে। নড়াইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান,২৬৭ একরের এ বহুমুখী খামারটি নয়নাভিরাম এবং দৃষ্টিনন্দন। জীবনে অনেক স্থানে চাকরি করেছি কিন্তু গোছালো এবং পরিষ্কার রিচ্ছন্ন এমন কৃষি খামার কোথাও চোখে পড়েনি। এটি শুধু অনুকরণীয়ই নয় আমাদের দেশে একটি মডেল হতে পারে।।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here