‘নারীর চলার পথ হোক নিরাপদ’

0
917
‘নারীর চলার পথ হোক নিরাপদ’
রহিমা আক্তার মৌ; সাহিত্যিক কলামিস্ট ও প্রাবন্ধিক

খবর৭১ঃ ‘ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ- আসুন, এ অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই’- এটা ২০১৯ সালের আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের পক্ষের স্লোগান। স্লোগানটি মনে করতেই মনে পড়ে যায় আরেকটা কথা। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় মানবাধিকার সম্মেলনে তৎকালীন বিশ্ব পেয়েছিল দুটি প্রত্যয়, নারীর অধিকার মানবাধিকার এবং নারী নির্যাতন মানবাধিকার লঙ্ঘন। ১৯৯৩ সালের সে প্রত্যয়ের অনুসরণে ২০১৯ সালে এসেও বলতে হচ্ছে নারী নির্যাতন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। আর সে অপরাধ যখন বছর ঘুরতেই দ্বিগুণ এর চেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন নতুন করে ভাবতে হচ্ছে নারীর জন্যে নতুন আইনের অথবা নারীর নিরাপত্তার জন্যে নতুন কিছু তৈরির।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৭৩২ জন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ যা ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি। ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮১৮ জন নারী। ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে। আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন নারী। ২০১৯ সালে যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছেন ২৫৮ জন। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৭০ জন। ২০১৯ যৌন হয়রানীর শিকার ১৮ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে চারজন নারীসহ ১৭ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। ২০১৯ সালে যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৬৭ জন নারী। তাদের মধ্যে নির্যাতনে নিহত হন ৯৬ জন এবং আত্মহত্যা করেন তিনজন। আর পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৪২৩ জন নারী। ২০১৯ সালে ২০০ জন নারী তাদের স্বামীর হাতে হত্যার শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৭৩ জন।

১৯৯৩ সালের ২০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের নারী নির্যাতনবিষয়ক ঘোষণায় বলা হয়, নারীর অধিকারগুলো হবে : জীবনের অধিকার, সমতার অধিকার, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার, আইনের দৃষ্টিতে সম-নিরাপত্তার অধিকার, সব ধরনের বৈষম্য থেকে মুক্ত হওয়ার অধিকার, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সেবা লাভের অধিকার, ন্যায্য ও অনুকূল কর্মপরিবেশের অধিকার, কোন ধরনের নির্যাতন অথবা অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ অথবা অধস্তন দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন আচরণ ও শাস্তি না পাওয়ার অধিকার। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূলধারায় নারীকে যুক্ত করার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন নারীর সব ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে মুক্ত হওয়া। অথচ বাস্তবতার সঙ্গে এই ঘোষণার কোন মিল নেই, আছে শুধু হতাশা আর নির্যাতিত পরিবারের হাহাকার।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালে তিন হাজার ৯১৮ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৪২ জন নারী। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৮২ জন। ২০১৭ সালে ৫ হাজার ২৩৫ নারী নির্যাতনের এবং এক হাজার ২৫১ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ২২৪ জন। ২০১৬ সালে চার হাজার ৮৯৬ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়। এর মধ্যে ৮৪০টি ধর্ষণ ও ১৬৬টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা যথাক্রমে চার হাজার ৪৩৬, ৮০৮ ও ১৯৯, ২০১৪ সালে চার হাজার ৬৫৪, ৬৬৬ ও ১৭৪টি। আর মাস অনুযায়ী তথ্য মতে, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এর সংখ্যা যথাক্রমে ৪৩১ ও ৮৯। (তথ্যসূত্র : দৈনিক ভোরের কাগজ; ২৮ জানুয়ারি ২০১৯)

নারীর প্রতি দিনদিন সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং মানবাধিকার নেত্রী সুলতানা কামাল বলেন, ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার কারণ বিচারহীনতা। ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটে তার একটি অংশ জানা যায় না। এ বিষয়ে কোন মামলা হয় না। আর যেগুলোর মামলা হয় বিশেষ করে ধর্ষণের ক্ষেত্রে সেখানে শতকরা মাত্র তিন ভাগ ঘটনায় শেষ পর্যন্ত অপরাধী শাস্তি পায়। আর ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় শাস্তি হয় মাত্র শূন্য দশমিক তিন ভাগ। তাহলে বোঝা যাচ্ছে এ ধরনের কোন ঘটনায় বিচার হয় না। যারা ধর্ষক তারা ধর্ষণের শিকার নারীর চেয়ে শক্তিশালী। অন্যদিক বাদ দিলেও লৈঙ্গিকভাবে পুরুষ শক্তিশালী। তারা সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবেও শক্তিশালী। নারীদের সামাজিকভাবে সুরক্ষা দেয়ার রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্র তা পালন করছে না। আর নারীদের বাইরে বের হওয়া কিংবা কাজে যাওয়ার বিষয়গুলোকে সমাজে এখনও ভালো চোখে দেখা হয় না। নারীর বাইরে বের হওয়াকে পুরুষের ক্ষমতা খর্ব হওয়া হিসেবে দেখা হয়। আর প্রতিদিন নানা জায়গায় নারীর বিরুদ্ধে কথা বলা হয় কিন্তু সরকার ব্যবস্থা নেয় না। ফলে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে।’

