চৌগাছার গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক ভাবে দেখা মিলছে সজিনা

0
1199

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) : যশোরের চৌগাছাতে এবার মৌসুমি ফল বা সবজি যেটিই বলি না কেন সেই সজিনা ডাটার ভাল ফলনের আশা করা হচ্ছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ঘরের আনাচে কানাচে, রাস্তার পাশে প্রতিটি গাছে বাদুর ঝুলার মত ঝুলছে সজিনা। সজিনা গাছ অতি পরিচিত একটি নাম। গাছটার বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে মারিংগা ওলেইফেরা। আর ইংরেজিতে গাছটিকে মিরাকল ট্রি বা অলৌকিক গাছ নামেও আখ্যায়িত করা হয়। সজিনা গাছেল পাতা, ডাটা, ফলের বিচি এমনকি গাছের ছাল অত্যান্ত উপযোগী বলে বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে জানা গেছে। তাই দিন দিন সজিনা গাছের কদর বেড়েই চলেছে মনে করছেন সচেতন মহল। সূত্র জানায়, সজিনা গাছ গ্রাম বাংলার প্রতিটি মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম। প্রতি বছর শীতের শেষে এই গাছ ফুলে ফলে ভরে যায়। সজিনার ডাটা খেতে অত্যান্ত সু¯^াধু ও রোগ প্রতিরোধক। তাই বছরের এই সময়টা এলে সকলেই অন্তত এক দিনের জন্য হলেও সজিনার ডাটার তরকারী খেতে ভুল করেনা। চলতি মৌসুমে সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছাতে সজিনার ডাটার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত যে দিকে চোখ যায় প্রতিটি গাছে বাদুর ঝুলার মত ঝুলছে সজনে ডাটা। ইতোমধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে প্রিয় এই তরকারী। তবে দাম নাগালের বাইরে থাকায় সকলের ভাগ্যে এখনও জোটেনি সজিনার ডাটা। বিভিন্ন তথ্য সূত্র ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, সজিনার ডাটা, এর ফুল, ফল, গাছের ছাল সহ প্রতিটি অংশ নানা গুনে ভরা। যেমন এই গাছের প্রতি গ্রাম পাতায় রয়েছে গাজরের চারগুন বেশি ভিটামিনএ, দুধের চেয়ে চারগুন বেশি ক্যালসিয়াম, কলার চেয়ে তিনগুন বেশি পটাসিয়াম, কমলালেবুর চেয়ে সাতগুন বেশি ভিটামিন আর দইয়ের চেয়ে দুই গুন বেশি প্রোটিন। প্রায় ৩শ রকমের চিকিৎসা হয় এই সজিনা গাছ দিয়ে। চার হাজার বছর ধরে নানা চিকিৎসায় এ গাছের ব্যবহার হয়ে আসছে। দক্ষিন এশিয়ায় বহু বছর ধরে বাড়ির আনাচে কানাচে, বনে জঙ্গলে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে এই গাছ দেখা মেলে। সম্প্রতি আফ্রিকান বিভিন্ন দেশে এর চাষ বানিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। চাষও খুব সহজ, একটি গাছের ডাল মাটিতে পুতে রাখলেই এক বছরের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ গাছে পরিনত হয়। সূত্র জানায়, তেল রসুন দিয়ে রান্না সজিনা খেতে শুধু সু¯^াধুনা পুষ্টিকারও। সজিনা পাতা ও সজিনায় প্রচুর আঁশ আছে, যা খাদ্যনালী ও পরিপাকতন্ত্রেকে পরিস্কার করে। বিশেষ করে তৈলাক্ত অনেক খাবার আমরা খাই, যা তেল রক্তনালীতে আটকে থাকে। সে গুলো বের করতে সজিনা সাহায্য করে। সজিনার মধ্যে আইসোথিয়োকাইনেটাস নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে, যা গ্যাষ্ট্রিক, আলসার বা গ্যাষ্ট্রিক জনিত ক্যান্সার ঠেকাতে সহায়তা করে। আমেরিকা, নামিবিয়া ও ফ্রান্সের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষনায় এটি প্রমানিত হয়েছে। সজিনাকে আজকের বিশ্বের সুপার ফুড হিসাবে চিহিৃত কর হয়েছে। পুষ্টির ভান্ডার, আয়রনের দিক থেকে এটি পালন শাকের ৫ গুন বেশি শক্তিশালী। সজিনার পাতাকে এন্ট্রি অক্্িরজেন্টের খনি বলা যায়। ঘাতক কোলেষ্টেরলকে হত্যা করে সজিনা, হৃতপিন্ডের বন্ধুও হয়ে উঠতে পারে। থাইল্যান্ডে বহু বছর ধরে সজিনাকে হৃদরোগের ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি ৩ মাস ব্যবহারে কোলেষ্টেরল লেভেল অর্ধেক নামিয়ে আনে। জানা গেছে, আর্সেনিক সমস্যা নিরোধে সজিনার বীজ কিংবা পাতা ভুমিকা রাখে। এমনকি আর্সেনিক দুষনে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ্য করতে সজিনার বীজ বা পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিদিন ৫০ গ্রাম সজিনার পাতা খেয়ে ডায়েবেটিকস ২১ শতাংশ হ্রাস পাই বলে সূত্র জানায়। ৩ মাস এক চামচ করে সজিনার পাতার গুড়া খেয়ে ডায়বেটিকস নিয়ন্ত্রনে আনা যায়। বলা চলে চরম অবহেলা আর অযতেœ বেড়ে উঠা ঘরের আনাচে কানাচের এই গাছটি মানুষের জন্য অত্যান্ত উপযোগী। চলতি মৌসুমে উপজেলার প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে প্রচুর পরিমানে হয়েছে সজিনার গাছ। আর ওই সকল গাছে এখন শোভা যাচ্ছে সজিনার ডাটা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মনে করেন, মৌসুমি এই খাবার প্রতিটি মানুষ যত বেশি পারে যেন খাদ্য হিসাবে গ্রহন করেন পাশাপাশি বাড়ি ঘরের পাশে, পতিত জমি এমনকি রাস্তা ঘাটের পাশে বেশি বেশি সজিনার ডাল লাগানোর পরামর্শ দেন তারা। এতে করে একদিকে পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা হবে অন্যদিকে নানা রোগ বালায় থেকে সকলেই মুক্তি পাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here