নড়াইলে পিতা হারা পরিবারের ওপর অমানবিক নির্যাতন ,তালা ভেঙ্গে নিলীমাদের উদ্ধার!

0
260

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি■: নড়াইলে এক এসপির আপন ভাইয়ের ইন্ধনে পিতা হারা একটি হিন্দু পরিবারের উপর অমানবিক নির্যাতন পাক শকুনদের অত্যাচারকে হার মানিয়েছে। সারাদিন মা ও দু’মেয়েকে ঘরে তালা দিয়ে আটকে রেখে গ্রামবাসিকে খবর দিয়ে ঐপরিবারের উঠানে দাড়িয়ে ঘোষণা দেয়, তোমরা যারা হিন্দু আছ তারা সুনিল মালুর জমির গাছ-পালা বাঁশঝাড় কেটে সাফ করে দিবা, আর যারা মুসলমান আছ তারা বাড়ি দখল করবা। আর সুনিলের ছেলে বাড়ি ফিরলে এ লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলবা। প্রয়োজনে মেয়েদের পালাক্রমে ইজ্জত নিবা। সে ঐ বাড়ির উপর দাড়িয়ে বুক ফুলিয়ে আরো ঘোষনা দেয়, আমার এক ভাই এসপি, আর এক ভাই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এর কর্মকর্তা এবং আমি বিআইজিপিতে চাকুরি করি। স্থানীয় পুলিশ-মুলিশ আমি থুড়াই কেয়ার করি, আমি যা করব তাই হবে এ এলাকায়।
এসপি’র ভাই ইস্রাফিলের নেতৃত্বে এক তরফা সালিশের সিদ্ধান্ত চলন্তিকা নামের এনজিও’র কাছে জমা হওয়া ৪৭ লক্ষ টাকার ৭০ ভাগ ৩৪ লক্ষ টাকা ফেরত দেবে সুনীল দাসের পরিবার। চাপে পড়ে সালিশ পরবর্তীতে নড়াগাতি থানার পুলিশের মধ্যস্ততায় সালিশ দাতার নিকট সাড়ে ৬লাখ টাকা জমা দেয় ঐ পরিবার, এর আগে আরো দেড় লাখ টাকা ঐ পরিবার জোর করে আদায় করে নেয় গ্রাহকরা। আগামি ১০ সেপ্টেম্বর সালিশের সিদ্ধান্তের বাকি টাকা না দিতে পারলে আবারও চরম নির্যাতন চালানো হবে ঐ পরিবারে ওপর এমনটি হুকুম রয়েছে সালিশে নেতৃত্বদানকারি এসপি’র ভাই ইস্রাফিলের।
এদিকে মৃত সুনিল দাসের মেয়ে শান্তা দাস জানান, চলন্তিকা যুব সোসাইটির দায় কেন আমাদের উপর চাপানো হচ্ছে। আমার বাবা বেকার ছিল ঐ এনজিওতে চাকুরি নিয়েছিল, বাবা মারা যাওয়ার পর আমি বাবার ফিল্ডে ঐ এনজিওতে চাকুরি নেই। আমরাতো নিয়মিত কিস্তি আদায় করে এনজিওতে জমা করেছি। আমাদের কাছে তো কোন গ্রাহকের টাকা আদায় করে জমা দেই নাই এমন নজির নেই। এখন যত সব চাপ নিরিহ অসহায় বেকার এই যুবতীর ওপর! টাকা মেরে চলে গেছে চলন্তিকা যুব সোসাইটি চেয়ারম্যান ও এমডিরা। এদের দুজনের নামে সকল ব্যাংক হিসাব পরিচালনা হতো। কালিয়ার ইউএনও দ্বারা সীলগালাকৃত কালিয়ার এনজিও’র অফিসে সকল নথিপত্র যাচাই করলে প্রমাণ পাওয়া যাবে দোষি কারা আমরা না এনজিও’র ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে এনজিও’র ৮জন কর্মকর্তাদের নামে মামলা হয়েছে। আমাদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে চাপ দিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আমরা এর সুষ্ঠু সুরাহা চাই।
