থেমে নেই সাগরপথে মানবপাচার!

0
392

খবর৭১ঃ কক্সবাজার উপকূল দিয়ে ট্রলারে চেপে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার অব্যাহত আছে। তবে প্রশাসনের তৎপরতার কারণে পাচারকারীচক্র এবার কৌশল বদলিয়েছে। পাচারের জন্য তারা বাংলাদেশিদের পরিবর্তে রোহিঙ্গাদের ওপর নজর দিয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফের প্রায় ৩০টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চক্রের সদস্যরা নিয়মিত আনাগোনা করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে তারা। প্রায় ৪৫০ সদস্যের এ চক্রের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১৩ জন আটক আছে।

টেকনাফ দিয়ে পাচারকালে গত এক সপ্তাহে তিন দফায় ১৭১ জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুকে উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড, বিজিবি ও পুলিশ। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাস করে আসছিল। এরই মধ্যে সাগরপথে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সেন্ট মার্টিনস থেকে দুই দালালকে আটক করে পুলিশ। ওই দুই দালালের বাড়ি সেন্ট মার্টিনসেই।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহে অভিযানে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আর এসব নারীর বেশির ভাগ অবিবাহিত। তাদের মালয়েশিয়ায় বিয়ে দেওয়ার নাম করে পাচার করা হচ্ছিল। এর আগে এভাবে অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছে। তা ছাড়া অনেক নারীই সন্তানসহ মালয়েশিয়া পাড়ি দিতে চান, যাঁদের স্বামী সেখানে অবস্থান করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার স্থানীয় বাংলাদেশিরা রোহিঙ্গাদের যোগসাজশে মানবপাচারের একটি বড় নেটওয়ার্ক গড়েছে। এ নেটওয়ার্কের হয়ে ক্যাম্পে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রচারণা চালায় চক্রের রোহিঙ্গা সদস্যরা। ক্যাম্পের যারা বিদেশ গমনে রাজি হয়, তাদের বাইরে এনে চক্রের বাংলাদেশি সদস্যের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর তাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর নামে রাতের অন্ধকারে সুযোগ বুঝে ট্রলারে তুলে দেওয়া হয়। এসব ট্রলার সাগরের মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থান করা জাহাজে তুলে দেয় বিদেশ গমনেচ্ছুকদের।

অভিযোগ আছে, মানবপাচারকারীচক্রের খপ্পরে পড়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গা প্রতারণার শিকার হয়েছে। পাচারকারীরা রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার নামে ট্রলারে তুলে সাগরে দু-তিন দিন ঘুরিয়ে টেকনাফের অন্য এলাকায় নামিয়ে দেওয়া হয়। আর বলা হয়—এটিই মালয়েশিয়া। পাচারকারীচক্রটি এসব রোহিঙ্গাকে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার নামে অগ্রিম ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা করে আদায় করে থাকে।

সরেজমিনে উখিয়া জামতলী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে জানা যায়, ক্যাম্পের ভেতরে পাচারকারী কয়েকটি সংঘবদ্ধচক্র রোহিঙ্গাদের সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠাতে তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বদ্ধ জীবনযাপন ছেড়ে কম খরচে ট্রলারে মালয়েশিয়া যেতে উদ্বুদ্ধ করছে। এ ছাড়া ক্যাম্পে থাকলে যেকোনো সময় মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হবে—এমন ভয়ও দেখাচ্ছে রোহিঙ্গাদের।

জামতলী ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নাগরিক মোহাম্মদ শাকের বলেন, ‘ক্যাম্পে একাধিক চক্র রোহিঙ্গাদের সাগরপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যেতে তৎপর। তারা রোহিঙ্গাদের জাহাজে করে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার নামে জনপ্রতি ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে। তারা রোহিঙ্গাদের অভয় দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে যে সাগরে তাদের বড় জাহাজ নোঙর করা রয়েছে। সেই জাহাজে করে মালয়েশিয়া পাঠানো হবে।’

সাগরপথে মানবপাচারের চেষ্টার সময় প্রশাসনের তৎপরতায় কয়েক দফা বাধাগ্রস্ত হওয়ার পরও থামছে না পাচারের নামে এ প্রতারণা। পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও র‌্যাবের অভিযানে প্রায়ই মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গারা উদ্ধার হলেও পাচারকারীচক্রের হোতারা বরাবরই অধরা থেকে যায়।

জানতে চাইলে কোস্ট গার্ড সেন্ট মার্টিনস স্টেশন কমান্ডার লে. কমান্ডার শেখ মাহমুদ হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাগরপথে মানবপাচারের যতই চেষ্টা করা হোক তারা বাধাগ্রস্ত হবে। সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার ঠেকাতে কোস্ট গার্ড সজাগ আছে।’

টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘সাগরপথে মানবপাচার রোধে পুলিশ সদা তৎপর আছে। যেসব পয়েন্ট দিয়ে মানবপাচারের আশঙ্কা আছে, সেখানে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া পাচারকারীচক্রের সদস্যদের ব্যাপারেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here