নিহত আইএস যোদ্ধাদের সন্তানরা ঘরে ফেরার অপেক্ষায়

0
784

খবর ৭১ঃলিবিয়ায় নিহত আইএস যোদ্ধাদের অনাথ শিশুরা অপেক্ষা করে আছে কে তাদের পরিবার-পরিজনের হাতে ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু এনিয়ে সরকারি জটিলতা দুবছরেও কাটেনি।

লিবিয়ার সির্তে শহর থেকে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীকে উৎখাত করা হয়েছে প্রায় দুবছর হল।

কিন্তু এই যুদ্ধের সময় অনেক শিশুকে ফেলে যাওয়া হয়েছিল, যারা আইএস-এর নিহত বিদেশি যোদ্ধাদের সন্তান।

এদের মধ্যে অনেককেই নিজের দেশে আত্মীয়-পরিজনের কাছে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছ।

তবে ২০টি শিশু এখনও পশ্চিমাঞ্চলীয় মিসরাটা শহরে রয়ে গেছে বলে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এসব শিশুর বয়স বয়স দুবছর থেকে ১৪ বছর।

লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে এরা প্রাণে বেঁচেছে ঠিকই। কিন্তু সেই যুদ্ধের ক্ষত রয়ে গেছে তাদের দেহে আর মনে। সারা জীবন এই ক্ষত তাদের বয়ে বেড়াতে হবে।

এই শিশুদের প্রায় সবার দেহে রয়েছে গভীর ক্ষত, পোড়া দাগ, আঘাতের চিহ্ন।

আঘাতের কারণে একটি শিশুর হাত কেটে ফেলা হয়েছে।

তাদের সময় কাটে টিভিতে কার্টুন দেখে, নয়তো গান গেয়ে, নয়তো চোর-পুলিশ খেলে। এর বাইরে তাদের করারও কিছু নেই।

আর এই অবস্থায় তাদের থাকতে হয়েছে গত একটি বছর। এদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখছেন মনোবিজ্ঞানী ফয়সাল।

শিশুদের সঙ্গে মাসের পর মাস দীর্ঘ আলাপ করার পর তিনি এই শিশুদের পরিচয় সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন।

এদের সঙ্গে প্রথম দেখা হওয়ার দিনটির কথা তিনি এখনও মনে করতে পারেন।

ফয়সাল জানান, এই শিশুরা সবসময় প্যানিক অ্যাটাকে ভুগতো। তাদের ঘুম হতো খুবই কম। এরা যখন তখন প্রস্রাব করে ফেলতো। তারা কথা বলতে চাইতো না। তারা একা একা থাকতে চাইতো।

এই আশ্রয় শিবিরে বেশিরভাগ শিশুই মিশরীয়। এদেরই একজন জুমানা।

দশ বছর বয়সী এই মেয়েটি যুদ্ধে তার বাবা-মা আর দুই ভাইয়ের মধ্যে একজনকে হারিয়েছে।

তার ছোট ভাই ইসমাইলকে নিয়ে এখন সে এই শিবিরের বাসিন্দা।

সে জানালো, সব সময় তার বাবা-মার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে মিশরে পরিবারের অন্য সদস্যদের কথা। তার দাদা, দাদির, কাকার কথা।

জুমানাসহ অন্য শিশুরা মাসের পর মাস ধরে লিবিয়ার যুদ্ধে বিধ্বস্ত এলাকায় আটকা পড়ে ছিল।

সেখানে খাবার ও পানির ছিল তীব্র সঙ্কট।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের সমর্থিত বাহিনী যখন আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়ছিল তখন বহু আবাসিক এলাকা ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছিল।

অনেক খোঁজ-খবর করে মিশরে জুমানার পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়।

জুমানার দাদি আজিজা বলেন, তিন বছর আগে যখন আমার ছেলে লিবিয়ায় চলে যায় তারপর থেকে নাতি-নাতনির মুখ দেখতে পাইনি।

‘প্রতিবার যখন আমি গাড়ির হর্ন শুনি, আমার মনে হয় এই বুঝি তারা ফিরে এল। আমার মনে হয় এই বুঝি তারা দরোজায় কড়া নাড়বে,’ বলেন তিনি।

জুমানা, তার ভাই এবং অন্য মিশরীয় শিশুদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চলছে দীর্ঘদিন ধরে।

জুমানার কাকা রামাদান এই নিয়ে বহু দেন দরবার করেছেন।

তিনি জানান, সরকারি প্রক্রিয়া বেশ ধীর।

তিনি বলেন, তারা যদি বলতো শিশুদের ফেরত পেতে আমাকে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে, সেটা বুঝতে পারতাম।

কিন্তু সুনির্দিষ্ট করে তারা কিছু বলছে না। তারা শুধু আইন দেখায়। বলে এটা বাকি, ওটা বাকি।

রামাদান বলেন, আমি চেয়েছিলাম আমি নিজে গাড়ি চালিয়ে লিবিয়া যাব এবং বাচ্চাদের ফেরত আনবো। কিন্তু তারা আমাকে সেই অনুমতিও দিচ্ছে না।

ফলে সরকারি প্রক্রিয়া যতদিন শেষ না হয় ততদিন এই শিশুদের থাকতে হবে রেড ক্রিসেন্টের এই আশ্রয় শিবিরে।

দিন গুণতে হবে কবে তারা আবার মিলিত হবে আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here