নেটওয়ার্কে আসছে পুরো রাজধানী: মেট্রোরেলের আরও দুটি রুট হচ্ছে

0
659
নেটওয়ার্কে আসছে পুরো রাজধানী: মেট্রোরেলের আরও দুটি রুট হচ্ছে

খবর৭১ঃ
মেট্রোরেলের আরও দুটি নতুন রুটে হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেল স্টেশন এবং হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। এসব রুটের কোথাও পাতাল, আবার কোথাও এলিভেটেড লাইন হবে। এজন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার দুটি আলাদা প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ঋণ হিসেবে দেবে ৬৮ হাজার ৫৬৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বাকি টাকা সরকারের তরফ থেকে জোগান দেয়া হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড এ বছরের মধ্যেই কাজ শুরু করবে। ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে। রুট দুটি নির্মাণে পরামর্শক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৪৩৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যানজট নিরসনে এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন শেষ করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ফলে শুরু থেকে শেষ এবং ট্রেন পরিচালনা পর্যন্ত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এখন থেকেই কার্যকর উদ্যোগ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে।

পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন শনিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১)’ এবং ‘ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫) নর্দার্ন রুট’ শীর্ষক প্রকল্প দুটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। আগামী একনেক সভায় উপস্থাপন হবে বলে আশা করছি।

সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এ শহরে ২০০১ সালে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ৬শ’টি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ২০১৩ সালের হিসাবে যানবাহন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৪০০টিতে। কিন্তু সে তুলনায় রাস্তার সংখ্যা বাড়েনি। ফলে যানজট দুর্বিষহ আকার ধারণ করেছে। চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সরকার ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট রিভাইস স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লান (আরএসটিপি) অনুমাদন করে। সেখানে রাজধানীর যানজট দূর করতে পাঁচটি এমআরটি লাইন তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে এমআরটি লাইন-৬ (উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত) এর কাজ চলছে। জুলাই পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ। অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে এ দুটি রুটের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ঢাকার অসহনীয় যানজন কমাতে মেট্রোরেলের বিকল্প নেই। প্রতিদিন যানজটের কারণে শত শত কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সে হিসাবে রুট দুটি চালু হলে কম সময়ে বেশি মানুষ একসঙ্গে পরিবহন করা সম্ভব হবে। ফলে যানজট আর থাকবে না।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রাজধানীর যানজট কমাতে মেট্রো রেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ করা, রেল পরিচালনার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা এবং পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবলের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেই সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যাতে দুর্নীতি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। ঠিকাদার নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রেল স্টেশন, নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল ডিপো পর্যন্ত এমআরটি লাইন-১ রুটটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্য সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৩ হাজার ১১১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং জাইকার ঋণ থেকে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয় হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার এ রুটে ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার তৈরি হবে মাটির নিচে এবং বাকি ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার হবে এলিভেটেড। এর স্টেশনগুলোর মধ্যে ১২টি থাকবে মাটির নিচে এবং ৭টি থাকবে এলিভেটেড। এটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরামর্শক ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।

এদিকে হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার-গাবতলী-মিরপুর-১, মিরপুর ১০-কচুক্ষেত-বনানী-গুলশান ২-নতুনবাজার হয়ে ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৫ নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ১২ হাজার ১২১ কোটি এবং জাইকার ঋণ থেকে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। এর আওতায় নর্দার্ন রুটের জন্য ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেল তৈরি হবে। তার মধ্যে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার হবে পাতাল এবং সাড়ে ৬ কিলোমিটার হবে এলিভেটেড। এ রুটে ১৪টি স্টেশনের মধ্যে ৯টি মাটির নিচে আর ৫টি হবে এলিভেটেড। পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here