উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কোনো নৈরাজ্য ও সহিংসতা হলে তা কঠোর ও কঠিনভাবে মোকাবেলার জন্য নড়াইল জেলা পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। নৈরাজ্য ও সহিংসতাকারীদের সঠিক হস্তে দমন করার জন্য থানা পুলিশ, গোয়েন্দা শাখা(ডিবি) পুলিশসহ নড়াইল জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষে নড়াইল পুলিশ অতিরিক্ত টাস্কফোর্সেরও ব্যবস্থা করেছে। রোববার (২ ডিসেম্বর) সকালে নড়াইল জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায় ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যার উপস্থিতিতে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম। তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ঘিরে কোনো সহিংসতা বরদাসত করবে না নড়াইলের পুলিশ। এছাড়া ২০১৩-১৪ সালের মতো আগুন-সন্ত্রাস যাতে সৃষ্টি না হয়- সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্যও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নড়াইলের সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ শরফুদ্দীন, সহকারি পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার্স) মোঃ জালাল উদ্দিন, নড়াইলের প্রত্যেকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)’র সমন্বয়ে নির্বাচনকালীন সময়ে পুলিশি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা থাকবে নিজের বাড়ির মতোই নিরাপদ। জনগণের জানমালের দায়িত্ব থাকবে পুলিশের কাছে। জনগণ যাতে অবাধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেটিই থাকবে পুলিশের মূল লক্ষ্য। এদিকে শিগগিরই নড়াইলের অবৈধ মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ সুপার। অতীতে দুর্বৃত্তরা নিবন্ধনহীন মোটরসাইকেল ব্যবহার করেই নাশকতার ঘটনা ঘটায়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুবই সন্নিকটে। আর এ কারণে নড়াইলে যাতে কোনো বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন পুলিশ সুপার । আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কী কী প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, সর্বদা স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে পুলিশ। পুলিশ নির্বাচনে কারও পক্ষপাতিত্ব করে না। সব জায়গায় শৃঙ্খলা বজায় রক্ষার্থে এবার নির্বাচনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে। এছাড়াও নির্বাচনকালীন সময়ে ভদ্রবেশী দুষ্কৃতিকারীদের ধরতে সাদা পোশাকেও পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া গ-গোলের সম্ভাবনা আছে এমন কেন্দ্রগুলোতে থাকবে বাড়তি সতর্কতা। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে সাথে সাথে এ্যাকশান। এক্ষেত্রে কারও কোনো সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। এক কথায় কেউ নির্বাচন বানচাল করতে চাইলে পুলিশ তাকে কঠোর হস্তে দমন করবে। পুলিশের মধ্যে নির্বাচনে গ্রুপিং থাকতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার জানান, আমার ডিপার্টমেন্টে কেউ কোনো অপরাধ করে পার পায় না। সম্প্রতি ইয়াবাসহ এসআই মানিক গ্রেফতার, কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শমসেরকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করার ঘটনাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখিয়ে তিনি আরও বলেন, কোনো পুলিশ যদি নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব করার চেষ্টা করে তাহলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। এছাড়াও নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, পিপিএম বলেছেন, সবার সহযোগিতায় আমরা একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হব। কাউকে নির্বাচন ঘিরে অরাজকতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া হবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার। জানা গেছে, নির্বাচনের আগে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এছাড়া লাইসেন্স করা একজনের অস্ত্র যাতে অন্য কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। শিগগিরই জোরালোভাবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানোর কথা বলা হয়। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে একটি চক্র সারাদেশে নৈরাজ্য চালিয়েছে। এবার যাতে এ ধরনের কোনো নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে আগে থেকে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে। ওই সময়ের ঘটনায় যেসব আসামি এখনও গ্রেফতার হয়নি তাদের সমন্বিত তালিকা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। এ ছাড়া নতুনভাবে কেউ ষড়যন্ত্র করছে কি-না, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ যাতে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে সে ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। ট্রাফিক শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশের কোনো কর্মকর্তা বা সদস্য আইন ভঙ্গ করলেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভুঁইফোঁড় অনলাইনে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকবে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনিটরিংয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গুজব ছড়িয়ে যাতে কোনো গোষ্ঠী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশ সদস্যদের সজাগ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে জঙ্গিরা যাতে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বলা হয়, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় আত্মতুষ্টিতে ভোগা যাবে না। তাদের ব্যাপারে নিরবিচ্ছিন্ন দৃষ্টি রাখার কথা বলা হয়। এ ছাড়া মাদক নির্মূলে সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ এসেছে। পুলিশের পেশাদারি অভিযানের কারণেই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে উল্লেখ করা হয়। মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি সরকারের। মাদক ব্যবসায়ী যতই শক্তিশালী হোক তাদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।
খবর৭১/ইঃ