নড়াইলের ৩৬ বছরের নর্দমা এখন দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা ও মৎস্য এ্যাকুরিয়াম

0
563

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের ৩৬ বছর যাবত এক একর জায়গা জুড়ে ছিল ময়লার ভাগাড় ।এখন পুলিশ সুপার নিজ উদ্যোগে চাষ করা হচ্ছে অন্তত ১৫ প্রকার দেশি মাছ, ১২-১২ প্রকার দৃষ্টিনন্দন বিদেশি মাছ, চারিদিকে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রকার ফলদ, বনজ ও ফুলের গাছ, তৈরী করা হয়েছে পানির ফোয়ারা…
নড়াইলে নিজ উদ্যোগে ৩৬ বছরের নর্দমা সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন “মৎস্য এ্যাকুরিয়াম” করেছে পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ জসিম উদ্দিন পিপিএম। আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোটে, বিভিন্ন জেলা থেকে হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছ সংগ্রহ করে এখানে চাষ করা হচ্ছে, পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার দৃষ্টিনন্দন বিদেশি মাছও ছাড়া হয়েছে এখানে। খামারটি দৃষ্টিনন্দন করার জন্য এখানে তৈরী করা হয়েছে পানির ফোয়ারা, সাধারনের বসার জন্য তৈরী করা হয়েছে বেঞ্চ । খামারের চারিদিকে রোপন করা হয়েছে বিভিন্ন রকমের ফলদ ও বনজ গাছের চারা। এই এ্যাকুরিয়াম তৈরী করার ফলে এলাকার কয়েক হাজার জনসাধারন তিন দশকের দুর্গন্ধ ও মশার থেকে মুক্তি পেয়েছে। আগে যেখানে সাধারন জনগন চলাফেরা করার সময় নাকে রোমাল অথবা কাপড় দিয়ে যেত এখন সেখানে এই প্রকল্প গ্রহন করার ফলে বিকাল হলেই বেড়াতে আসছে প্রকৃতি প্রেমীরা।
জানাগেছে, শহরের প্রান কেন্দ্রে নড়াইল-মাগুরা সড়কের পাশে জেলা পরিষদ ও সড়ক বিভাগের এক একর জায়গার একটি জলাশয়ে ত্রিশ বছর যাবত এলাকার মানুষ ময়লা আর্বজনা ফেলতো নিয়মিত। ফলে এটি সৃষ্টি হয়েছিল ময়লার ভাগাড় হিসাবে। এখানে দীর্ঘদিন ময়লা ফেলায় দুর্গন্ধে এলাকার মানুষ চলাচল করতে পারতনা। মশার চাষও হত নিয়মিত। বিষয়টি পুলিশ সুপারের নজরে আসলে নিজ উদ্যোগেই এই ময়লার ভাগাড়ের     সংস্কার করে তৈরী করেন দৃষ্টিনন্দন মৎস্য খামার। এখানে চাষ করা হচ্ছে কই, শিং, মাগুর, পুটি, পাবদা, টাকি, চিতল, শোল, খল্লা, বেলেসহ অন্তত ১৫ রকমের দেশি মাছ। এছাড়াও বিভিন্ন রকমের দৃষ্টিনন্দন বিদেশি মাছও চাষ করা হয়েছে এখানে। খামারের চারিদিকে রোপন করা হয়েছে বিভিন্ন রকমের ফলদ ও বনজ গাছের চারা। পুলিশ সুপার নিজ হাতে প্রতিদিন সকাল বিকাল এই খামারের পরিচর্যা করেন। প্রকল্পটির নাম দিয়েছের পুলিশ মৎস্য এ্যাকুরিয়াম, নড়াইল।
এই প্রকল্পের পার্শবর্তী মহিলা কলেজে লেখাপড়া করে প্রায় এক হাজার ছাত্রী এখানে হোষ্টেলে থাকে ।দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্রী মোছাঃ কাজী লিমা। সে জানায় ঐ (ময়লার ভাগাড়) জায়গা থেকে তাদের কলেজে এবং হোষ্টেলে প্রচুর দুর্গন্ধ আসতো। মশার কামড়ে এবং দুর্গন্ধে রাতে তারা হোষ্টেলে ঘুমতে পারতো না। এখন কোন দুর্গন্ধ নেই, মশাও কমে গেছে। এখন বিকাল হলেই এই মৎস্য এ্যাকুরিয়ামে ঘুরতে আসে তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ রনি শেখ জানান, আর্বজনার গন্ধে দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকাতে মানুষের চলাচলে কষ্ট হত। দূষিত বাতাসের গন্ধে পরিবেশ ভারি হয়ে থাকতো। এলাকার মানুষের বিভিন্ন রোগবালায় হয়। এলাকার শিশুরা ছিল বেশি ঝুকিতে। এ খামারের পাশে বড় খেলার মাঠ থাকলেও গন্ধে ছেলেমেয়েরা ৬-৭ বছর এই মাঠে খেলা করেনা। মাঠের পাশে সরকারী তিনটি তিনতলা     সরকারী কোয়াটার থাকলেও এখানে কোন পরিবার বসবাস করেনা। এখন মৎস্য প্রকল্প গ্রহন করায় এলাকার পরিবেশ অনেক সুন্দর হয়েছে। বিকাল হলে মনে হয় এটি একটি পার্ক।
