দূর্বা ঘাস ও দুরমুজের নামে ৪১কোটি টাকা লুটপাট

0
933

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জে এবারও হাওড় রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়য়ের অভিযোগ উঠেছে পিআইসিদের বিরোদ্ধে। নিম্নমানের কাজেই নয় অপ্রয়োজনীয় বাঁধ তাও আবার বেশীর ভাগ বালি দিয়ে তৈরী। বাঁধের মাটিতে দুরমুজ করা ও দূর্বা ঘাস দেবার নির্দেশনা থাকলেও পিআইসির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা দেয়নি। বরাদ্দকৃত ৪১কোটি টাকা নিজেদের পকেটে নেয়ার জন্য নানা টালবাহান করছে। এছাড়াও নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের মাটি বাঁধের ৫০মিটার দূর থেকে না নেওয়া এবং কমপেকশন না হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন,জেলার বিভিন্ন হাওরপাড়ের কৃষক ও স্থানীয় লোকজন। এবার হাওরে বাঁধে নির্মান কাজে কৃষক ও খেটে খাওয়া মানুষকে আশ্বস্ত করতে না পারলেও বিশাল অংকের টাকার এ যোগানে কপাল খোলেছে আর পকেট ভারী করেছে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় পিআইসিগন।
জানাযায়,এবারও সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ না করে যন্ত্রদানব দিয়ে বাঁধের গোঁড়া থেকে নিজেদের মনগড়া কাজ করে বাঁধে দুরমুজ না করে বাঁধকে হুমকির মুখে ফেলেছে পিআইসিরা।জেলার তাহিরপুর,শাল্লা,জামালগঞ্জ,দিরাই,ধর্মপাশা,ছাতক,দোয়রাবাজার,বিশ্বম্ভরপুরসহ ১১টি উপজেলার হাওর রক্ষা বাঁধেই সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দুরমুজসহ সকল নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করার জন্য প্রথমে গত ৭জানুয়ারি,পরে ৩০জানুয়ারি ও সর্বশেষ ১৯জানুয়ারী জেলার সকল উপজেলার ইউএনও ও পাউবো-প্রকৌশলীকে চিঠি দেন। হাওড় রক্ষা বাঁধ নির্মাণে পাউবোর নীতিমালা অনুযায়ী সব বাঁধেই মাটিতে দুরমুজ করা ও দূর্বা ঘাস দেবার নিয়ম নির্দেশনা রয়েছে। অথচ বাধঁ নির্মানে এবার দ্বিগুণ বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। তার পরও কাজ নাম মাত্র কাজ করেই শেষ করছে আর টাকা উত্তোলনের জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছে পিআইসিরা।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে,জেলার ৯৬৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট বরাদ্দ ১৭৭ কোটি টাকা। এতিমধ্যে ইউএনওদের ব্যাংক হিসাবে ১২২কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে পানি উন্নয়ন মন্ত্রনালয়। জেলার আবাদ জমির পরিমান ২লাখ ৭৬হাজার ৪শত ৪৭হেক্টর। এবার ২লাখ,২১হাজার৭৫০হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। আর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্র ১২লাখ ১৯হাজার ৪১৪মেট্রিকটন ধান। যার মূল্য ২হাজার ৯২৪কোটি ৬৭লাখ ৩৬হাজার টাকা(গত বছর প্রতি মন ৯৬০ধরে প্রতি মেট্রিকটন ধান সরকার ২৪হাজার টাকায় ক্রয় করে)। জেলায় ৩লাখ ২৫হাজার কৃষি পরিবার রয়েছে। প্রাক্কলনে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে ৭কেজি ওজনের লোহার হাতুড়ি দিয়ে বাঁধের মাটি দুরমুজ করতে হবে। প্রতি ৬ইঞ্চি মাটি ফেলার পরপর হাতুড়ি দিয়ে কমপেকশন করার নিয়ম। কিন্তু কোন বাঁধেই পাউবোর নিয়ম অনুযায়ী কমপেকশন হচ্ছে না। বাঁধে দূর্ব ঘাস দেবার কথা থাকলেও কেউ দিচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী মাটি দুরমুজের জন্য প্রতি ঘনমিটারে ৩৭.