২০১৯ সালের জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সংঘটিত নির্যাতনের তিন হাজার ৪৪৩টি ঘটনার মধ্যে ধর্ষণ এক হাজার ৪১টি, গণধর্ষণ ১৭৮টি, ধর্ষণের চেষ্টা ১৯৫টি, যৌন নিপীড়ন ১৪০টি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মোট এক হাজার ৫৫৪ ধর্ষণসংশ্লিষ্ট নির্যাতন বিশ্লেষণ করেছে, যেখানে দেখা যায় প্রায় ৫০ শতাংশ নারী ধর্ষণের মতো বর্বর পশুত্বপূর্ণ নির্যাতনের শিকার। নারীর প্রতি সহিংসতার এ চিত্রগুলো যে কত ভয়াবহ তা ভাবতেই বাবার একটা কথা মনে পড়ে যায়। ১৯৭৪ সালে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে স্বাধীন দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। মুলতো তারা ঘুরে দাঁড়ানো দেশটার মেরুদ- আবার ভাঙতেই এই কৃত্রিম খাদ্য সংকট তৈরি করে। সেনাবাহিনীতে যারা চাকরি করত তারা চাইলেই সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা করতে পারত না। বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন, তখন স্বাধীন বাংলার সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাবা ছুটি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন, বঙ্গবন্ধুকে বলেন-

‘কৃত্রিম সংকটে মানুষের কষ্ট আর দেখতে পারছি না। অন্তত ১৫ জেলায় ১৫টা লাশ ফেলার হুকুম করেন আপনি। লাশগুলো ঝুলিয়ে রেখে বুকে লিখে দেয়া হোক যে ইচ্ছে কৃতভাবে খাদ্য সংকট করার কারণে এ শাস্তি দেয়া হলো। দেখবেন অভাব দূর হয়ে যাবে।’

আজ ২০২০ সালের প্রারম্ভে এসে বলতে ইচ্ছে করে, নারী নির্যাতন বা ধর্ষণের মত ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের থেকে অন্তত কুড়িটি ঘটনার আসামিকে জনতার সামনে গুলি করে ঝুলিয়ে রাখার হুকুম করা হোক। শুধু ঝুলিয়ে নয় তাদের বুকে লিখে দেয়া হোক যে ‘নারী নির্যাতন বা নারীকে ধর্ষণের জন্যে এই শান্তি’। তাহলে কিছু হলেও কমে আসবে নির্যাতন। ২০২০ সালের প্রথম সাপ্তাহের ঘটনায় এই লেখা লিখতে বসা, অথচ আজ ১১ জানুয়ারি ঢাকায় আরও দুই ঘটনা। ১২ বছরের শিশুকে গণধর্ষণ আর সাভার ধামরাই এ বাসে পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণ করার পর হত্যা করে। ড্রাইভারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এখানে তো কোন সাক্ষী বা রিমান্ডের প্রয়োজন নেই। সোজা গুলি করার হুকুম দেয়া হোক।

২০১৭ সালে শুধুমাত্র গণপরিবহনে ১৩ মাসে ২১ নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপা খাতুনকে নিশ্চই আমরা ভুলে গেছি। ভুলে গেছি বলেই ২০২০ সালের প্রথমে ঘটল ন্যক্কারজনক এমন ঘটনা। ১৪টি কর্মদিবসে এই চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ও হত্যার মামলার রায়ে চারজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। কিন্তু রায় কার্যকর হয়নি এখনও। আইন যেমন আছে তেমনি আছে আইনের ফাঁক। এ ফাঁকের কারণে অপরাধী ছাড়া পায়, ছাড়া পেয়ে আবার একই অপরাধে জরিয়ে পরে।

দিনদিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে নারীর জীবনযাত্রা। দিনে দিনে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ঘরে বাইরে নারীর নিরাপত্তা। নারীর জীবনমান এবং সমাজ, গোষ্ঠী ও পরিবারে নারীর ক্ষমতায়ন, নিরাপত্তা সূচকসহ বিভিন্ন সূচক বিবেচনায় দেখা যায়, ৬৯ দশমিক ৯ শতাংশ নারী নিজ এলাকায় নিরাপদ বোধ করেন, যা আগের তালিকায় ছিল ৮০ শতাংশ। বিশ্বের ৬০ শহরের নিরাপদ শহরগুলোর তালিকায় ঢাকার অবস্থান ৫৬তম। যা ২০১৭ সালে ৪৩তম অবস্থানে ছিল। যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যবিষয়ক সাময়িকী ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর গবেষণা শাখা দ্য ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) ‘নিরাপদ শহর সূচক-২০১৯’ প্রকাশ করে।

