নড়াইলে কোচিং শিক্ষকের অপর্কমের ফিরিস্তি দিলো হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সেই ছাত্রী

0
349

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলে শিক্ষকের অপর্কমের ফিরিস্তি দিলো হাত-পায়ের ব্যান্ডেজ নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সেই ছাত্রী, হাত-পায়ের ব্যান্ডেজ নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ১৩ বছরের শিশু রাবেয়া। তার পায়ের ও হাতের রগ কেটে দিয়েছে তারই গৃহশিক্ষক মিঠু বিশ্বাস। প্রেম-বিয়েতে সফল হতে না পেরে ওই ছাত্রীর ওপরে এমন নৃশংস হামলা চালিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী রাবেয়ার দাদি ও সাত বছরের এক শিশুকেও চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছেন এই শিক্ষক। জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (পঙ্গু হাসপাতালের) বিছানায় শুয়ে শিক্ষক মিঠু বিশ্বাসের অপকর্মের বিবরণ দিয়েছেন রাবেয়া। রাবেয়ার ভাষ্য, ‘আমি ফাইভে থেকে ওর (মিঠু বিশ্বাস) কাছে কোচিং করছি এক বছর। এর পর সিক্সে ওঠার পরে প্রাইভেট পড়ছি এক মাস। ওর কাছে যতদিন প্রাইভেট পড়তে গেছিলাম, ততদিন সে আমাকে হের কাছে বসাতো। খাতায় লেখার কথা বলে বার বার আমার হাত চ্যাইপা ধরতো। গায়ে হাত দেবার চেষ্টা করতো। স্যার বলে অন্যদের সামনে কিছু বলতে পারি নাই। কিন্ত যখন এসব বেশি বেশি করা শুরু করে তখন আমি আমার বাড়িতে জানাইছি। আমি আমার বাবা-মাকে অনেক বার বলেছি যে স্যার আমার লগে এমন করে। আমার পরিবার থাইক্যা আমার দাদা ওদের বাড়িতে বারবার অভিযোগ দিয়েছিল। কিন্তু তারা (মিঠু বিশ্বাসের পরিবার) শুধু বলছে, আমরা আমাদের ছেলেরে বুঝাবোনে। তারা তাদের ছেলেরে কিছুই বলে নাই।’ ওই ছাত্রী আরো বলে, ‘সে (মিঠু বিশ্বাস) একদিন আমারে বলে, আমি তোমারে বিয়ে করবো। আমি কইছি, আমি তো ছোট। এখন বিয়া করার ইচ্ছা আমার নাই। তখন ও বলে, আমি ছোট মেয়েই বিয়ে করবো। আর আমাদের স্কুলে যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হইছে, সেইদিন আমারে ফুল দিতে গেছিলো। আমি সেই ফুল নেই নাই। ও আমাগোর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিছিল। কিন্তু আমার বাবা-মায় রাজি হয় নাই। সেইসব রাগ থেকে মনে হয় এই ঘটনা ঘটাইছে। হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই ছাত্রী বলে, ‘সেদিন আমি তখন ঘরে বসে পড়তেছিলাম। আমাগোর পাশের বাড়ির হেনা (সাত বছরের শিশু) আমার ঘরে পড়তে আইছিল। ও (মিঠু বিশ্বাস) তখন মোবাইল টিপতে টিপতে ঘরে ঢুকে ছিটকানি লাগাইয়া দিছে। এটা দেখে আমি যখন চিৎকার করি, তখন সে আমারে ধরতে যায়। আমি টেবিল থেকে উঠেই জানলা দিয়ে বের হতে গেছি। আমি এক পা জানলাতে দিয়েওছি। ও (মিঠু বিশ্বাস) তখনই আমার পায়ে প্রথম কোপটা দিছে। ওরে মারিস না, আমারে মার এই বলে আমার দাদি ঘরের বাইরে চিৎকার করতেছিল। কিন্তু কেউই ঘরে ঢুকতে পারছিল না।’ রাবেয়া আরো বলেন, ‘ও (মিঠু বিশ্বাস) একটা গরু কাঁটার চাকু নিয়া ঘরে আইছিল। আমি যেই জানালা খুলে দৌঁড়ে বের হতে চেয়েছিলাম, আমারে মেরে মিঠুই ওই জানালা দিয়ে বের হয়ে গেছে। জানালাটা খোলা ছিল, গ্রিল ছিল না।’ মিঠু বিশ্বাসের ফাঁসি দাবি করে নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী বলে, ‘ওর (মিঠু বিশ্বাস) জেল হলে তো ব্যাইচা যাবে। আবার বাইর হইয়া আরেকজনের সাথেও এমন করতে পারে। তাই আমি ওর ফাঁসি চাই। ’কথা বলতে বলতে ‘আমার সেলাইগুলো খুব বেশি ব্যথা করছে। হাতে পায়ের কাটা খুব জ্বালা করছে’, বলে কাঁদতে শুরু করে রাবেয়া। হাসপাতালে রাবেয়ার বিছানার পাশেই যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন তার দাদি। তাকেও একইভাবে কুপিয়েছেন ওই শিক্ষক। চাপাতির কোপে তার ডান হাতের কব্জি শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়। আর বাম হাতের কব্জিও চাপাতির কোপে ছিঁড়ে অনেকাংশে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। একই হাসপাতালের আরেক বিছানায় গলা ও হাতের কাটা অংশ নিয়ে যন্ত্রণায় চিৎকার করছে সাত বছরের আরেক শিশু। সেও শিক্ষকের নির্মমতার শিকার। গত ১৫ মার্চ নড়াইলের সদর থানার সিঙ্গিয়া গ্রামে রাবেয়ার বাড়িতে গিয়ে তিনজনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন তারই গৃহশিক্ষক মিঠু বিশ্বাস। প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রাবেয়া এবং তার পরিবারের সদস্যদের কোপায় মিঠু। ঘটনার পরে মিঠু বিশ্বাস এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিল। ঘটনার দিন রাতেই নড়াইল সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে রাবেয়ার দাদা আলেক বিশ্বাস। মামলায় মিঠু বিশ্বাসসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়। এই বিষয়ে নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম (বার), নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায়কে জানান, ‘মামলার পরে আমরা মিঠু বিশ্বাসের বড় ভাই, যিনি মামলার দুই নম্বর আসামি-তাকে গ্রেপ্তার করি। এর পরে মিঠু বিশ্বাসসহ বাকি তিন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে চারজনকেই কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here