৫২টাকা বরাদ্দ রয়েছে। দূর্বা ঘাস দেবার নিয়ম থাকলেও জেলার একটি বাঁধেও কাজ হয়নি। বাঁধে ৭৫লাখ ঘনমিটার মাটির দুরমুজ খাতের ২০ভাগ বরাদ্দ (২৪কোটি টাকা)। এবং বাঁধের দুই পাশেই দূর্বা ঘাস দেবার জন্য বরাদ্ধ রয়েছে ১০-১২ভাগ (১৭কোটি টাকা)। বাঁধ নির্মাণে পৃথক পৃথক ভাবে বরাদ্দ থাকলেও জেলার ১১টি উপজেলার কোনো বাঁধেই দুরমুজ করা হচ্ছে না। হাওরের নীতিমালা পরির্বতন ও টাকার বরাদ্ধ বেশী দিলেও সংশ্লিষ্ট অনেকের নেতিবাচক কর্মকান্ডের কারনে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে লাখ লাখ কৃষক। জেলায় নির্মানাধীন হাওর রক্ষা বাঁধ গুলো বর্তমানে যে অবস্থা তাতে বন্যা হলে কৃষকের ফসল প্রকৃত অর্থে সুরক্ষা দেওয়া যাবে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জেলার ৯৬৪টি প্রকল্পের ৬০-৭০ভাগ কাজ হয়েছে বলে দাবী করলেও বাস্থবের সাথে কোন মিল নেই। তাহিরপুর উপজেলার হাওর পাড়ের কৃষক শফিকুল,রশিদ,সাদেকসহ আরো অনেকেই জানায়,জেলার ২৮শে ফ্রেরুয়ারীর মধ্যে সকল বাঁধে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও অনেক বাঁধে কাজ শুরু করেছে ২৮ফ্রেরুয়ারীর পর। এছাড়াও যন্ত্রদানব (এক্সেভেটর) বা ট্রাক দিয়ে একসাথে ৬ইঞ্চি করে মাটি ফেলার নিয়ম থাকলেও এক সাথেই অন্তত ৪-৫ফুট উঁচু করে মাটি ফেলা হচ্ছে। এক সাথে অধিক মাটি ফেলায় কমপেকশন (দুরমুজ) করার কোন সুযোগই থাকছে না। এরপর এই মাটির উপর ট্রাক বা এক্সেভেটর চালানো হচ্ছে। পিআইসির সভাপতিদের দাবি বাঁধে মাটি ফেলার পর এক্সেভেটর চলাচল করায় দুরমুজের কোনো প্রয়োজন হয় না। তবে পিআইসির সভাপতিদের এসব দাবি মানতে নারাজ পাউবো কর্তৃপক্ষ। বাঁধে সঠিক ভাবে কমপেকশন করার জন্য সকল কাবিটা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদস্য সচিব পাউবোর শাখা কর্মকর্তাদের চিঠি দিলেও কার্যকর ফল পাওয়া যায় নি। বাঁধের প্রকৃত অবস্থা দেখেই বিল প্রদান করার দাবী জানাই। সংবাদকর্মী বিপ্লব রায় জানান,শাল্লা উপজেলায় যেখানে বাঁধের প্রয়োজন নেই সেখানে বাঁধ নির্মানের নামে প্রকল্প বরাদ্ধ দিয়ে পুকুর চুরি করছে। বাঁেধ দুরমুজ সহ সঠিক ভাবে কোন কাজ না করায় এসব অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় আমার উপর হামলা চালিয়ে আমাকে আহত করে পিআইসি ও সাধারন সম্পাদকরা। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান,আমি জেলার বিভিন্ন হাওরের বাঁধ পরির্দশন করেছে দেখেছি বেশীর ভাগ বাঁেধ দুরমুজ করা হয় নি। ফলে বাঁধ গুলো দূর্ভল রয়েছে। আর দুর্বা ঘাস কোন বাঁেধই দেওয়া হয় নি। কিন্তু এ দুটি খাতে অর্থ বরাদ্ধ রয়েছে। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন,নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের দুরমুজ করা ও দূর্বা ঘাস হচ্ছে না। এ বিষয়ে বার বার কাবিটা উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবকে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তারপরও সঠিক ভাবে নীতিমালা অনুসরণ হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বাঁধের প্রকৃত অবস্থা দেখেই বিল প্রদান করা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here