দুই কর্মীকে বিএনপি খুন করেছে, প্রমাণ আছে: ওবায়দুল কাদের

0
285

খবর৭১ঃ নোয়াখালী ও ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের দুই কর্মীকে বিএনপি হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার যে দুটি হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেটি বিএনপি করেছে। এটার প্রমাণ আমাদের হাতে আছে, এটা কোনো সাজানো-বানানো কথা নয়। এরপরও আজকে আপনারা (বিএনপি) বলছেন, সারা দেশে অত্যাচার নিপীড়ন চলছে।

বুধবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের নির্বাচনী প্রচার সভায় তিনি এসব কথা বলেন।আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি এই সভার আয়োজন করে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, পল্টনে যে নারকীয় তাণ্ডব তারা শুরু করেছিল, সেটা এখনও তারা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে পাঁচবালিয়া ইউনিয়নে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।

তিনি বলেন, হানিফ নামের যুবলীগের এক কর্মীকে প্রথমে চোখের মধ্যে মরিচের গুঁড়া দিয়েছে, এরপর ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দিয়েছে, এরপর গুলি করে তাকে স্পটে হত্যা করেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিএনপি আবারও প্রমাণ করল তারা সন্ত্রাসী দল। কানাডার আদালত ভুল কোনও রায় দেয়নি।

বিএনপিকে শান্তিপূর্ণ পথে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নিজেরা গোলমাল করে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ দেবেন না। আজকে রাজনীতি কোথায় গেছে? কামাল হোসেন সাহেব তারেক জিয়ার নির্দেশে চলেন। মোস্তফা মহসিন মন্টু, মান্নান সুলতান, এদের মতো নেতা আজ তারেক জিয়ার নাটাইয়ের টানে চলে। লন্ডন থেকে রশি টানে, আর লন্ডন থেকে রশি ছাড়ে।

নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু ভোট হবে মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, সেই ভোটে আপনারা (বিএনপি) যে মুসলিম লীগের কাছাকাছি চলে গেছেন, সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

বিএনপিকে শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের শেষ পর্যন্ত থাকা দরকার। আপনাদের জনপ্রিয়তা কতটুকু সেটা ৩০ তারিখে জনগণ বুঝিয়ে দেবে। সেটা দেখার জন্য হলেও আপনাদের থাকা উচিত।

তিনি আরও বলেন,কেউ কেউ মতলবে আছেন, একসময় এই অজুহাত, ওই অজুহাত দিয়ে বলবেন, নির্বাচনের পরিবেশ নেই। পরাজয় যে কত শোচনীয় হবে, সেটা টের পাবেন। বহু আসনে ২০০৮ সাল থেকেও খারাপ অবস্থা হবে। সেই শোচনীয় পরাজয়ের জন্য অপেক্ষা করুন।

‘বিএনপির গণজোয়ার নয়, এখন গণভাটা চলছে’ এমন দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির নির্বাচনের হাট ভেঙে গেছে। আন্দোলনের হাট অনেক আগেই ভেঙে গেছে। আমি সড়কপথে ফেনী থেকে নোয়াখালী গেলাম। পথে ধানের শীষের একটি স্লোগানও শুনিনি।

তিনি বলেন, তারা নির্বাচন করবে তাদের একটা প্রার্থীও মাঠে নেই! আর মাঠে থাকবে কেন? মনোনয়নের জন্য টাকা দিয়েছে, সেই টাকা পাচ্ছে না। এখন তারা কখনও ফখরুলের অফিস ভাঙে, কখনও খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। আবার কখনও নয়াপল্টন অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়, কখনও গুলশান অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি এমন চ্যালেঞ্জ রেখে সেতুমন্ত্রী বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি- আমি কোনও সরকারি গাড়ি ব্যবহার করি না। নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে আমার গাড়ির পতাকা নামিয়ে দেয়া হয়েছে। একজন মন্ত্রী হিসেবে ও একটি দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যে নিরাপত্তা প্রহরী থাকার কথা, সেই হিসেবে আমার সঙ্গে কিছু পুলিশ থাকে। মওদুদ সাহেবের সঙ্গেও পুলিশ আছে, এটা তার নিরাপত্তার জন্য।

