দেশি-বিদেশি কিছু এনজিওর প্রভাবে রোহিঙ্গারা ফিরতে অনাগ্রহীঃ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

0
442
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত চার কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার
বালুখালী রোহিঙ্গারা ক্যাম্প। ছবিঃ খবর৭১

খবর৭১ঃ

রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় কর্মরত দেশি-বিদেশি কিছু বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কারণে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরতে আগ্রহী হচ্ছে না বলে সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যার কারণে কমিটি রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা এনজিওদের কার্যক্রম মনিটরিং করে কারা প্রভাব খাটাচ্ছে তা চিহ্নিত করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের প্রথম দিনে কেউ ফিরতে রাজি না হলেও সংসদীয় কমিটি তাদের রাজি করানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখারও পরামর্শ দিয়েছে।

এ ক্ষেত্রে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য রোহিঙ্গা নেতাদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দলকে আগে পাঠানোর সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ সব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, কিছু কিছু এনজিও রোহিঙ্গাদের বোঝাচ্ছে তারা যেন নিজ দেশে না যায়। এনজিওরা বোঝাচ্ছে নাগরিকত্বসহ কিছু শর্ত পূরণ না হলে যেন তারা না ফিরে যায়। যার কারণে আমরা এসব এনজিও’র কাজ মনিটরিং করে তাদের চিহ্নিত করতে বলেছি। ফারুক খান বলেন, প্রথম দিনে (২২ আগস্ট) ২০০ থেকে ৩০০ জন ফিরে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু মিয়ানমারের পক্ষ থেকে ফেরত নিতে রাজি হওয়ার তালিকায় ৩ হাজার ৪৫০ জনের নাম রয়েছে। বাকিদের ফেরানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে দেশে ফেরার বিষয়ে আস্থা ফিরে পায় সে জন্য তাদের নেতাদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধি দল আগে পাঠানো যেতে পারে বলে সংসদীয় কমিটি মনে করে। কারণ মিয়ানমারেও জাতিসংঘের অফিস আছে। এখানকার মতই ওপাশেও চীনের প্রতিনিধি দলের সদস্য রয়েছেন। তারাও সেখানে কাজ করুক। মানবিক কারণে তাদের বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। এর মানে এই নয়, তারা আমাদের জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করবে। তারা যাতে দেশে ফিরতে ভরসা পায় সে জন্য তাদের নেতাদের প্রতিনিধি দলকে মিয়ানমার ঘুরিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে।

দেশি-বিদেশি কিছু এনজিওর প্রভাবে রোহিঙ্গারা ফিরতে অনাগ্রহী
বালুখালী রোহিঙ্গারা ক্যাম্প। ছবিঃ খবর৭১

এদিকে বৈঠক সূত্র জানায়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ‘সেফ জোন’ সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য স্থায়ী কমিটির সদস্যগণকে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম সফরের জন্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে অবৈধ মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত বিদেশে অবস্থানরত চিহ্নিত বাংলাদেশি দালালচক্র দেশে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনারও সুপারিশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দূতাবাসে ভিসা পেতে বাংলাদেশি নাগরিক বিশেষ করে সিনিয়র নাগরিকদের হয়রানি রোধে মন্ত্রণালয়কে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলেছে সংসদীয় কমিটি।

বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য বর্তমান অর্থবছরে বাজেট বৃদ্ধি পাওয়ায় কমিটির পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করা হয় এবং বরাদ্দকৃত বাজেট যাতে সফল ও যথাযথভাবে ব্যয় করা হয় ও ফেরৎ না যায় সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, আব্দুল মজিদ খান, কাজী নাবিল আহমেদ এবং নিজাম উদ্দিন জলিল (জন) প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here