দেশে পর্যাপ্ত পশু আছে সহনীয় থাকবে দাম

0
218

খবর ৭১ঃদশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সে লক্ষ্যে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে। আগস্টের শেষ দিকে উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা।

নির্বাচনপূর্ব খুব কাছাকাছি সময়ে এ উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সংসদ সদস্য পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ কারণে এবার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পশু কোরবানির সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে পর্যাপ্ত পশু পালন করায় পশু সংকটের কোনো শঙ্কা নেই। বরং ভারত, মিয়ানমার ও ভুটান থেকে পশু আসা অব্যাহত থাকায় দেশের খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এবার ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া ৭১ লাখ। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ২২ হাজার।

আর এ বছর কোরবানিযোগ্য হৃষ্টপুষ্ট গরু-মহিষ রয়েছে ২৯ লাখ ২০ হাজার, ছাগল-ভেড়া ১৮ লাখ ২৬ হাজার।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০১৬ সালে দেশে সব ধরনের পশু মিলিয়ে কোরবানির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩ লাখ। ২০১৭ সালে পশু কোরবানি হয় ১ কোটি ৫ লাখ। সে হিসাব অনুযায়ী এবার ৫ বা ১০ ভাগ কোরবানি বেশি হলেও ১ কোটি ১৬ লাখ পশু যথেষ্ট।

ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের এক মনোনয়নপ্রতাশী বলেন, রাজনীতি করার কারণে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রাখতে হয়। এ কারণে বিভিন্ন উৎসবে আমরা অবস্থান ধরে রাখতে কর্মী-সমর্থকদের খুশি রাখার চেষ্টা করি। এবার তো ঈদের কয়েক মাস পরেই জাতীয় নির্বাচন। আমরা যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই, তাদের তো নিজের জন্য কিছু করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য মহল্লায় মহল্লায় কোরবানি দিয়ে নেতাকর্মী ও অসহায়-দুস্থদের মাঝে মাংস বিতরণ করা হবে। এটা অন্যান্যবারও করা হয়, তবে এবার কিছুটা বেশি হবে।

ঢাকা-২ আসনের সম্ভাব্য এক সংসদ সদস্য প্রার্থী বলেন, সামাজিক কাজের অংশ হিসেবে প্রতিটি উৎসবে আমি নেতাকর্মী ও দুস্থদের সহযোগিতা করে থাকি। এবারও ব্যতিক্রম হবে না। তিনি বলেন, ঈদে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চাঙ্গা রাখতে কোরবানির মাংস বিতরণ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি রাজনৈতিক কৌশল। আর এবার তো ঈদের কিছু সময় পরেই জাতীয় নির্বাচন। কাজেই সবাই চাইবে অন্যবারের চেয়ে বেশি পশু কোরবানি দিতে।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, এবারের কোরবানিতে পশুর চাহিদা যতই হোক না কেন, তাতে পশু সংকট তৈরি করবে না। কেননা, দেশের খামারগুলোতে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। এছাড়া ভারত থেকে প্রচুর গরু আসছে। মিয়ানমার থেকেও কিছু গরু আসে। এ কারণে এবারের কোরবানিতে পশুর দামও সহনীয় থাকবে। বরং আমার কাছে মনে হচ্ছে, ভারত থেকে গরু আসার পরিমাণ এখনকার মতো থাকলে দেশের খামারিরা পশুর ন্যায্য দাম থেকেও বঞ্চিত হবেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে এবার ঈদুল আজহা হওয়াতে পশু কোরবানি কিছুটা বেশি হবে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের ধারণা, সেটা ৫ ভাগের বেশি হয় না। এবার যদি এর চেয়ে কিছুটা বেশিও হয়, তবু পশুর কোনো সংকট হবে না। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ কোরবানি উপযোগী পশু রয়েছে।

হীরেশ রঞ্জন আরও বলেন, ২০১৬ ও ১৭ সালে পশু কোরবানির হিসাব বিবেচনায় এবার সর্বোচ্চ হলে ১ কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হবে। সেটা হলেও অতিরিক্ত থাকবে অনেক কোরবানি উপযোগী পশু। সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখন দেশীয় খামার ও বাসাবাড়িতে কোরবানি উপযোগী পশুর সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখ।

পুরান ঢাকার হাজারীবাগের কোম্পানীঘাটের বাসিন্দা পশু ব্যবসায়ী মো. সাফায়েত হোসেন বলেন, এবার পশু কোরবানির সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়বে। এক্ষেত্রে মজুদ ঠিক না থাকলে দাম বাড়ার কথা। কিন্তু বাজারের বর্তমান ধারাবাহিকতা থাকলে পশু সংকট তৈরি হবে না। আর ভারত, ভুটান বা আশপাশের দেশগুলো থেকে গরু আসা অব্যাহত থাকলে উল্টো দেশের খামারিরা ন্যায্য দাম পাবেন না।

গাবতলী হাটের পশু ব্যবসায়ী আবদুুস সালাম রোববার বলেন, দেশের খামারগুলোতে পর্যাপ্ত গরু-ছাগল-মহিষ রয়েছে। চাহিদার তুলনায় সেটা যথেষ্ট। এর ওপর চোরাচালানে ভারত থেকে গরু আসা তো প্রায় বৈধতাই পেয়ে গেছে। এ কারণে আমরা ভারত বা পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশ থেকে গরু আমদানি বন্ধ রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, তা না হলে দেশের খামারিদের পুঁজি হারানোর আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২১ বা ২২ আগস্ট দেশে ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে পারে। ঈদ উদযাপনে সরকারও বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছে। ১১ সিটি কর্পোরেশন, ৩২৭ পৌরসভা, ৬৪ জেলা পরিষদ ও ডিসি অফিসের মাধ্যমে অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট ইজারা দেয়া হচ্ছে।

রোববার প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোরবানির পশুর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রতিটি ছোট হাটে একটি এবং বড় হাটে দুটি করে এবং ঢাকার গাবতলী হাটে চারটি মেডিকেল টিম থাকবে। গত বছর সারা দেশে ২ হাজার ৩৬২টি কোরবানির হাটে ১ হাজার ১৯৩টি মেডিকেল টিম কাজ করে। গবাদিপশুর খামারগুলোতে ‘স্বাস্থ্যহানিকর রাসায়নিক দ্রব্যের’ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here