খবর৭১:নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন।
রোববার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১২টায় নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এসে সিইসির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন লতিফ সিদ্দিকী। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলেন তিনি।
লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই, আমার কারণে আমার নেতাকর্মীরা মার খাবে তা আমি মেনে নিতে পারবো না। তাই আমি নিজ থেকেই নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছি।’
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানাচ্ছি যে, আমি ১৩৩ টাঙ্গাইল-৪ জাতীয় সংসদ আসনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। কিন্তু পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে নির্বাচন করার পরিবেশ নেই। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় রাজনৈতিক দলে, নেতায় নেতায় জনমতকে পক্ষে পাওয়ার থাকে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। কিন্তু বর্তমান সংসদ সদস্য বালু এবং মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের ছত্রছায়ায় আমার ওপর হামলা করে গাড়ি ভাঙচুর করে, ২০/২১ জন সমর্থক আহত হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। দীর্ঘদিন পুলিশী জুলুমের বিরুদ্ধে লড়েছি, কিন্তু পুলিশ এমন উলঙ্গভাবে কোনো প্রার্থীকে সমর্থন করে নিরীহ মানুষদের হুমকি দেয়, আমার মিছিল বন্ধ করে সংসদ সদস্যের মিছিলে সহযোগিতা করে এমন দেখেনি। পুলিশের অত্যাচারের পরও আন্দোলন করা যায়, পুলিশ বিপক্ষে অবস্থান নিলে নির্বাচন করা যায় না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সংসদ সদস্যের সরাসরি হস্তক্ষেপে, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার উসকানিতে আমার অফিস ভেঙে দিচ্ছে। পরিস্থিতি এহেন অবনতিতে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে। আমি আপনার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে চাই, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে আমি সরে দাঁড়ালাম। আমি অসম্মানিত হই সম্মানিত হওয়ার জন্য।’
গত ১৬ ডিসেম্বর কালিহাতীর গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের সরাতৈল ও বল্লভবাড়িতে নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেনের প্রত্যাহার চেয়ে তিনি ওইদিন দুপুর থেকে টাঙ্গাইল ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান ধর্মঘটে বসেন। প্রতিকার না পেয়ে পরদিন ১৭ ডিসেম্বর সকাল থেকে অবস্থান ধর্মঘটের সাথে আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
অসুস্থ হয়ে পড়লে একইদিন সকালে ডিসি অফিসের সামনে থেকে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেন তিনি।
রোববার (২৩ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশনে যান লতিফ সিদ্দিকী। কমিশন থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের কাছে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান তিনি।
লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং ২০১৪ সালে ডাক তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হন।
সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হজ, মহানবী (সা.) ও তাবলিগ জামায়াত এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে কটূক্তি করায় ব্যাপক সমালোচিত হন লতিফ সিদ্দিকী। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে মোট ২২টি মামলা হয়।
পরে তিনি দেশে এসে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি কেন্দ্রীয় কারাগারের অধীনে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পান।
খবর৭১/জি