উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমানের বাসায় গিয়ে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মলয় কুন্ডু, সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটুসহ জোটের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে, এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমানের সহধর্মনী দিলারা বেগম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা মন্ডলী সদস্য মলয় কান্তি নন্দী, শেখ হানিফ, কাজী হাফিজুর রহমান, অরুণ, জোটের নেতা সৈয়দ ওসমান আলী, শামীমুল ইসলাম টুলু, মুন্সি আসাদুর রহমান, স্বপ্না রায়, সৌরভ ব্যানার্জি, মহিউদ্দিনসহ প্রমুখ। এ উপলক্ষে রুপগঞ্জ বাঁধাঘাটে কেক কাটার মধ্য জন্ম উৎসব পালন করা হবে। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে,উল্লেখ্য, প্রফেসর মুন্সী মো: হাফিজুর রহমান নড়াইলের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ১৯৩৮ সালের ১ জুলাই তৎকালীন নড়াইল মহকুমার অন্তর্গত নড়াইলের লাহুড়িয়া গ্রামের মুন্সী আব্দুর রাজ্জাক ও মাতা রাবেয়া খাতুন এর ঘর আলো করে জন্ম নেন। শৈশব থেকেই শিক্ষার প্রতি তাঁর আগ্রহ তৈরী হয়। তিনি গ্রামের স্কুল হাফেজ আব্দুল করিম একাডেমি থেকে ১৯৫৪ সালে ম্যাট্রিকুলেসন, বাগেরহাট পি সি কলেজ থেকে আই এ এবং বি এ পাস করেন ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম. এ পাস করেন। তিনি ১৯৬০ সালের ২ নভেম্বর শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন এবং ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৪১ বছর এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এ উপলক্ষে রবিবার(০১ জুলাই) সাড়ে ৭টা তিনি ১৯৯৪ সালে প্রফেসর হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৯৫ ২৯ জুন তারিখে অবসর গ্রহণের পরও তিনি নিজ গ্রাম লাহুড়িয়া কলেজে আরো ৫/৬ বছর অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সরকারি ও বেসরকারি কর্মকালীন সময়ে বিভিন্ন কলেজে উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর স্ত্রী মিসেস দিলারা বেগম বাংলা সাহিত্যে এম. এ পাস করে নড়াইল সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে অবসরে যান। আলোকিত এই দম্পতির এক পুত্র ও দুই কন্যা সন্তান স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে,শখের বশে ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি করতেন মুন্সী মো: হাফিজুর রহমান। সময় পেলেই কবিতা, ছড়া, গীতিকবিতা, ছোটগল্প লিখতেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাড়িছাড়া হওয়ার কারণে পুর্বের লেখাগুলো হারিয়ে ফেলেন। ৭৫ এ বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হবার পরে মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলো, বিশেষ করে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধের ক্রমাগত অবক্ষয় তাঁর মনোজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাঁর অন্তর্গত যন্ত্রনা ও দ্রোহের বহি:প্রকাশ ঘটতে থাকে ছড়া, কবিতা ও প্রবন্ধের মাধ্যমে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও সমাজ ও রাজনীতি সচেতনতার পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যে তাঁর রয়েছে ঈর্ষণীয় পান্ডিত্য। লেখালেখিতেও রয়েছে এর প্রতিফলন। বাংলা কবিতার পাশাপাশি লিখেছেন ইংরেজি কবিতা। মোট প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ছয়টি। এ বছর বাংলা একাডেমির বইমেলায় তাঁর প্রকাশিত বাংলা কবিতার বই বজ্রকণ্ঠ, ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ও ছড়ার বই এই সেই স্বপ্নের বাংলা বিদগ্ধ পাঠকের মন জয় করেছে। তাঁর সৃষ্টিকর্মের মূল উপজীব্যও স্বাধীনতাযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ। তাঁর স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ।এসবের পাশাপাশি শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রয়েছে তাঁর সদর্প পদচারণা। লাহুড়িয়ার এম এ আহাদ কলেজ ও এস এম সুলতান বেঙ্গল আর্ট কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ৭৫ পরবর্তী সময় বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনীতি যখন পাথর সময় অতিক্রম করছে, সেই সময়ে ১৯৭৯ সালে নড়াইল-২ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর প্রার্থী হয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ তখন সরকারি হয়নি, শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি এই দু:সময়ে মুিক্তযুদ্ধের আদর্শ সমুন্নত রাখার জন্য নির্বাচনকে একটি লড়াই হিসেবে মনে করে নির্বাচনী এলাকার পথে প্রান্তরে ছুটে বেড়িয়েছেন। পরবর্তীতে কলেজ সরকারি হওয়ার পরে আর তাঁকে সক্রিয় রাজনীতিতে দেখা যায়নি। কিন্তু আজ অবধি নড়াইলের যে কোন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে,তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রাণ পেয়েছে এস এম সুলতান মেলা, পয়লা বোশেখের মেলা, একুশের লাখো প্রদীপ প্রজ্জ্বলনসহ ছোট বড় অনেক মেলা, অনেক উৎসব। নড়াইলের সাংস্কৃতিক কর্মীদের তিনি অত্যন্ত আস্থাভাজন এক অভিভাবক। চিত্রা থিয়েটার, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীসহ নড়াইলের প্রায় সকল সাংস্কৃতিক সংগঠনের তিনি প্রাণপুরুষ। এছাড়া জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, পরিবেশ ও নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে, বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের পাশে দাঁড়িয়েছেন তার দু:সময়ে। সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে থাকলেও বিশেষ সময়ে জাতির ক্রান্তি লগ্নে কোন অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রাজপথে সোচ্চার হয়েছেন বারবার। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে, ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে গণজাগরণ মে সক্রিয় অংশগ্রহণ, ২০১৪ সালের অভয়নগরে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে, জঙ্গীবাদ-মৌলবাদ বিরোধী কর্মসূচির মিছিলে তিনি টগবগে তরুণের মত পা মিলিয়েছেন, কণ্ঠ মিলিয়েছেন শ্লোগানে। বয়স তাঁকে দমাতে পারেনি, বার্ধক্য করতে পারেনি ক্লান্ত। আর এসব কাজে তিনি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন, সার্বক্ষনিক সঙ্গ পেয়েছেন তাঁর স্ত্রী দিলারা বেগমের। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে, অনন্যা মহিয়সী দিলারা বেগমেরও নড়াইলের প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রয়েছে স্বতন্ত্র পদচারণা। মুন্সী মো: হাফিজুর রহমানের ৮০তম জন্মদিনের এই শুভক্ষণে অপদিকে শুভেচ্ছা শ্রদ্ধা জানিয়ে বিবরতি দিয়েছেন নড়াইল জেলা অনলাইন নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়, সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যা, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন মোল্যা বাঘ ডাংঙ্গা, কোষাদক্ষ বুলু দাস,মোঃ জাহাঙ্গীর শেখ,প্রফেসর মুন্সী মো: হাফিজুর রহমানের ৮০তম জন্মদিনের এই শুভক্ষণে, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নড়াইল একটি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তাঁর প্রতি, সমাজের প্রতি দায়শোধের একটি অক্ষম প্রচেষ্টা করেছে মাত্র। আশা করব আমাদের যাত্রাপথে যখন তিমির রাতের মুখোমুখি হব, বাতিঘর হয়ে তিনি আমাদের পথ দেখাবেন, আমরা যেন পথ হারিয়ে না ফেলি।
খবর ৭১/ই: