বৈঠকে মিয়ানমার, নাগরিকত্ব ছাড়া ফিরতে নারাজ রোহিঙ্গারা

0
837
বৈঠকে মিয়ানমার, নাগরিকত্ব ছাড়া ফিরতে নারাজ রোহিঙ্গারা
ছবিঃ সংগৃহীত

খবর৭১ঃ রোহিঙ্গা ক্যাপ পরিদর্শন করেছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল। শনিবার দুপুরে কক্সবাজারের কুতুপালংস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা মিয়ানমারের উচ্চপর্যায়ের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল পরিদর্শন শেষে উখিয়ার কুতুপালংস্থ এক্সটেনশন ক্যাম্প-৪-এ মিটিং করে। পরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন।

এ সময় রোহিঙ্গারা তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন এবং মিয়ানমারে ফিরে যেতে পূর্ণ নাগরিকতার দাবি জানান। পাশাপাশি পূর্ণ নাগরিকত্ব ছাড়া রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরবে না বলেও জানিয়ে দেন।

পরে প্রতিনিধিদলটি কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত না জানিয়ে রোববার পুনরায় পরিদর্শন ও মিটিং করার কথা বলে ক্যাম্প থেকে হোটেল কক্ষে চলে যান।

সূত্রমতে, মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি সকাল ১০টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।

পরে সেখান থেকে পর্যটন এলাকার পাতুরে বিচ ইনানীর সৈকতস্থ হোটেল রয়েল টিউলিপে যান। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে দুপুর ১টার দিকে প্রতিনিধিদলটি উখিয়ার কুতুপালংস্থ পার্শ্ববর্তী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে এক্সটেনশন ক্যাম্প-৪-এ মিটিং করে।

এদিকে একই সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আহা সেন্টারের একটি প্রতিনিধিদলও রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, দুপুর ১টার দিকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল উখিয়ার ক্যাম্প এক্সটেনশন-৪-এ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। বিকালে আহা সেন্টারের প্রতিনিধিদলটি রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন এবং সন্ধ্যায় রয়েল টিউলিপে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রোববার (সকালে আবারও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের।

এ ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন, জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তার সঙ্গে মিটিংয়ে রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানান।

তবে তারা এই বিষয়ে নিজেদের পক্ষ থেকে কিছুই বলেনি। দুদিনের সফরে আহা সেন্টার ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরাতে আলোচনার মাধ্যমে বোঝানো হবে বলেও জানান।

পাশাপাশি মিয়ানমার সরকার তাদের জন্য যে সব কাজ করছে, সেগুলো তুলে ধরবে ও শরণার্থীদের সর্বশেষ পরিস্থিতি ঘুরে দেখবে বলেও যোগ করেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার।

২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর রাখাইন রাজ্যে চলা হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গা। এ সব রোহিঙ্গা অবস্থান করছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ পাহাড়ে ৩৪টি শরণার্থী ক্যাম্পে।

এসব রোহিঙ্গাদের ফেরাতে শরণার্থী প্রত্যাবর্তনে এর আগে দ্বিপক্ষীয় একটি চুক্তিতে সই করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। সব ধরনের প্রস্তুতির পরও মিয়ানমার রহস্যজনক কারণে চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেনি।

পরে জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করলেও চীনের রহস্যজনক ভূমিকায় সমস্যা আলোর মুখ দেখেনি।

তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিন দেখে তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো মিয়ানমার এই প্রতিনিধিদলের আগমণ বলে ধারণ করা হচ্ছে।

এদিকে শনিবার সকালে বিমানের একটি ফ্লাইটে প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। বিমানবন্দরে প্রতিনিধি দলকে গ্রহণ করেন কক্সবাজার ত্রাণ প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দৌজা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএম সরওয়ার কামালসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here