এ ধরণের তান্ডবলীলা সম্প্রতি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পাটনা গ্রামের এসপি’র ভাই ইস্রাফি মোল্যার নেতৃত্বে একই গ্রামের মৃত সুনিল দাসের পরিবারের উপর ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ধরণের হুমকি-ধামকির ঘটনায় ঐবাড়ির একমাত্র ছেলে মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মেয়ে দু’টি প্রতিনিয়ত সম্ভ্রমহানির আতঙ্কে রয়েছে এবং সুনিলের স্ত্রী ঠিক মতো চাকুরিতে যেতে পারছেন না। তাদের প্রতি প্রতিনিয়ত পাহারা দেয়া হচ্ছে যাতে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে না যায়। এ সকল ঘটনায় নড়াগাতি থানায় একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসি, অত্যাচারিত পরিবার ও পুলিশ সূত্রে উপরোল্লেতি তথ্য জানাযায়।
ঘটনাটি সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জানাযায়, চলন্তিকা নামের এনজিও’র কাছে জমা হওয়া ৪৫ লক্ষ টাকা ৪১ হাজার ৮শত টাকার ৭০ ভাগ ৩১ লক্ষ ৭৯ হাজার ২৬০ টাকা ফেরত দেবে সুনীল দাসের পরিবার সিদ্ধান্ত এসপি’র ভাই ইস্রাফিলের। এদিকে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, সুনিলের পরিবারের নিকট কোন টাকাই গচ্ছিত নেই। জমা রশিদ থেকে শুরু করে মাসিক আদায় সীটে কোথাও সুনিল দাসের নিজের অনুকুলে কোন অর্থ তসরুপের সন্ধান মেলেনি। মৃত সুলিন দাস ও তার মেয়ে শান্তা দাসের আওতায় ১৭৯ জন গ্রাহকের সাধারণ      সঞ্চয়, পিএসপি প্রকল্প, পিএস স্কীম এবং ঋণ কার্যক্রমের আদায়কৃত সমুদয় অর্থ চলন্তিকা কালিয়া কার্যালয়ে জমা হয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষেন করে জানা যায়, চলন্তিকা কালিয়া কার্যালয় – সাধারণ সঞ্চয় স্কীমে গত ২৪ মার্চ ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত ১৭৯ জন সদস্যের মোট সঞ্চয় জমা হয় ৩৩ লক্ষ ৬৭ হাজার ৮শত টাকা জমা হয়। এর মধ্য হতে দুইজন সদস্যকে ৯৯ হাজার টাকা চলন্তিকা পরিশোধ করে এবং সুনিল দাস আরো ৬জন সদস্যকে দেড় লক্ষ টাকা পরিশোধ করে দেয়।
পিএসপি প্রকল্প এর গ্রাহক ৮জন। এদের নামে চলন্তিকা অফিসে জমা রয়েছে ২ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা, যা ৫ বছর পূর্ণ হলে ২০% লভ্যাংশসহ ফেরত দিবে ঐ এনজিও।
পিএস প্রকল্পের আওতায় ১০জন সদস্য রয়েছে। এ স্ক্রীমে এ গ্রাহকদের মোট ১২ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা জমা হয়। এর মধ্য হতে ৫ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা এনজিও থেকে সরাসরি ফেরত নেয় গ্রাহকরা।
লোন স্ক্রীমে সদস্য সংখ্যা ৯ জন। এসকল সদস্যরা এ এনজিও থেকে লোন নেয় ১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। ৯জন গ্রাহকের নিকট লোনের ১লক্ষ ৩৭ হাজার ৪২৫ টাকা অনাদায় রয়েছে।
ঘটনার পেছনের ঘটনা বক্তব্য!
