নড়াইলের পেড়লী ইউপি নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় পা হারানো সাদ্দামের দিন কাটছে অভাব-অনটনে

0
276

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:

নড়াইলের পেড়লী ইউনিয়নে ২০১৭ সালের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় পুলিশ সদস্যসহ আটজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় শতাধিক পরিবারের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল প্রায় ১০০ পরিবার। নিহত আটজনের মধ্যে কালিয়ার পাঁচজন, লোহাগড়ার দুজন ও সদর উপজেলার একজন। পুলিশের সদস্য ছাড়া নিহত লোকজনের সাতজন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী । সাদ্দাম বলেন, তিনি ও তাঁর বাবা মোফাজ্জেল শেখ (৫৬) মিলে ধান-পাটের ব্যবসা করতেন। তাঁর বাবা নড়াইলের কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৩ মে পেড়লী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে তাঁর বাবা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জারজিদ মোল্যার হয়ে কাজ করেন। নির্বাচনে জারজিদ জয়ী হন।পরিবারের সঙ্গে সাদ্দাম হোসেন। সম্প্রতি কালিয়া উপজেলার পেড়লী গ্রামে। পরিবারের সঙ্গে সাদ্দাম হোসেন। নড়াইলের সম্প্রতি পেড়লী গ্রামে। গত বছরও ভালো ছিলেন সাদ্দাম শেখ (২৫)। বাবার সঙ্গে ব্যবসা করতেন। কিন্তু এখন আর সেসব দিন নেই। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর প্রতিপক্ষের হামলায় এক পা হারিয়েছেন তিনি। এক হাত আর পিঠও জখম হয়েছে। অভাবের সংসারে এখন তাঁর দিন কাটে খেয়ে না-খেয়ে। সাদ্দামের বাড়ি পরে দলীয় প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের লোকজন ২৫ মে তাঁর বাবাকে কুপিয়ে মেরে ফেলেন। তিনি বলেন, ২৫ মে সকাল ৯টার দিকে তাঁর বাবা ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হন। বড় রাস্তায় উঠলেই দুর্বৃত্তরা তাঁর বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। খবর পেয়ে ঠেকাতে গেলে দুর্বৃত্তরা তাঁকে, চাচা শামীম শেখ (৩৭) ও আত্মীয় মোজাহের শেখকে (৪৫) কুপিয়ে জখম করে। পরে তাঁর বাবা মারা যান। প্রায় এক বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন সেই দিনের দুঃসহ স্মৃতি। তাঁর বাবাকে হত্যা আর তাঁদের আহত করার ঘটনায় চাচা আলিম শেখ ৩২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। মামলার আসামিরা জামিনে আছেন। তাঁরা নানা রকম হুমকি দিচ্ছেন। সাদ্দাম বলেন, ‘বাবাকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে পারে, এমন ধারণাই করতে পারিনি। তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল, এখনো আছে। আমাদের পরিবার বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমার বাবার হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার করবে।’বাবাকে হারিয়েছেন। নিজেও পঙ্গু। চলাফেরা করতে পারেন না। টাকাপয়সা নেই। ব্যবসা বন্ধ। হামলাকারীরা তাঁর বাম পা কুপিয়ে এতটাই জখম করেছিল যে, চিকিৎসকেরা তাঁকে বাঁচাতে ওই পা হাঁটুর ওপর পর্যন্ত কেটে ফেলেন। আরেকটা হাতও নাড়াতে পারেন না। আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় কোনো রকমে তাঁদের দিন কাটছে। এখন পর্যন্ত সরকার থেকে কোনো সহায়তা পাননি। মা শিউলি বেগম বলেন, ‘আমাদের মাঠাম (চাষের) কোনো জমি-জিরাত নেই। ছেলের বাবা রাখিমালে(ধান-পাট) ব্যবসা করতেন। ঘরে কিংবা ব্যাংকে জমানো টাকাপয়সাও নেই। এখন আমাদের মত্তি (মরণ) অবস্থা।’জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন খান আমাদের জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়কে জানান, নির্বাচন-পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের পেছনে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দলাদলি, ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া আবার দলীয় মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচনে হেরে যাওয়া ইত্যাদি কারণ রয়েছে। আহত লোকজনকে সাহায্য-সহযোগিতা করার বিষয়টি ভেবে দেখা হবে।।
খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here