দেখা মেলা ভার বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা

0
522

সুলতান আহমেদ, মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই,কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই! আমি থাকি মহা সুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে। বাবুই হাসিয়া কয়; সন্দেহ কি তায় ! কষ্ট পাই তবু থাকি নিজেরই বাসায়। পাক হোক তবু ভাই পরের বাসা, নিচ জাকে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা। মানুষকে মানবিকভাবে জাগ্রত করার জন্য কবি রজনীকান্ত সেন এ কবিতাটি রচনা করেন। তার এ কালজয়ী কবিতাটি এখনো মানুষের মুখে মুখে। বাবুই পাখিকে নিয়ে কবির ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতাটি আজো মানুষ উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করলেও হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও বাবুই পাখির বাসা। বাবুই পাখির বাসা আজ অনেকটা স্মৃতির অন্তরালে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অথচ আজ থেকে প্রায় ১৫/২০ বছর আগেও গ্রাম-গঞ্জে তাল, নারকেল ও সুপারি গাছে দেখা যেত বাবুই পাখির নিপুণ কারুকার্যে তৈরি দৃষ্টিনন্দন বাসা।

বাবুই পাখি সাধারণত তাল, খেজুর, নারকেল ও আখ ক্ষেতে বাসা বাঁধে। এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগায় এবং স্বাবলম্বী হতে উৎসাহিত করে। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ এ পাখিটি আমরা হারাতে বসেছি। গাছের ঝুড়ির মতো চমৎকার বাসা বুনে বাস করায় এ পাখির পরিচিতি জগৎ জোড়া। খড়, তাল গাছের কচি পাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতা-পাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার বাসা তৈরি করে বাবুই পাখি। সেই বাসা যেমন আকর্ষণীয় তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়েও তাদের বাসা ভেঙ্গে পড়ে না। বাবুই পাখির শক্ত বুননে এ বাসা টেনেও ছেঁড়া যায় না। এ জন্য অনেকেই একে তাঁতি পাখি বলে ডেকে থাকেন। ধান, চাল, গম ও পোকা-মাকড় প্রভৃতি তাদের প্রধান খাবার।
মান্দা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এখন আর আগের মত বাবুই পাখির নিপুণ কারুকার্যে তৈরি দৃষ্টিনন্দন বাসা চোখে পড়ে না বললেই চলে। একসময় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের তাল, নারিকেল গাছে দেখা যেত বাবুই পাখির বাসা। বর্তমানে তালগাছসহ বিভিন্ন গাছ নির্বিচারে নিধন করা হচ্ছে। আর সেকারনে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক বাসা। এছাড়া এক শ্রেণির লোভী মানুষ অর্থের লোভে বাবুই পাখির বাসা সংগ্রহ করে ধনীদের নিকট বিক্রয় করছে। এই বাবুই পাখির বাসা শোভা পাচ্ছে ধনীদের ড্রইং রুমে। বাবুই পাখির এ শৈল্পিক নিদর্শনকে টিকিয়ে রাখার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার বলে জানিয়েছেন পাখিপ্রেমী সচেতনমহল।
উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়া গ্রামের মোহসিন আলী আকন্দ’র বাড়ির উঠানে একটি নারিকেল গাছে দেখা মিললো কাঙ্খিত বাবুই পাখির বাসা। বাতাসে দোল খাচ্ছে বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা। তিনি জানালেন, প্রতি বছর চৈত্র-বৈশাখ মাসে আমাদের গ্রামে বাবুই পাখি এসে নারিকেল, তাল, খেজুর গাছে বাসা তৈরী করে। মাঝেমধ্যে এ গ্রামে অনেকে বেড়াতে এসে তাকিয়ে থাকেন বাবুই পাখির বাসা ও বাবুই পাখির দিকে। মোবাইল ক্যামেরা বা বড় ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলেন, ভিডিও করেন। আমরা নিজেরাও চেষ্টা করি এখানকার এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে।
খবর ৭১/ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here