উল্লেখ্য, খুলনার চলন্তিকা নামের একটি এনজিও নড়াইলের কালিয়া   অঞ্চল থেকে চলতি বছরের ৩ এপ্রিল মাসে ৮ হাজার গ্রাহক থেকে  প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা। এলাকার অসহায় গরীব গ্রাহকদের যেমন সর্বস্ব খুইয়ে পথে বসেছে তেমনি পথে বসেছে চলন্তিকার স্থানীয় কর্মী ও এলাকার কিছু সাধারণ পরিবারের লোকেরা।
চলন্তিকার মালিকগন গ্রাহকের সমস্ত টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিঃস্ব করে পথে বসিয়ে দিয়েছে কালিয়া উপজেলার পাটনা গ্রামের সুনীল দাসের পরিবার। কয়েক মাস আগে সুনীল দাস মারা গেলে পরিবারের উপর পুরো দায় চাপায় এলাকাবাসী। নিজের অনার্স পড়ুয়া দুই মেয়ে আর একমাত্র ছেলেকে নিয়ে দিশাহীন কালিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগের এইচ, এ বিধবা নিলীমা দাস।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, চলন্তিকা যুব সোসাইটি নামের (রেজিঃ নং-কে-১১০/২০০৪) খুলনা ভিত্তিক একটি এনজিও ২০০৮ সালে কালিয়া ও বড়দিয়ায় অফিস ভাড়া নিয়ে কাজ শুরু করে। লাখে ১৪ হাজার টাকা কমিশন এবং ৬ বছরে মেয়াদী আমানত দ্বিগুণ ও দশ বছরে তিনগুণ মুনাফা দেওয়ার কথা বলে কালিয়া ও বড়দিয়া এলাকার গ্রাহকদের কাছ প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে। আমানতের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও আমানতের টাকা তুলতে গেলে এনজিও কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে কালক্ষেপন করতে থাকে। এতে গ্রাহকদের সন্দেহ বাড়তে থাকে। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল  বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলন্তিকার ম্যানেজারের পলায়নের খবর গ্রাহকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে কয়েক’শ আমানতকারি চলন্তিকার কালিয়া অফিস ঘেরাও করে। ৯ এপ্রিল সাজ্জাদুর রহমান নামের গ্রাহক চলন্তিকা যুব সোসাইটি নামের এনজিও’র চেয়ারম্যান মোঃ খবিরুজ্জামানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ ওই এনজিও’র ৬জন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, কালিয়া উপজেলা ব্যবস্থাপক মিলন দাস, খুলনার ডুমুরিয়ার ব্যবস্থাপক জলিল শেখ, খুলনার প্রধান কার্যালয়ের মিলন চন্দ্র বিশ্বাস, ফকিরহাটের উপ-ব্যবস্থাপক আসাদুল ইসলাম, বাগেরহাটের সহকারি ব্যবস্থাপক কিবরিয়া ও ফকিরহাটের ব্যবস্থাপক সুবির দাস। এ মামলায় সুনিল দাস আসামী হিসেবে নেই।
গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া চলন্তিকা এনজিও’র কারনে ভয়াবহ পরিনতি নেমে এসেছে চলন্তিকার কর্মী মৃত সুনীল দাসের পরিবারের উপর। ২০১২ সালে চলন্তিকার কর্মী হিসেবে যোগদান করেন সুনীল দাস। ৩ বছর ধরে নানা অসুখে ভুগে ২০১৭ সালের ২৩ জুন মারা যান তিনি। পিতার অসুস্থতার সময়ে ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ সালে বড় মেয়ে শান্তা দাস কর্মী হিসেবে এ এনজিওতে কাজ করতে থাকেন।

মামলা এবং আটকের কারনে জেলায় চলন্তিকা এনজিও’র কাছে গ্রাহকরা আইনের উপর ভর করে আছেন, আর বিভিন্নভাবে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্ত যুবতী দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকুরীজীবী নিলীমা দাসের উপর নেমে এসেছে চরম অমানবিক নির্যাতন। পাটনার এক পুলিশ কর্মকর্তা ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ চাকুরি করা ভাইয়ের দাপটে গ্রাহকদের পক্ষ নিয়ে নির্যাতনে নেমেছেন ইস্রাফিল মোল্যা ওরফে ইস্রাফিল।
এসপি’র ভাই ইস্রাফিলের নেতৃত্বে সালিশ ও সালিশ পরবর্তী ঘটনা বক্তব্য!
