নুসরাত হত্যা মামলার জবানবন্দিঃ হত্যা মিশনে না থাকলে জীবননাশের হুমকি

0
551

খবর ৭১ঃ নুসরাত হত্যা মিশনে জড়াতে অনেকটাই ভয়ভীতি দেখানো হয়েছিল। অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদের নেতা শাহাদাত হোসেন শামীম নানা হুমকি-ধমকি দিয়ে কয়েকজনকে নুসরাত হত্যায় জড়াতে বাধ্য করে। সাখাওয়াত হোসেন জাবেদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন অনেক তথ্য দেওয়া হয়েছে। জাবেদ জানিয়েছে, ‘শামীম তাকে এই বলে হুমকি দেয়, নুসরাত হত্যা মিশনে তাদের সঙ্গে না থাকলে পরীক্ষা যাবে, জীবনও যাবে।’ জাবেদ তার জবানবন্দিতে জানায়, এ বছর আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিল সে। চার বিষয়ে তার পরীক্ষা হয়ে গেছে। পরীক্ষা শুরুর আগে ২৭ মার্চ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে তার সহপাঠী নুসরাত অভিযোগ তোলেন। তার অভিযোগ ছিল, সিরাজের যৌন হয়রানির শিকার তিনি। মামলা দায়েরের পর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করা হয়। ২৮ ও ৩০ মার্চ সিরাজের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন হয়। ৩০ মার্চ বিকেলে ফেনীর কারাগারে অধ্যক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যায় জাবেদ। ওই সময় সিরাজের ভালো-মন্দের খবর নেয় সে। এ ছাড়া পরদিন পরীক্ষার জন্য দোয়া চায়। এরপর কারাগার থেকে মাদ্রাসার হোস্টেলে যায় সে।

জাবেদ জানায়, সিরাজের মুক্তির জন্য যে ‘মুক্তি পরিষদ’ গঠন করা হয়, তার সদস্য করা হয় তাকে। ৪ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে এশার নামাজের পর শাহাদাত হোসেন শামীম, নূর উদ্দিন ও জোবায়ের তার কক্ষে আসে। এ সময় তারা জানায়, শনিবার নুসরাতকে ভয় দেখানো হবে। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে তাকে চাপ দেওয়ার সময় জাবেদকে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। এ প্রস্তাবে প্রথমে রাজি হয়নি সে। এরপর তাকে ভয়ভীতি ও নানা হুমকি দিলে থাকতে রাজি হয় সে।

জাবেদ জবানবন্দিতে উল্লেখ করে, ৪ এপ্রিল নূর উদ্দিন তাকে জানায়, এ কাজে বোরখা লাগবে। তখন সেখানে উপস্থিত শামীম বলে, সে পপি ও কামরুন নাহার মনির মাধ্যমে বোরখার ব্যবস্থা করবে। এসব কথাবার্তা চলার সময় শামীমের ফোনে কল এলে সে বাইরে চলে যায়। তার ফিরতে দেরি দেখে নূর উদ্দিন ও জোবায়েরও চলে যায়।

৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নূর উদ্দিন ও শামীম হোস্টেলে গিয়ে জাবেদকে তাদের সঙ্গে নেয়। তারা তিনজন চলে যায় মাদ্রাসার সাইক্লোন সেন্টারের তৃতীয় তলার একটি ক্লাসরুমে। সেখানে জোবায়ের কালো বোরখা ও হাতমোজা পরিহিত অবস্থায় ছিল। জোবায়ের সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদ্রাসার ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। পরে জাবেদ ও শামীম বোরখা পরতে থাকে। এক হাতে মোজা পরে জাবেদ। শামীমও হাতে মোজা পরে ছিল। তখন নূর উদ্দিন সেখান থেকে চলে যায়। প্রায় ১০-১২ মিনিট পর জাবেদ দেখে, নুসরাতকে ছাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে পপি। পপি জাবেদের সহপাঠী।

জাবেদ জানায়, পপি ও নুসরাতের পেছনে পেছনে ছাদে যায় সে, জোবায়ের ও শামীম। সেখানে গিয়ে তারা নুসরাতের কাছে সিরাজের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। পপি নুসরাতকে একটা কাগজে সই করতে বলে। কিন্তু নুসরাত তাতে রাজি হয়নি। এ সময় শামীম নুসরাতের মুখ চেপে ধরে। পপি নুসরাতের ওড়না খুলে জোবায়েরকে দেয়। জোবায়ের ওড়নাকে দুই টুকরো করে একটা টুকরো পপিকে দেয়। পপি ওড়নার ওই টুকরো দিয়ে নুসরাতের হাত পেছন দিক থেকে বাঁধে। তখন শামীম, পপি, মনি ও জোবায়ের নুসরাতকে ছাদের মেঝেতে ফেলে দেয়। মনি নুসরাতের বুক চেপে ধরে। জোবায়ের নুসরাতের পা ওড়নার আরেক টুকরা দিয়ে বেঁধে ফেলে। তখন শামীম জাবেদকে বলে, কেরোসিনভর্তি পলিথিন এনে নুসরাতের গায়ে ঢালতে। এ সময় শামীম তাকে ধমকও দেয়। পরে নুসরাতের শরীরে কেরোসিন মারে সে। তখন শামীম জোবায়েরের দিকে তাকিয়ে ম্যাচে কাঠি ঘষার ইশারা দেয়। জোবায়ের তার কাছে থাকা ম্যাচ দিয়ে কাঠিতে আগুন ধরিয়ে নুসরাতের গায়ে ছুড়ে মারে। এরপর জাবেদসহ অন্যরা দৌড়ে নিচে নেমে আসে। তৃতীয় তলার ক্লাসরুমে ঢুকে শামীমের হাতে বোরখা দিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকে পড়ে জাবেদ। পরীক্ষা শেষে হোস্টেলে গিয়ে মোবাইল ও টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে সে দ্রুত বাড়ি চলে যায়। বাড়ি থেকে এসে পরদিনও পরীক্ষায় অংশ নেয় জাবেদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here