নড়াইলে নির্বাচনের শেষ সময়ে গণসংযোগে প্রার্থীরা, নানা অভিযোগ বিএনপির!

0
309

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি : শেষ মুহূর্তে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন নড়াইলের দু’টি আসনের প্রার্থীরা। প্রচারণায় শেষ দিকে বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করছেন দু’টি আসনের ১২ প্রার্থী। এর মধ্যে নড়াইল-১ আসনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন আওয়ামী লীগ নেতা বর্তমান সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি ও ধানের শীষ প্রতীকে জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়াও এ আসনে ভোটের মাঠে আছেন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিল্টন মোল্যা, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হাফেজ মোহাম্মদ খবির উদ্দীন ও এনপিপি’র (ছালু) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনসুরুল হক।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতার বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কবিরুল হক মুক্তি বলেন, দলীয় নেতাকর্মী ও ভোটারদের সমর্থনে এবারের নির্বাচনেও বিজয়ী হবো ইনশা আল্লাহ। বিগত দিনে জনগণের ভালোবাসায় এ আসনে দুইবার এমপি ও দুইবার কালিয়া পৌরসভার মেয়র হয়েছি। এবার বিজয়ের হ্যাটট্রিক করতে চাই। এবারের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে বলে আমি আশাবাদী।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুক্তির এ বক্তব্য প্রত্যাখান করে বিএনপি প্রার্থী বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতিকে জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিজয়ী হবো ইনশা আল্লাহ। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী ও সমর্থকেরা আমাদের প্রচার-প্রচারণায় বাঁধা দিচ্ছে। নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করে অনেককে এলাকা ছাড়া করেছে। নির্বাচনে কোনো সমতল ভূমি নেই।
জাপা প্রার্থী মিল্টন মোল্যা বলেন, জনগণের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। তরুণ প্রার্থী হিসেবে ভোটাররা উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। বিজয়ী হলে গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে এলাকার উন্নয়ন করতে চাই।
এনপিপি’র (ছালু) প্রার্থী মুনসুরুল হক, জানান, প্রচার-প্রচারণার শুরু থেকেই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছি। ভোটারদের সাড়া পাচ্ছি। নতুন মুখের প্রার্থীর বিজয় প্রত্যাশা করছেন ভোটাররা।
এদিকে গত ২২ ডিসেম্বর শনিবার ঢাকা থেকে নড়াইলে এসে ব্যাপক গণসংযোগ ও পথসভা করে যাচ্ছেন নড়াইল-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাশরাফি বিন মর্তুজা।
বিভিন্ন পথসভায় তিনি বলেছেন, আপনারা নৌকায় ভোট দিবেন। আমি সুন্দর একটি নড়াইল উপহার দেয়ার চেষ্টা করব। আপনাদের স্বপ্ন পূরণ করাটাই আমার মূল লক্ষ্য। আমি আপনাদের সন্তান, আপনাদের মাঝেই বড় হয়েছি। এজন্য আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা চাই।
অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন-২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান এ জেড এম ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। তিনি বলেন, আমাদের মাইকিং করতে দেয়া হচ্ছে না। পোস্টার টানাতে পারছি না। গণসংযোগে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। ভোটাররা ভোট দিতে পারলে আমি বিজয়ী হবো।’
এছাড়া নড়াইল-২ আসনে এনপিপির (ছালু) জেলা সভাপতি মনিরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম নাসির উদ্দীন, ইসলামী ঐক্যজোটের র্প্রার্থী মাহাবুবুর রহমান এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (রব) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফকির শওকত আলী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
এনপিপির (ছালু) প্রার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, শেষ মুহূর্তে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। ভালো সাড়া পাচ্ছি। ভোটাররা অবহেলিত নড়াইলের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়ার কথা বলছেন। এদিকে মাশরাফির প্রতি সমর্থন জানিয়ে গত ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে নড়াইল-২ আসনে জাপার (এরশাদ) প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল-১ আসনে ভোটার ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৯ হাজার ১১৩ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৮ জন। কালিয়া পৌরসভাসহ ১৪টি ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার কলোড়া, বিছালী, সিঙ্গাশোলপুর, সেখহাটি ও ভদ্রবিলা ইউনিয়ন নিয়ে নড়াইল-১ আসন গঠিত। বিগত নির্বাচনে এ আসনে পাঁচবার আ’লীগ, দু’বার করে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এবং একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী (আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী) বিজয়ী হন।
এদিকে নড়াইল-২ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫১১ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৬০ হাজার ৬২৪ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৮৭ জন। নড়াইল ও লোহাগড়া পৌরসভাসহ এ আসনের অধীনে সদর উপজেলায় আটটি ইউনিয়ন এবং লোহাগড়ার ১২টি ইউনিয়ন রয়েছে। বিগত নির্বাচনে এ আসনে পাঁচবার আ’লীগ ও একবার মহাজোটের প্রার্থী এবং দুইবার করে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (এরশাদ) প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে কোন দলের প্রার্থী বিজয়ী হবেন, সেটাই দেখার অপেক্ষায় আছেন ভোটারসহ নড়াইল-১ ও ২ আসনের সাধারণ মানুষ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here