দুধ, দই এবং পশু খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআইকে পরীক্ষার নির্দেশঃ হাইকোর্ট

0
421

খবর৭১ঃ দুধ, দই এবং পশু খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তাতে কি পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, এন্টিবায়োটিক, রাসায়নিক, সীসাসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তা নিরূপন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ২৩ জুনের মধ্যে এ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। আদালতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিষ্টার ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআই’র পক্ষে ছিলেন ব্যারিষ্টার সরকার এম আর হাসান মামুন, দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) প্রধান অধ্যাপক ড. শাহনীলা ফেরদৌসীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শাহিন আহমেদ।

এদিকে আজ শুনানিকালে বিএসটিআই আবারো শাহনীলা ফেরদৌসীর প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, তারা(এনএফএসএল) বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার চুক্তির আওতায় কাজ করে। তাদের কার্যক্রম বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে তারা গবেষণা করে। অথচ আপনারা নিজেরা কিছু না করেই তাদের রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। এই রিপোর্ট দেখুন, তা দেখলে গা শিউরে উঠবে। আর আপনারা এসি রুমে বসে আছেন। দায়িত্ব নিয়েছেন কাজ করার। কিন্ত তা না করে এসি রুমে বসে থাকবেন, তা হবে না। আদালত বলেন, ২০১৭ সালে আইসিডিআরবি ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির পরীক্ষায়ও এসব বিষয় উঠে এসেছে। কিন্তু আপনারা বলছেন, কিছু পান না। আপনাদের পরীক্ষায় সত্য উদঘাটিত হচ্ছে না কেন? আপনাদের বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্য নয়।

এর আগে হাইকোর্ট গত ১৫ মে এক আদেশে ২৩ জুনের মধ্যে ভেজাল মেশানোর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা দাখিল করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে গাভির দুধ ও বিভিন্ন প্যাকেটজাত দুধ, দই ও গো-খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তাতে কি পরিমান কীটনাশক, ব্যাকটেরিয়া, এন্টিবায়োটিক, রাসায়নিক, সীসাসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তা নিরূপন করে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া জড়িতদের বিরুদ্ধে কি আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও আদালতকে জানাতে বলা হয়।

একই আদেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) প্রধান অধ্যাপক ড. শাহনীলা ফেরদৌসীকে তলব করে তার প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় আদালতে হাজির হয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন অধ্যাপক ড. শাহনীলা ফেরদৌসী। তিনি বলেন, নেদারল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে কাজ করি। এরপর সেই প্রতিবেদন যাচাই করে ফাও (আন্তর্জাতিক ফুড ও এগ্রিকালচার অরগানাইজেশন) তা প্রকাশ করে। এজন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাদের এমওইউ চুক্তির আওতায়ই এ কাজ করা হয়। একারণে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই্ নমুনা সংগ্রহ ও তা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। আর এনএসএফএল আইএসও সনদপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, আমাদের ল্যাবের প্রতিবেদন পেলেই তারা তা প্রকাশ করে না। এই পরীক্ষা ও প্রতিবেদন ঠিক আছে কীনা তা বিভিন্ন দেশের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। তিনি বলেন, আমাদের ল্যাবের মান অনেক দেশের চেয়েই উন্নত।

তার প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর বিএসটিআই’র আইনজীবী বলেন, তাদের প্রতিবেদন যে সত্য তা প্রমান করার সুযোগ কি? তারাতো অন্য কোনো ল্যাবে যাচাই করেনি। তারা নমুনা সংগ্রহ করেছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও সাভার থেকে। কিন্তু পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও যশোরেই সবচেয়ে বেশি দুধ উৎপাদিত হয়। সেখান থেকে তারা কোনো নমুনা সংগহ না করে ঢালাওভাবে বলে দিলো দুধে এইসব রয়েছে।

এসময় শাহনীলা ফেরদৌসী বলেন, এখানে শুধুই তিনটি জেলা নয়, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পণ্য রয়েছে। যেমন মিল্কভিটা, প্রাণ, আড়ং, ফার্ম ফ্রেশ, স্বপ্ন অর্গানিক, আফতাব ডেইরি মিল্ক, ঈগলু ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের পণ্য সারাদেশেই পাওয়া যায়। সুতরাং বিএসটিআই’র দাবি যথাযথ নয়। তিনি বলেন, খাদ্য দ্রব্যে রাসায়নিক, এন্টিবায়োটিক, সীসার উপস্থিতি নিয়ে আইসিডিডিআরবি ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রতিবেদন ২০১৭ সালেও প্রকাশিত হয়েছে। তা ইন্টারনেটেই রয়েছে। তাই শুধু একমাত্র আমাদের প্রতিবেদনেই যে ওইসব ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে তা নয়। আইসিডিডিআরবি ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিএসটিআই কি করেছে তা জানা নেই।

এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশ ছিলো আলাদাভাবে নমুনা সংগ্রহ করে তা ল্যাবে পরীক্ষা করবে। এই পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে। কিন্তু তারা সে কাজটুকু করেনি।

এসময় আদালত বিএসটিআই’র আইনজীবীকে বলেন, আপনাদের দায়িত্ব আপনারা পালন করছেন না। এসি রুমে বসে আছেন। আপনারা কেন আগে পরীক্ষা করে পদক্ষেপ নিতে পারলেন না।

এসময় বিএসটিআই’র আইনজীবী বলেন, আমরা ৫২টি পণ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এসময় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আগে করেননি। আদালতের নির্দেশের পর এটা করা হয়েছে।

শুনানিতে বিএসটিআই’র আইনজীবী যৌথভাবে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য আদালতের আদেশ দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। জবাবে আদালত বলেন, আগে আপনাদের রিপোর্ট পাই। এরপর সেটা দেখা যাবে। এরপর আদালত আদেশ দেন।

আজ শুনানিকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে বলেন, বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। তাদের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করবে আমাদের কার্যক্রম।

দুধ, দই ও গো-খাদ্যে কীটনাশক, ব্যাকটেরিয়া, এন্টিবায়োটিক, সীসাসহ মানব দেহের জন্য বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি নিয়ে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ‘গরুর দুধেও বিশেষ ভয়’ শিরোনামে কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এছাড়াও আরো কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আদালত এই প্রতিবেদন দেখে গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্বপ্রনোদিত হয়ে অন্তবর্তীকালীন নির্দেশনা দেন ও রুল জারি করেন। আদেশে দুধ, দই এবং গো-খাদ্যে ভেজাল মেশানোর ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাভির দুধ ও বিভিন্ন প্যাকেটজাত দুধ, দই ও গো-খাদ্যের নমুনা সংগ্রহ করে তাতে কি পরিমান কীটনাশক, ব্যাকটেরিয়া, এন্টিবায়োটিক, রাসায়নিক, সীসাসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে তা নিরূপন করতে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই নির্দেশের পর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here