তিনি আরও বলেন, আমি গত তিন-চার দিন ঢাকায় ছিলাম না। ফেনী, কুমিল্লা এবং আমার নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছিলাম। আমি শুধু আপনাদের এতটুকু বলতে পারি, যা সত্য নয় তা প্রচার করে লাভ নেই। ৩০ তারিখ তো আমরা চাপা দিতে পারব না। যখন ফলাফল বের হবে তখনই বোঝা যাবে। এবার প্রচারণায় গিয়ে এ রকম জনস্রোত আমি এর আগে কখনও নৌকার পক্ষে দেখিনি। এটা আসলেই গণজোয়ার।

নিজ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এই যে মওদুদ আহমদ সাহেব বড় বড় কথা বলেন, তিনি গত পাঁচ বছরেও নির্বাচনী এলাকায় যাননি। এখন নির্বাচনের কারণে তিনি যাচ্ছেন, এ জন্য তাকে স্বাগত জানাই। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী না হলে তো নির্বাচন জমবে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা না হলে নির্বাচন কিসের? উনি কিন্তু জমাতে পারছেন না। বিএনপির ভাঙা হাট কোথাও জমছে না।

বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বালেন, জামায়াতে ইসলামীর কায়দায় তারা আজকে প্রচারণা চালাচ্ছে। বড় বড় লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করেছে। আজকে তারা লাঠির সঙ্গে পতাকা ব্যবহার করছে এবং সেটাকে প্লাকার্ড হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা ধানের শীষের নিচে ধামা-চাপাতি ব্যবহার করছে। এটা পুলিশ সেখানে লক্ষ করেছে, এটা নির্বাচন কমিশনকে জানানো উচিত।

গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুলের কর্মীরা বিক্ষোভ করেছে কোনও কোনও মিডিয়া প্রচার করেছে, অথচ আমাদের দুই কর্মী নৃশংসভাবে নিহত হলো, সেই খবর কোনও মিডিয়ায় নেই। দুঃখের সঙ্গে বলছি- আপনারা কেন আমাদের সঙ্গে এই ব্যবহারটা করছেন? একটা দল হিসেবে আমরা তো অতিরিক্ত কিছু চাইছি না। আমাদের দুজন কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো, সেটা তো বড় কোনও নিউজ না। হেডলাইন হলো ফখরুল। অথচ ফখরুলের গাড়ির একটি কাচও ভাঙেনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগের অফিস ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। সে খবর কোথাও নেই। মিডিয়ার একাংশ আমাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ক্যাম্পিং করছে। মনে হচ্ছে তারাই ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র। মনে হচ্ছে তারাই বিএনপির কাগজ। বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত মিডিয়ার একটি অংশ একটা দলের হয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের মনে রাখা উচিত, তাদের মিথ্যাচারে বাংলাদেশের জনগণ বিভ্রান্ত হবে না। ফখরুল হয়েছে তাদের শিরোনাম, দুটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড তাদের শিরোনাম হতে পারেনি।

এর আগে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে প্রচার সভা শুরু হয়। পরে ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি পরিবেশন করা হয়। এরপর বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে তারকা ব্যক্তিদের ভাবনায় নির্মিত ডকুমেন্টারি দেখানে হয়।

এ সময় তারকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শমী কায়সার, শাকিল খান, তানভীন সুইটি, অরুণা বিশ্বাস, শাহরিয়ার নাজিম জয়, রোকেয়া প্রাচী, শুভ্র দেব প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে সবার উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন আর ভাষণ দিয়ে লাভ নেই, অ্যাকশনে যেতে হবে। অনেক কাজ, অনেক ক্যাম্পেইন করতে হবে।

তিনি বলেন, আগামীকাল (বুধবার) থেকে আমাদের বর্ণাঢ্য প্রচার অভিযান গানে গানে সুরে সুরে চলবে। আপনাদের সবার সক্রিয় উপস্থিতি কামনা করছি। এবারের নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জেতার কোনও বিকল্প নেই।

আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপসম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপদফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।

খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here