নুসরাত হত্যা : ২ ঘাতকের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

0
588

খবর ৭১ঃ ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতের ঘাতক স্থানীয় ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্র আবদুল কাদেরসহ ২ ব্যক্তিকে দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ওই ২ ব্যক্তি নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরাসরি জড়িত বলে জানিয়েছেন পিবিআইয়ের কর্মকর্তা ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে দেশের সীমান্ত এলাকা জেলা পুলিশ সুপারদের কাছে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। যাতে করে কোন কৌশলে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যেতে না পারে। তেমনি ভাবে দেশে শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরসহ দেশের আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরগুলোতে পলাতক আবদুল কাদেরসহ দুই জনের ছবি সম্মিলিত প্রোফাইল পাঠানো হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে সিভিল এভিয়েশনসহ বিমান বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-ব্যক্তিদের।

অপরদিকে, পিবিআইয়ের পরিদর্শক (ফেনী) নুসরাত হত্যা মামলার তদন্তকারী অফিসার শাহআলম বলেন, নুসরাতের ঘাতক উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পাকে আদালতের নির্দেশ মোতাবেক রিমান্ডে আনা হচ্ছে। এর আগে নুসরাত হত্যা মামলায় উম্মে সুলতানা পপি ওরফে শম্পাকে আটক করা হয়েছিল। গতকাল সোমবার তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এই পপি ওরফে শম্পাই আগুন লাগানোর বোরকা এনে দিয়েছিল।

পিবিআই কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, নুসরাতের মতো পপিও এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। ঘটনার দিন পপি নুসরাতের কাছে এসে খবর দেয় ছাদে তার বান্ধবী নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে। এই খবর পেয়েই নুসরাত দ্রুত ছাদে ছুটে যায় এবং সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার অনুসারীরা নুসরাতের ওপর হামলা করে, তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় হামলাকারীরা পপিকেই শম্পা নামে ডেকেছিল।

তিনি বলেন, নুসরাত মৃত্যুর আগে দেওয়ার জবানবন্দিতে শম্পার নাম বলেছিলেন। যে চারজন বোরকা পরা নারী বা পুরুষ তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়, শম্পা তাদের একজন বলে জানিয়েছিলেন নুসরাত। ঘটনার পরপরই এজাহারভুক্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া সন্দেহভাজন যে ছয়জনকে আটক করা হয় তার মধ্যে উম্মে সুলতানা পপি ছিল।

ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত আক্তার রাফিকে যৌন হয়রানি করেছিল ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজুদৌলা। এ ঘটনায় নুসরাত থানায় অভিযোগ করলে অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকেই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে নুসরাতের যৌন হয়রানির মামলা তুলে না নেয়ায় তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

গত ১০ই এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মৃত্যু ঘটে। পরদিন সকালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের বুঝিয়ে দিলে বিকালে সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চর চান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।

সোনাগাজীর চাঞ্চল্যকর নুসরাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ৬ আসামি ছাড়াও ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে ৯ এপ্রিল জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সরাফ উদ্দিন আহম্মেদের আদালত নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শহিদুল ইসলামকে ৫ দিন করে রিমান্ড দেন।

১০ এপ্রিল অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলাকে ৭ দিন, আবছার উদ্দিন ও আরিফুল ইসলামকে ৫ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন একই আদালতের বিচারক। এছাড়া ১১ এপ্রিল উম্মে সুলতানা পপি ও যোবায়ের হোসেনকে ৫ দিন করে রিমান্ড আদেশ দেয়া হয়। ১৩ এপ্রিল মামলার আরেক আসামি জাবেদ হোসেনকে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here