দারিদ্রতা বড় বাঁধা শাকিলার ভর্তি জীবন

0
353

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাটঃ খেয়ে না খেয়ে কাটে দিন শাকিলা আক্তারের পরিবারের সকলের। দারিদ্রতার কারনে তবু কখনো পড়াশোনা থামাননি শাকিলা। শত দুঃখ কষ্টের মধ্যেও পাহাড় ডিঙিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে। চলতি বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু অর্থাভাবে আটকে গেছে তাঁর ভর্তি, ইতি টানতে হচ্ছে তার লেখাপড়া।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার সিন্দুর্না গ্রামের সহিদার রহমান ও রাহেলা বেগমের তৃতীয় সন্তান শাকিলা। ২০১৩ সালে লোকমান হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসিতে জিপিএ ৫ ও ২০১৬ সালে এসএসসিতে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৫ পান শাকিলা। ২০১৮ সালে একই বিভাগে হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজ থেকে ৪.৫৮ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন সে। চলতি বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ১৪০তম স্থান অধিকার করেছেন। কিন্তু তাদেও সংসারে অভাবের কারনে টাকা জোগাড় করতে না পারায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না শাকিলা।
শাকিলার বাবা সহিদার রহমান দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। কোনো কাজই করতে পারেন না তিনি। অসুস্থতার কারনে সারাদিরই শুয়ে বসে থাকতে হয় তাকে। শাকিলার বড় ভাই লিয়াকত হোসেন একজন পানের দোকান করেন। তার স্ত্রী-সন্তান আছে। শাকিলার মেজো ভাই আলমগীর হোসেন ঢাকায় অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। তবে টিউশনি করে নিজের সে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালান। আর ছোট বোন আক্তারা কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
শাকিলা বলেন, বাবা মায়ের সংসারে অভাব অনটনের মধ্যেও‘অনেক কষ্ট করে এত দূর এসেছি। আজ একটি ভালো জায়গায় ভর্তির সুযোগ পেয়েও সেখানে ভর্তি হতে পারছেন না। ভর্তিসহ পড়াশোনার টাকা জোগান নিয়ে খুব চিন্তিত আদৌ সে সেখানে ভর্তি হতে পারবেন কিনা। যেখানে ভর্তির টাকাই জোগাড় করা দায় সেখানে পড়াশোনা করব কিভাবে।’
শাকিলার বড় ভাই লিয়াকত বলেন, ‘১৯৯৬ সালে বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন থেকে সংসারে অভাব নেমে আসে। অভাব পূরণে আমি নিজে একটি পানের দোকান দিই। কিন্তু দোকানের সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। পানের দোকানের পাশাপশি অন্যের কিছু জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করতে শুরু করি। কিন্তু ক্ষেতে কাজ করার সময় তখন তাকে দোকান বন্ধ রাখতে হয়। তাই সংসার চালানোটা খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ছিল। সংসারে যখন অভাব অনটন ঠিক সেই সময় অবস্থায় তার ছোট বোন শাকিলা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সুযোগ পায়। তবে তার ভর্তি ও পড়ালেখার খরচ জোগাড় করাটা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলে লিয়াকত জানান। এ অবস্থায় তিনি সমাজের বিত্তবান লোকদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।’
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান বলেন, ‘শাকিলা অত্যান্ত মেধাবী একজন ছাত্রী। তার কলেজ থেকেই পাশ করে সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এখন অর্থাভাবে তার সেই ভর্তি অনিশ্চিত হওয়ায় লেখাপড়া বন্ধ হওয়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই তিনি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এসে শাকিলার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ সুগম করে দেয়ার আহবান জানান।’

খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here