গত ২৪ মে পাটনা স্কুল মাঠে সালিশে বসেন স্থানীয় এ পুলিশ সুপার ও এনএইচআরসি’র কর্মকর্তার ভাই ইসরাফিল, আযুব খাঁ ও ইউপি মেম্বর অরুন দাস। সালিশে তারা এক তরফা সিদ্ধান্ত দেয়, চলন্তিকার কাছে জমা হওয়া ৪৭ লক্ষ টাকার ৭০ ভাগ ৩৪ লক্ষ টাকা ফেরত দেবে সুনীল দাসের পরিবার। এই সালিশের পর থেকে ঐ পরিবারের উপর নেমে আসে অমানবিক নির্যাতন। সুনীল দাসের মেয়েদের রাস্তা-ঘাটে ধরে নিয়ে যাবার হুমকি দেয়া হয়। বাড়িতে এসে ঘরে আগুন জ্বালিয়ে মেরে ফেলা হবে এমন কথা বলে ঐ মাতব্বরা। লাঠি বানিয়ে এনে বাড়িতে রেখে দিয়ে যায় এবং বিধবা নিলীমা দাসকে দেখিয়ে বলে, এই লাঠি দিয়ে তোর ছেলেকে মেরে ফেলা হবে। ভয় পেয়ে নিজের সর্বস্ব খুইয়ে টাকা জোগাড় করতে নেমে পড়ে নিলীমা।
ইতিমধ্যে স্বামীর রেখে যাওয়া পাটনা খালপাড়ের ২৭ শতক জমি বিক্রি করে চার লক্ষ টাকা, লাখে মাসিক ৩ হাজার টাকা সুদে দেড় লক্ষ টাকা, পিসি (ফুফু)’র কাছ থেকে ধারে ৫০ হাজার, স্থানীয় আরেক আত্মীয়ের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকাসহ মোট সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা জোগাড় করে নিলীমা।
গত ২৪ আগষ্ট সকাল ৮টার দিকে ২য় দফা সালিশের ভয়ে অনিলের পরিবারের লোকেরা উপস্থিত না হলে ইসরাফিল মোল্যা এলাকার লোকদের হুকুম দেয় এই বলে যে, হিন্দুরা সুনীলের বাড়ি ভাংচুর করবে আর মুসলমানেরা গাছপালা কেটে জমি দখল করে বসবাস শুরু করবে। এই কথার পরে কয়েক’শ লোক ক্ষিপ্ত হয়ে ধেয়ে যায় সুনীল দাসের বাড়ি ভাঙচুর করতে। এ সময় বাড়ির গাছপালা কেটে ফেলে পাওনাদারেরা। সুনীলের ভাই অনীলের গোয়াল থেকে ৪টি গরু লুট করে নিয়ে যায়, বাধা দিতে গেলে সুনীলের বড়ভাই অনীলের স্ত্রী যমুনা রানীকে মারধোর করে তারা। সারাদিন ধরে বাড়ির পাশের বাঁশঝাড় থেকে শতাধিক বাঁশ, বাড়ির ১৫টি বাড়ন্ত মেহগনি গাছ কেটে নেয় এবং দিনভর তান্ডব চালায় কয়েক’শ লোক। সেই তান্ডবের সময় দুই মেয়েকে খাটের তলে লুকিয়ে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তা খুজতেছিলো পরিবারটি। পরে থানায় খবর দিলে এস আই মিজানের নেতৃত্বে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে।
এসময় পুলিশের সামনে  ইস্রাফিল এর কাছে গোছানো সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা তুলে দেয় নিরীহ পরিবারটি। কিন্তু ইস্রাফিল এর আদেশমত ৭০ ভাগ টাকা না দেয়ায় তা গ্রহণ না করে নড়াগাতি থানার এস আই মিজানের মধ্যস্থতায় টাকাটি ইউপি মেম্বর অরুন দাসের কাছে গচ্ছিত রাখা হয়।
এ সময় সালিশকারি ইস্রাফিল বলে, আমার কথাই শেষ কথা ৭০ ভাগ অর্থাৎ ৩৪ লক্ষ টাকা না দেওয়া পর্যন্ত এই পরিবারের উপর নির্যাতন চলতেই থাকবে, পুলিশকেও এলাকায় অনুমতি নিয়ে আসার জন্য বলেন এই পুলিশ ও কর্মকর্তার ভাই।
সুনীলের বড় মেয়ে শান্তা কাঁদতে কাঁদতে জানান, ইস্রাফিলের কাছে আকুতি করে বলেছি, আমরা এত টাকা কোথায় পাব! তখন তিনি আমাকে বলেন, রক্ত বিক্রি করে হোক, কিডনী বিক্রি হোক আর ইজ্জত বিক্রি করে হোক যেভাবে পারো সেইভাবে সব টাকা জোগাড় করে দিতে হবে।
পরেরদিন ২৫ আগষ্ট ভোরে আবারও ইস্রাফিলের নির্দেশে আক্রমন করে গ্রাহকেরা। এসময় সকাল ৯টার দিকে ইস্রফিলের নির্দেশে সুনীল দাসের ২ মেয়ে ও স্ত্রীকে বাইরে থেকে সারাদিন তালা মেরে রাখা হয়। সারাদিন পরে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে থানার এস আই মারুফ এসে তাদের তালা খুলে বের করে। ভয়ে তারা না খেয়ে কাটিয়েছে সারাদিন, পরে প্রতিবেশীরা এসে তাদের সুস্থ করে।
নড়াইলের নড়াগাতি সুনীল দাসের পরিবারের অভিযোগ বক্তব্য!
