নড়াইলে জমিদারদের ৬ কোটি টাকার পদ্মদীঘি ভূমিদস্যুদের কবল থেকে উদ্ধারে মানববন্ধন

0
340

হুমায়ুন কবীর রিন্টু , নড়াইল প্রতিনিধিঃ নড়াইলের জমিদারদের রেখে যাওয়া পদ্মদীঘি ভমিদস্যুদের কবল থেকে পুনরুদ্ধারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সোমবার (১৪এপ্রিল) সকালে আদালত চত্বরে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে বক্তব্য দেন জেলা দুর্ণীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজীহাফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা পরিষদ সদস্য এ্যাডভোকেট রওশন আরা কবির লিলি, নারী নেত্রী আঞ্জুমান আরা,এ্যাডভোকেট রাজু আহম্মেদ, যুবলীগ নেতা শরীফুল ইসলাম নান্তু, জিটিভি’র জেলা প্রতিনিধি মির্জা মাহামুদ রন্টু প্রমুখ। জানা গেছে,নড়াইল মৌজার ৯২৭ খতিয়ানের ১৩৭৬ দাগে ২ একর ৯৩ শতকের উপর বিশাল দিঘী ছিল। জমিদারদের কাটা এ দিঘী পদ্মদীঘি নামে এলাকায় পরিচিত ছিল। নড়াইলের একটি ভূমিদস্যু চক্র সুকৌশলে মোটা অংকের টাকায় জালিয়াতি কাগজপত্র তৈরি করে। ওই জালিয়াতি কাগজ পত্রের উপর ভিত্তি করে জালিয়াত চক্রের সদস্য মাহমুদুর রহমানের নামে নাম পত্তন করে। মাহামুদ যশোর শহরের চাচড়া মোড়ের হবিবর রহমানের ছেলে। নড়াইল এসি ল্যান্ড অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৪ সালের ১২ ডিসেম্বর মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে ২২২/৯-১/৯৪ নং নাম পত্তন কেস’র মাধ্যমে মাহমুদুর রহমানের নামে নাম পত্তন করা হয়। নাম পত্তন কেস নথি সূত্রে জানা যায়, জমির মালিক ছিলেন নড়াইল শহরের কুড়িগ্রামের যোগেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ছেলে জ্যোতির্ময় বিশ্বাস। নাম পত্তনের মাধ্যমে জ্যোতির্ময় বিশ্বাসের নিকট হতে মালিকানা হস্তান্তর হয়ে যায় মাহামুদুর রহমানের নামে। আর নাম পত্তন করার জন্য প্রমান স্বরূপ জমির মালিকানা দাবি করে দলিল নং ১৫৭/৯৪ দাখিল করা হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই নাম্বারের দলিলের সাথে পদ্মদীঘির জমির কাগজপত্র সহ কোন কিছুর মিল নেই। শুধু তাই নয়, দাতা গ্রহীতা, জমির পরিমান, দাগ নম্বর, কোন কিছুর মিল নেই। জানা গেছে, ভূমিদস্যু জালিয়াতি চক্র স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে জালিয়াতি কাগজপত্র সৃষ্টির মাধ্যমে ওই জমি বিক্রয় করতে থাকেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রয় করা হয়েছে। মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতি কাগজপত্র দিয়ে সাব রেজিষ্ট্রারকে মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে জমির গ্রহীতাদের নামে দলিল রেজিষ্ট্রি করা হয়। তবে নাম পত্তন করতে গেলে জালিয়াতির সকল তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। এ পর্যন্ত কোন এসি ল্যান্ড ওই জমির নাম পত্তন করে দেন নি। বরং জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে করা আগের নাম পত্তন বাতিল করে দিয়েছেন। এরপরও ভূমিদস্যু চক্র ওই জমি নামপত্তন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। নড়াইল সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের এসি ল্যান্ড মোঃ আজিম উদ্দিনের নিকট ওই জালিয়াতি কাগজপত্র উপস্থাপন করলে তিনি তা বুঝে ফেলেন। নড়াইল পৌরসভার সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জালিয়াতি কাগজপত্রের স্বপক্ষে প্রতিবেদন দিতে আপত্তি করেন। ভূমিদস্যু চক্রের কুখ্যাত এক দালালের মাধ্যমে এসি ল্যান্ড অফিস ও নায়েব অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের এ কাজ করাতে ৫ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়ে ব্যার্থ হন। ইতোপূর্বে একাধিক এসি ল্যান্ড ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তার কাছে মোটা অংকের ঘুষ দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে এ চক্রটি ব্যার্থ হয়েছে। বার বার ব্যর্থ হলেও সক্রিয় ভূমিদস্যু হাল ছাড়েননি। তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত পৌছেছেন। যে কোন মূল্যে ওই জমির নামপত্তন তাদের চাই-ই। জনপ্রতিনিধি ও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। গুঞ্জন উঠেছে, চক্রটি প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা দিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মাহবুবুর রশীদকে বশ করেছেন। তার আশ্বাস পেয়ে ভূমি জালিয়াতরা নামপত্তনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন। সূত্র জানায়, জালিয়াতি চক্র এসি ল্যান্ড অফিসেই নামপত্তনের জন্য আবেদন করছেন। এ অফিস হতে আবেদন খারিজ বা রিজেক্ট হলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর নিকট আপিল করে সেখান থেকে নামপত্তন করে নিবেন। নির্বিঘ্নে এ কাজটি করার জন্য আগেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করা হয়েছে বলে ব্যাপক গুঞ্জন উঠেছে। এদিকে দুর্নীতি অনিয়ম করে এ জমির নামপত্তন করে দিতে রাজি না হওয়ায় চক্রটি এসি ল্যান্ডের উপরে চরম ক্ষুদ্ধ হয়েছে। তাকে বদলি করে পছন্দের এসি ল্যান্ডকে এনে আবারও নাম পত্তন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন ওই জালিয়াত চক্র। যোগযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সাথে। যেকোন মাধ্যমে নাম পত্তন করে ৬ কোটি টাকার সম্পত্তি আত্নসা তে রিলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এদিকে সচেতন মহল জমিদারদের ফেলে যাওয়া এ বিশাল সম্পত্তি সরকারের অনুকুলে নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।
হুমায়ুন কবীর রিন্টু
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here