নড়াইলে ধান-মাছ-সবজির চাষে সফল খামারি শিবনাথ রায়

0
358

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
ধান-মাছ-সবজির সমন্বিত চাষে হকার থেকে কোটি পতি হয়েছেন শিবনাথ রায়। এখন নড়াইলের কালিয়া গ্রামের শিবনাথ রায় এক সংগ্রামী জীবনের নাম। জানা যায়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর দিকে তার বাবা কুমুদ রায়কে স্থানীয় রাজাকাররা ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলে। শিবনাথের বয়স তখন ১১ বছর। দুই বোন ও মায়ের সঙ্গে পালিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে নড়াইলের কালিয়ায় নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, শিবনাথের বাবা ছিলেন বর্গাচাষি। সেখানেই শুরু হয় শিবনাথের কঠোর জীবন সংগ্রাম। বাড়ির পাশে নড়াইলের নবগঙ্গা কালিয়া-দৌলতপুর-খুলনা নদীপথে  ফেরি করে কলা ও চানাচুর বিক্রি করতেন। একদিন শিশু শিবনাথকে দেখে  যাত্রী উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের জনৈক নিত্য সাহার মায়া হয়। বাড়িতে নিয়ে শিবনাথকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। বাড়িতে কাজ করার জন্য বেতনও দেন। সেখানে পড়াশোনা হয় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। বেতনের টাকায় সঞ্চয়   করেন ১৬ হাজার ৬০০ টাকা। এই পুঁজি নিয়ে বাড়ি ফিরে শুরু করেন ভূসিমালের ব্যবসা। পাশাপাশি কিছুদিনের মধ্যেই ২ একর জমি ইজারা নিয়ে শুরু করেন মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ। চার বছর পর ৮ একর জমি ক্রয় করেন। সেখানেও চাষ করেন চিংড়ি। এরপর দুই বছর আগে ভক্তডাঙ্গা বিলে ২২৭ একর জমি লিজ নেন। বিশাল মাঠ। এর উত্তর পাশ থেকে শুরু হয়েছে একের পর এক পুকুর। এসব পুকুরে চাষ করা হচ্ছে নানান প্রজাতির মাছ। মাঠে হচ্ছে ধানের আবাদ। পুকুরপাড়ে অসংখ্য টমেটো ও মিষ্টিকুমড়ার চাষ হচ্ছে। এভাবে এই জমিতে পরিকল্পিতভাবে সমন্বিত ধান,মাছ ও সবজি চাষ করছেন শিবনাথ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তিতে ধান, মাছ ও সবজি চাষে সফলতা পান। লিজ বাবদ প্রতিবছর জমির মালিকদের ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিতে হয়। এ খামারে গলদা চিংড়ি, রুই, কাতলা,তেলাপিয়া, পুঁটিসহ নানা প্রজাতির মাছের চাষ হয়। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ মণ মাছ ট্রাকে করে বিক্রির জন্য নেয়া হয় বাগেরহাটের ফকিরহাট আড়তে। স্থানীয়ভাবেও কিছু মাছ বিক্রি হয়। এছাড়া বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫০ মণ টমেটো ও ২০ মণ মিষ্টিকুমড়া বাজারজাত করা হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে খামারে চাষ হয় করলা, শসা, ঝিঙা ও লাউ। সে সময় প্রতিদিন গড়ে ৫০ মণ করলা, ৫০ মণ শসা, ২০ মণ ঝিঙা ও ১ হাজার পিস লাউ সংগ্রহ করা হয় বিক্রির জন্য। এসব বিষমুক্ত সবজি স্থানীয় বাজার ছাড়াও জেলা শহর,পার্শ্ববর্তী জেলা মাগুরা, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, গোপালগঞ্জ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।একসময়ের ফেরি করা হকার হতদরিদ্র জীবন কৃষিখামার করে এখন কোটিপতি। একাধারে খামারে চাষ করা হচ্ছে মাছ, টমেটো, মিষ্টিকুমড়ার পাশাপাশি ধান উৎপাদিত হচ্ছে। আর এভাবে কালিয়া পৌরসভার গোবিন্দনগর এলাকায় ভক্তডাঙ্গা বিলে ২২৭ একর জমিতে গড়ে তুলেছেন তার বিশাল খামার। জীবন সংগ্রামের সফল এই মানুষটি রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে আরোহণ করেছেন। তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে টানা তিনবার কালিয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর।সফল খামারি শিবনাথ জানান, তিনি গত বছর মাছ বিক্রি করে আয় করেছেন ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এছাড়া ৬৬ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। পাশাপাশি তিন ভাগের দুই ভাগ ধান বর্গাচাষিদের দিয়েছেন। বর্গা বাদ দিয়ে তিনি পেয়েছেন ২ হাজার মণ ধান । তিনি আরো জানান, এ খামারে ৭০ থেকে ৮০টি পরিবার বর্গাদার। সার্বক্ষণিক ২২ জন কৃষক মাছ ও সবজির পরিচর্যা করেন। যখন কাজের চাপ বাড়ে, তখন থাকেন ৪০ থেকে ৫০ জন। এ খামারের মাছ ও সবজি নিয়ে সরাসরি বিক্রি করেন আরো অনেকে। পরিবহন কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন আরও অনেক শ্রমিক। সব মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি পরিবার এ খামার থেকে নানা ভাবে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক চিন্ময় রায় আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে বলেন, আমি এ জেলায় যোগদানের পর শিবনাথের এ কৃষি খামার সম্পর্কে জেনে আমি হতবাক হয়েছি। তার বিশাল কর্মযজ্ঞ সত্যিই অনুকরণীয়। নিশ্চয় তাকে দেখে এলাকার বেকার যুবকরা উদ্বুদ্ধ হবেন।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here