খবর৭১ঃ ফেনীর সোনাগাজীতে পাশবিক কায়দায় আগুনে পুড়িয়ে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হাফেজ আবদুল কাদির।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম শরাফ উদ্দিন আহমেদের আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
এ নিয়ে নুসরাত হত্যা মামলায় ৪ আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন।
জবানবন্দিতে কাদির জানিয়েছেন, কারাগার থেকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজদৌল্লার পরামর্শ ও নির্দেশেই নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। গত ২৮ ও ৩০ মার্চ কাদির অধ্যক্ষের সঙ্গে ফেনী কারাগারে দেখা করেন। এরপর ৪ এপ্রিল সকাল ১০টায় ‘অধ্যক্ষ সাহেব মুক্তি পরিষদের’ সভা করা হয় মাদরাসায় কাদিরের রুমে। ওই রাতেই ১০টার দিকে কাদিরের কক্ষে বৈঠকে নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। ওই সভায় কাদির সহ ১২ জন উপস্থিত ছিলেন।
জবানিতে কাদির আরও জানান, পরিকল্পনা মাফিক ৬ এপ্রিল পরীক্ষার আগে তিনি নিজে, নুর উদ্দিন, রানা, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, ইমরানসহ বেশ কয়েকজন মাদরাসার গেটে নজরদারিতে ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি মাদরাসা প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে যান।
কাদিরের জবানবন্দি অনুযায়ী যেভাবে নুসরাতকে হত্যা করা হয়: নুসরাতকে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে ডেকে নেয়া ও ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন দেয়ার ঘটনায় মোট ৫ জন অংশ নেন। সেখানে ৩ পুরুষ ও ২ জন নারী ছিলেন। শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম, জোবায়ের আহমেদ, জাবেদ হোসেন বোরকা পরা ছিলেন। নারীর মধ্যে উম্মে সুলতানা ওরফে পপি (ছদ্মনাম শম্পা) ও কামরুন্নাহার ওরফে মণি ছিলেন।
জবানিতে কাদের আরও জানান, ঘটনার দিন সকাল থেকেই মাদরাসার প্রধান ফটকে পাহাড়ার দায়িত্বে ছিলেন মাদরাসার শিক্ষক আফছার। শামীম ও মহিউদ্দিন শাকিল পাহারায় ছিলেন সাইক্লোন শেল্টারের নিচে।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগ ছাপড়া মসজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে আব্দুল কাদিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতার কাদির সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক।
এদিকে আদালতে আব্দুল কাদিরের জবানবন্দি শেষে পিবিআই চট্টগ্রামের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবাল আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘নুসরাত হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন কাদির। তিনি হত্যাকাণ্ডেও সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।’
এ সময় পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন ওরফে শামীম ও আবদুর রহিম ওরফে শরিফ।
ওই তিনজনও জবানিতে একই ধরনের কথা বলেন বলে জানান হত্যা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আলিম পরীক্ষা চলাকালে মাদরাসা ভবনের ছাদে মুখোশধারী ৪ জন মিলে আগুনে ঝলসে দেয় নুসরাতের শরীর। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় প্রথমে ফেনী সদর হাসপাতালে ও পরে নুসরাতকে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে। ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন নুসরাত।