সুনীল দাসের বড় মেয়ে শান্তার অভিযোগ, টাকা নিয়েছে চলন্তিকা আমরা তুলে দিয়েছি এটা সঠিক, কিন্তু আমাদের এভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে টাকা আদায় করতে চাইছে ইস্রাফিল। এরপর আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। বাবা মরে যাবার পর মা মানষিকভাবে অসুস্থ, আমাদের লেখাপড়া শেষ, সব বিক্রি করে আমরা কোথায় যাব।

সুনিল দাসের বড় মেয়ে শান্তা দাস খুলনা বয়রা মহিলা কলেজে ইহিতাসে স্নাতকোত্তর, মেজ মেয়ে রীমা দাস বি এল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে হিসাব বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং ছোট ছেলে সুমন দাস খুলনা মডেল কলেজে এইচ এসসিতে লেখাপড়া করতো। টাকার অভাবে ইতিমধ্যে শান্তাকে হোস্টেল থেকে বের করে দিয়েছে, রীমা মেসের খরচ জোগাড় করতে না পেরে জুন মাসে বাড়িতে এসে আর পড়তে যায়নি। সুমনও মেসের খরচ চালাতে না পেরে লেখাপড়া ছেড়ে বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে থাকছে, ভয়ে সে বাড়িতে আসতে পারছে না।
ভয়াবহ আতঙ্কের সেই দিনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় কথা বন্ধ হয়ে আসছিল মাষ্টার্স পড়ুয়া রীমা দাসের। কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে, মনে হলো বাইরে পাক আর্মি আর রাজাকারেরা অপেক্ষা করছে, সেদিন বাইরে বের হলে আমরা দুই বোন ওদের হাতে ধর্ষিত হয়ে যেতাম।
নীলিমা দাস বলেন, আমার পরিবারের সব কিছু বিক্রি করে টাকা দিয়েছি, কিন্তু আমাদের উপর অত্যাচার বন্ধ হয়নি, আমাদের মেরে ফেললেও এর থেকে ভালো হতো। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেষ, আমার পরিবার পথে বসে গেছে, আমি কার কাছে বিচার চাইবো, ইস্রাফিল যেভাবে বলছে সেভাবেই এলাকার লোকেরা নির্যাতন করছে।
নড়াইলের নড়াগাতি পাটনা গ্রামের ইউপি মেম্বর অরুন দাস বক্তব্য!
পাটনা গ্রামের ইউপি মেম্বর অরুন দাস বলেন, ওরা সাড়ে ছয় লক্ষ টাকা জোগাড় করে ইস্রাফিলের কাছে জমা দেয়, কিন্তু ইস্রাফিল সেই টাকা গ্রহণ না করে আমাকে রাখতে বলে, ইস্রাফিল যখন চাইবে তখনই টাকা ফেরত দেয়া হবে।
সালিশে নেতৃত্বদানকারী এসপি’র আপন ভাইয়ের বক্তব্য!
সালিশে নেতৃত্বদানকারী ইস্রাফিল মোল্যা সালিশ সম্পর্কে বলেন, আমি সব সময় চেয়েছি এলাকায় শান্তি বজায় থাকুক তাই বলেছি এলাকার লোকেদের কাছে। এলাকার লোকদের পক্ষ নিয়ে সালিশ করেছি। এলাকার সুনীল দাসের পরিবার ছাড়া কেউ আমার সম্পর্কে খারাপ কিছু বলতে পারবে না। আপনারা আর পুলিশ মিলে বিষয়টি মিটিয়ে দেন।
নড়াইলের নড়াগাতি থানার সাব ইন্সপেক্টর মারুফ বক্তব্য!
চলন্তিকা যুব সোসাইটি এনজিও’র প্রতারনায় সর্বশান্ত গ্রাহক ও কর্মীরা উদ্ধারকারি কর্মকর্তা নড়াগাতি থানার সাব ইন্সপেক্টর মারুফ বলেন, চলন্তিকার বড় কর্মকর্তারা আটক হয়ে জেলখানায় আছে। পরিবারটিকে নিরীহ পেয়ে কিছু লোক অত্যাচার করছে। আমি একদিন ঐ মেয়েদের বাড়িতে গিয়ে তালা ভেঙ্গে তাদের উদ্ধার করেছি। তারা পুলিশকেও মানতে চায় না।
নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি, মো: আলমগীর কবীর’র বক্তব্য!
নড়াগাতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আলমগীর কবীর বলেন, সালিশকারি ইস্রাফিল মোল্যার ভাই এসপি’র দোহাই দিয়ে আমার সাথে কয়েকবার কথা বলেছে, আমি তাকেসহ গ্রাহকদের বলেছি বিষয়টি আইনগতভাবে দেখার জন্য। ঐ পরিবারের একটি অভিযোগ দেয়া আছে। এলাকায় পরিবারটির নিরাপত্তা দেবার ব্যাপারে পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা নেবে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here