নড়াইলে কালের আবর্তে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য মুঠি মুঠি দিয়ে, ডাল ভাঙ্গার যাঁতা কল শুধুই স্মৃতি!

0
899

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: প্রযুক্তির উৎকর্ষে আধুনিক যন্ত্রপাতির ছোঁয়ায় মানুষের জীবন-যাত্রা বদলে যাচ্ছে। সেই সাথে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য যাঁতা। আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায় জানান, এক সময় নড়াইলের গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে যাঁতা দেখা যেত। যাঁতা হল ডাল ভাঙ্গার এক প্রকার হস্তচালিত যন্ত্র। বর্তমানে এটি ইঞ্জিল চালিত যন্ত্রের সাথে লাগিয়ে ডাল, চাল, হলুদ-মরিচ বা অন্য যে কোনো কিছু গুড়া করতে ব্যবহার করা হয়। তবে গ্রামা লে যাঁতা বলতে এখনও হাতে এক খন্ড কাঠি দিয়ে গোলাকৃতির চাকার মত পাথরের যে যন্ত্রটি ঘুরিয়ে ডাল বের করা হয় তাকেই বোঝায়। হাতে চালিত ডাল জাতীয় শস্য ভাঙ্গার যন্ত্রটি আজ উপমহাদেশে বিলুপ্তির পথে। এটি পাথর দ্বারা নির্মিত একটি হাতল যন্ত্র। যার দুইটি অংশ থাকে। দেখতে অনেকটাই চাকার মত। একটির উপর অপরটি বসিয়ে দিতে হয়। আর এর মুখের মধ্যে ডাল শস্য (মসুর, খেসারি, ছোলা, মাষকলাই ইত্যাদি) মুঠি মুঠি দিয়ে, কাঠির একপ্রান্ত যাঁতার উপরের অংশের কাঠি বাঁধানোর নির্দিষ্ট স্থানে বাঁধিয়ে ঘুরালেই; যাঁতার দুই শাণিত অংশের মাঝে পরে শস্য গুলো ডাল হয়ে বের হয়। আগে যাঁতা ব্যবহার করা হতো ধান, চাল, ডাল, গম, যব ভাঙিয়ে চাল ও চালের গুঁড়া ইত্যাদি বানানোর কাজে। তবে এসব কাজের বেশিরভাগই করা হতো ঢেঁকি এর মাধ্যমে। তাও অল্প পরিমাণে ভাঙানোর কাজে যাঁতা ব্যবহার করা হতো। আগেকার দিনের নববধূরা তাদের বাবার বাড়ি থেকে উপহার হিসেবে যাঁতা পেত। অর্থাৎ, একসময় যাঁতা উপহার সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এগুলো গ্রাম্যমেলায় কিনতে পাওয়া যেতো। কালের বিবর্তনে যাঁতা এর ব্যবহার অনেককাংশে হ্রাস পেয়েছে। খুব কম পরিবারই এখন যাঁতা প্রয়োজনীয় বস্তু হিসেবে ব্যবহার করে। অনেকে ঐতিহ্য হিসেবে যাঁতা সংরক্ষণ করে থাকেন। তাই কিছু কিছু বাড়িতে এখনো যাঁতা দেখতে পাওয়া যায়। দুই এক দশক আগেও যাঁতা মহিলাদের কাছে খুব প্রয়োজনীয় একটি গৃহস্থলি উপকরণ ছিল। কিন্তু কালের আবর্তে এবং আধুনিক যন্ত্রের কাছে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে যাঁতা। এখন আর গ্রামবাংলায় আগের মতো চোঁখে পড়ে না যাঁতার ব্যবহার। উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন মেশিন তৈরী হওয়ার কারনে সুখপ্রিয় বাঙ্গালী পরিবার আর কষ্ট করে যাঁতা চালাতে চায় না। এ ব্যাপারে আরো এক ব্যাক্তি, নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার মোল্যা (বাগডাঙ্গা) ও বুলু দাস, আমাদের নড়াইল প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, যাঁতার ব্যবহার কমে আসছে আধুনিক প্রযুক্তি বিভিন্ন মেশিনের কারনে। দেশীয় ঐতিহ্যকে টিকে রাখতে হলে বর্তমান প্রজন্মকে যাঁতা চেনাতে হবে এবং ব্যবহার সম্পর্কে জানাতে হবে। তা না হলে ডাল ভাঙ্গার দেশীয় যন্ত্র ঐতিহ্যের যাঁতা একদিন কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তারপরও গ্রামবাংলার অনেক পরিবারে এখনও হয়তো যাঁতাকে ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রেখেছেন। গ্রামবাংলার অনেকের বাড়িতে যাঁতা এখনও টিকে থাকলেও তা আর ব্যবহার তেমন একটা হয়না। হয়ত আর কিছু দিন পর গ্রামবাংলার অনেক ঐতিহ্যের মতই যাঁতাও কালের আবর্তে হারিয়ে যাবে।
খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here