সরকারী ছুটির দিনে গতকাল বিকালে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন নড়াইল পৌর এলাকার মহিষখোলা গ্রামের নাসরিন খানম। তিনি জানান মৎস্য এ্যাকুরিয়াম করায় জায়গাটি বদলে গেছে। এটি একটি মিনি পার্ক এর রুপ নিয়েছে। এখানে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঘুরতে এসে আনেক ভাল লাগছে। এখানে ঘুরতে এসে তার সন্তানেরাও অনেক খুশি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, নড়াইলে আগে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত। এখন অনেক মাছ হারিয়ে গেছে। এই মৎস্য এ্যাকুরিয়ামে বিভিন্ন প্রকার দেশি মাছ সংগ্রহ করে চাষ করা হচ্ছে। এতে হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছ কিছুটা ফিরে পাওয়া যাবে বলে আশা করেন তিনি।
নড়াইলের পৌর মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বিশ্বাস আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, যেখানে মৎস্য এ্যাকুরিয়াম করা হয়েছে এটি পৌর এলাকার একটি গুরুত্বপূর্ন এলাকা। এই এলাকাতেই সার্কিট হাউজ, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, গনপূর্ত প্রকৌশলীর বাস ভবন। এখানে রয়েছে রেজিষ্ট্রি অফিস, এলজিইডি ভবন, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারী বেরসকারী অফিস। এই খামারটিতে আগে এলাকার লোকজন ময়লা অর্বজনা ফেলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করে রাখতো। পুলিশ সুপার নিজ উদ্যোগে জায়গাটি পরিস্কার করে দৃষ্টিনন্দন মৎস্য খামার করার ফলে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছে।
সিভিল সার্জন মোঃ আসাদুজ্জামান মুন্সি আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, বসতিপূর্ণ এলাকায় ময়লা আবর্জনা ফেললে প্রচুর দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় এবং মশার উপদ্রব বাড়ে। এই গন্ধে এবং মশায় মানুষের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রোগবালায় হওয়ার আশংকা থাকে। জায়গাটি পরিস্কার করে মৎস্য খামার করায় এলাকার মানুষের রোগবালায় কমে গেছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ জসিম উদ্দিন পিপিএম আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, জায়গাটি দীর্ঘদিন ময়লা আর্বজনা ফেলায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে গিয়েছেল। বিশেষ করে পাশে (২০ ফুট দূরে) মহিলা কলেজে হাজার খানেক শিক্ষার্থীসহ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ সাস্থ্য ঝুকিতে ছিল। সাধারন মানুষের কথা চিন্তা করেই এটি করা হয়েছে। এর ফলে আমিষের ঘাটতিও কিছুটা পুরন হবে এবং এলাকার পরিবেশও ভাল থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here