নির্বাচনের সুযোগ আছে খালেদা জিয়ার

0
246

খবর৭১: সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারও দুই বছরের অধিক সাজা হলে সাজার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। জিয়া অরফানেজ স্ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। সেই দিক থেকে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটে লড়ার অযোগ্য। তবে সুযোগ থাকছে তার সামনে। সেক্ষেত্রে আপিল করে ভোটে অংশ নিতে পারবেন খালেদা জিয়া।

আইন অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের রায়কে পূর্ণাঙ্গ রায় বলা যাবে না। বেগম জিয়ার আইনজীবীরা এখন বিচারিক আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আপিল আবেদন করতে পারবেন। হাইকোর্ট কিংবা আপিল বিভাগে বিচারিক আদালতের রায় স্থগিত ঘোষণা হলে কিংবা খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়া হলে নির্বাচনে অংশ নিতে তাঁর আর কোনও বাধা থাকবে না।

তবে সর্বোচ্চ আদালতে বিচারিক আদালতের রায় বহাল থাকার পর যদি খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, তখন তাঁর সংসদ সদস্য পদ বাতিল হয়ে যাবে।

এখন বিচারিক আদালতের দেয়া রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার পর খালেদা জিয়া আপিল করতে পারবেন এবং জামিন আবেদনও করতে পারবেন।

সংবিধান ও নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ন্যূনতম দুই বছর দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য হওয়ার ও থাকবার যোগ্যতা হারান যে কেউ। মুক্তি লাভের ৫ বছর পার না হওয়া পর্যন্ত ভোটে অংশ নেওয়া যায় না।

সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে অভিযুক্ত হয়ে কারও দুই বছরের অধিক সাজা হলে সাজার পরবর্তী পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হবেন- এই হল বিধান।

এ রায়ের পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেগম জিয়ার অংশ নেয়ার সুযোগ কতটা আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের দুটি রায় আছে, যেখানে এ ব্যাপারে কিন্তু সুনিশ্চিত বলা হয়েছে আপিল যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই মামলাটা পূর্ণাঙ্গ স্থানে যায়নি সেজন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হননি সেজন্য ইলেকশন করতে পারবেন, আবার আরেকটা রায়ে আছে পারবেন না। এখন উনার (খালেদা) ব্যাপারে আপিল বিভাগ এবং স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা তাদের ব্যাপার।’

এখন কীভাবে চলবে বিএনপি?
বিএনপির গঠনতন্ত্রে দল পরিচালনার একক ক্ষমতা দলীয় চেয়ারপারসনকে দেওয়া হয়েছে। তাঁর অনুপস্থিতিতে এই ক্ষমতা ভোগ করেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু তিনিও ১০ বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। তা ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তারেকের ১০ বছর এবং এর আগে অর্থপাচার মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া পেয়েছেন তিনি। আইনের চোখে এখন তিনি পলাতক। ফলে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কীভাবে চলবে বিএনপি?

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাজা হতে পারে এমন ধারণা থেকেই আগামী কয়েক সপ্তাহ দলের করণীয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তাই আপাতত নতুন কোনও নীতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই বলে মনে করছে দলটির শীর্ষ নেতারা। তবে তারা আশা করছেন খালেদা জিয়া শিগগিরই জামিনে মুক্তি পাবেন। এরপর সবকিছু তাঁর নির্দেশেই পরিচালিত হবে। এই সময়ে তারেক রহমান দূর থেকে মূল দায়িত্ব পালন করবেন। যদিও তার বক্তব্য প্রচারে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আর তাই তারেক রহমান চাইলেও তিনি সরাসরি কিছু করতে পারবেন না। সেজন্য সামনে থেকে এখন মূল দায়িত্বটা মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইমলামকেই পালন করতে হবে।

এদিকে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আগামী সপ্তাহেই আপিল করা হবে বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা এ নিয়ে গোটা দেশে সম্প্রতি গুঞ্জন ওঠে। বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামান রায় ঘোষণা করেন। এতে বিএনপির চেয়ারপারসনকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া তারেক রহমানসহ বাকিদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর পর কড়া নিরাপত্তায় খালেদা জিয়াকে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here