নড়াইলের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে জমিদার বাবুদের চিত্রার নাম

0
333

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:

জমিদার বাবুদের চিত্রা নদী দখলে দূষণে আজ বিচিত্রা। চিত্রার জন্ম উত্পত্তি কুষ্টিয়ার কালিগঙ্গা থেকে। সেখান থেকে ঝিনাইদহ, মাগুরা হয়ে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে একটি শাখা খুলনার ভৈরবের সঙ্গে আর অন্যটি মিলিত হয়েছে নড়াইলের কালিয়ার গাজিরহাটে নবগঙ্গার সঙ্গে। এ স্রোতস্বিনী চিত্রার পাড়েই গড়ে ওঠে নড়াইল শহর, বাজার-হাট-বন্দর। নড়াইলে নদী পথে আসতেন বণিকরা। এ নদীর পাড়ে বসেই শিল্পী এসএম সুলতান ছবি আঁকতেন, শিশুস্বর্গ নৌকা ভাসিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। তারও আগে নড়াইলের জমিদার ও বাবুদের বৌ-ঝিরা নদীতে শানবাঁধা ঘাটে গোসল করতেন। সেসব এখন স্মৃতি। তবে এখনো বর্ষায় নৌকা বাইচ হয়। নির্বিচারে দখল, আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত করা ও অপরিকল্পিত বাঁধ-সেতু নির্মাণের কারণে যৌবন হারাতে বসেছে নড়াইলের চিত্রা নদী। স্রোতধারা আগের মতো বজায় না থাকায় শুষ্ক মৌসুমের কৃষিও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। দূষণে দুর্গন্ধে গোসল ও দৈনন্দিন কাজে আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না নদীর পানি। নড়াইলের স্থানীয়রা, আমাদের জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, চিত্রা পাড়ের অধিকাংশ জায়গা এখন দখল হয়ে গেছে, সেসঙ্গে দূষণের কবলে নদীর অবস্থা শোচনীয়। খাস জমি দেখিয়ে অনেক স্থানে সরকারি লোকেরা স্থায়ী নিবাস গড়ে তুলেছেন। নদী দখলের তালিকায় আছেন শহরের কয়েকজন প্রভাবশালীও। নড়াইল শহরে চিত্রার পাড়ে অন্তত ১০০ বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এছাড়া নদীপাড়ের অসংখ্য বাড়ির পয়োনিষ্কাশনের পাইপ ও নালা নদীতে উন্মুক্ত। বর্ষাকালে পাটজাগ দেয়া হয়। ফলে একদিকে প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়, একই সঙ্গে পানি পচে মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যায়। শহরের আলাদাত্পুর এলাকার গণমাধ্যমকর্মী চ্যানেল নাইন নড়াইল জেলা প্রতিনিধি এর ইমরান হোসেন,জানান, শহরের সব ক্লিনিক ও হাসপাতালের বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। প্রশাসন এগুলো দেখেও দেখে না। নদীর বিভিন্ন স্থান রীতিমতো ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। মহিষখোলায় কুন্ডুদের ঘাটে পোলট্রি ব্যবসায়ীরা দৈনিকই নদীতে বর্জ্য ফেলছে। গন্ধের কারণে নদীতে গোসল করতে পারছেন না গৃহিণী সোনিয়া খানমরা। অথচ আগে এ নদীর পানি দিয়ে রান্নার কাজও হতো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ষাটের দশকে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের কারণে কালিগঙ্গা, মাথাভাঙা ও কুমার নদীতে বাঁধ দেয়া হয়। এতে কুষ্টিয়ার কাছে উত্স মুখেই বাধাগ্রস্ত হয় চিত্রা। এরপর মাগুরাতে বাঁধ দেয়া হলে ধীরে ধীরে স্রোতহীন হয়ে ক্ষীণ ধারায় বইতে থাকে। পানির প্রবাহ না থাকায় এ অঞ্চলের খালগুলো মরে গিয়ে বিল এলাকার হাজার হাজার হেক্টর জমির সেচ সুবিধা নষ্ট হয়। এছাড়া নদী তীরবর্তী এলাকা গুলোতে ষাটের দশক থেকে অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় পদ্মা নদীর উজান থেকে আসা ঘোলা পানি নদীর নাব্য কমিয়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে কুষ্টিয়া থেকে মাগুরা পর্যন্ত মরে গেছে। তবে মৃত প্রায় চিত্রাকে দ্রুত মেরে ফেলার জন্য সরকারি উদ্যোগও দায়ী বলে মনে করছেন অনেকে। মাগুরার বুনাগাতি থেকে নড়াইলের সুলতান ব্রিজ পর্যন্ত ৩০ কিলেমিটারে পাঁচটি ব্রিজ নির্মাণকে অপরিণামদর্শী বলেই মনে করছেন নদী বিশেষজ্ঞরা। নদী দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আজিম উদ্দিন জানান, নড়াইল পৌর ভূমি অফিসের একটি টিম শহর এলাকায় জরিপ করে ৬৩ জন অবৈধ দখলদারকে শনাক্ত করেছে। জেলা প্রশাসক মো. এমদাদুল হক চৌধুরী জানান, দখলদারদের দ্রুত স্ব স্ব স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য অফিশিয়ালি নোটিস করা হবে। নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে নদী দখল ও দূষণমুক্ত করা হবে।
খবর ৭১/ ই:

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here