যখনিই এমন কোন ঘটনার জন্ম হয়, প্রতিটা পর্যায় থেকে নানা ধরনের হুঁশিয়ারি আসে, আসে প্রতিশ্রুতি। কিন্তু ফলাফলের কোন উন্নতি নেই, তার প্রমাণ বিগত বছরগুলো থেকে বর্তমান সময়। পরিবার, সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্র, ব্যক্তির মনুষত্ব ইত্যাদির কথা বলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও মনে করি বিচারহীনতার কারণে ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে নারীদের একাকী ভ্রমণের ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাসে যাত্রী কম হলে সতর্ক থাকা, অধিক যাত্রীসংবলিত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা, গাড়িতে না ঘুমানো, বাসে বসে পরিবারের কাউকে ফোন করে উচ্চস্বরে নিজের অবস্থান জানিয়ে রাখা, গন্তব্যে যাওয়ার আগেই যাত্রীরা নেমে গেলে সেখানেই নেমে গিয়ে পরিবারের কাউকে ফোন করে এসে নিয়ে যেতে বলা, বাসা থেকে লোক না আসা পর্যন্ত প্রয়োজনে যাত্রীদের মধ্য থেকে কাউকে নির্ভরযোগ্য মনে হলে তাকে সেখানে থাকার জন্য অনুরোধ করা, গাড়ির ভেতরে কেউ অকারণে দরজা জানালা বন্ধ করতে চাইলে এবং অনিরাপদ বোধ করলে জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

এগুলো নির্দেশনা, কিন্তু নারীর নিরাপত্তায় আমাদের উন্নতি দেখা যায় না। নারীরা এখন ঘরের কাজের পাশাপাশি বাইরের কাজেও অনেক এগিয়ে এসেছেন, কিন্তু চলার পথ আর কর্মস্থলের জায়গাটা ওদের জন্যে সহজ হয়নি আজো। টকশো, আলোচনা সমালোচনায় বারবার বলা হয় নারী নেতৃত্বে দেশ চলে, নারীর ক্ষমতায়ন দেশে অথচ নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না। ২০১৮ সালের চেয়ে ২০১৯ সালে নারী নির্যাতন হয়েছে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। নারী কেন্দ্রিক মামলাগুলো ঝুলে আছে দিনের পর দিন। এই বিষয়ে সাবেক পুলিশ পরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে বিচারকার্য চলতে থাকায় একপর্যায়ে ধীর গতিতে চলতে চলতে নিরব হয়ে যায় ঘটনা। যার কারণেই নারীর প্রতি সহিংসতা কমছে না’। তাহলে প্রশ্ন আবার, ‘নারী নির্যাতনের বিচার কেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হচ্ছে না’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অপরাধ বিজ্ঞানের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনের মতে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে শক্ত আইন আছে। ‘কিন্তু শাস্তি দিয়ে খুব বেশি অপরাধ কমানো যায় না। আর এটা ধর্ষণ এবং ধর্ষণের পর হত্যার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমাদের এখানে সমাজের ভেতরে অসংখ্য উপাদান আছে যা ধর্ষণ বা নারীর প্রতি সহিংসতাকে উসকে দেয়। আমাদের সমাজে এখনও নারীকে ভোগের সামগ্রী মনে করা হয়। তাকে সেভাবে উপস্থাপনও করা হয় বিভিন্ন মাধ্যমে। ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা এবং সাক্ষ্য আইনে নানা সমস্যা রয়েছে। আছে ধর্ষণের শিকার একজন নারীর চরিত্র হননের সুযোগ। কিন্তু একজন যৌনকর্মীর সঙ্গেও তো তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। করা হলে সেটা ধর্ষণ হবে। এখানে অভিযোগ থানায় জানাতে গিয়েও ধর্ষণের শিকার হয়। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষা না করলে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে যায়। আদালতে তাকে অনেক বিব্রতকর প্রশ্ন করা হয়। ফলে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে।’

বর্তমান বাংলাদেশের নারী নির্যাতনের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শ্রেণী, বয়স, পেশা, সামাজিক অবস্থানের তারতম্য থাকলেও সে যে নারী এটাই তার প্রধান পরিচয় এবং এ কারণে তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। চার বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থেকে শ্রমিক এমন কি কর্মজীবী নারী কেউ নিরাপদ নয়। কোথাও নেই তাদের নিরাপত্তা, এমন কি ঘর থেকে বাইরে রাস্তা বা যানবাহনে। শিশুরা অনিরাপদ সব খানে, তবে অধিকাংশ শিশু প্রাথমিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয় তাদের ঘরে বা নিজের আত্মীয়-স্বজনদের কাছেই। কারণ আমরা পরিবারের লোকদের অবিশ্বাস করতে পারি না, করলেও তা সরাসরি বলতে পারি না। কর্মজীবী মায়েদের সংখ্যা বাড়ছে, নারী একদিকে নিজে বাইরে থাকছে অনিরাপদ অন্য দিকে পরিবারে সন্তানরাও নিরাপত্তাহীনতার ভোগে। আইনের যথাযথ ব্যবহারের পাশাপাশি আমাদের মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টি না হলে সমাজ থেকে নারী নির্যাতনের বিষফোঁড়া উপড়ে ফেলা যাবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here