তিস্তার ভাঙ্গনে ২ শতাধিক পরিবার গৃহহীন

0
334

মোঃ আরিফুল ইসলাম
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

ভাঙ্গছে নদী। বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ীসহ আবাদি জমি। ভাঙ্গনরোধে পাউবো কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ না নেয়ায় গত ৭ দিনের ব্যবধানে তিস্তা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে উপজেলার বজরা ইউনিয়নের সাতালস্কর, সাদুয়া দামারহাট,চর বজরা দক্ষিণ গ্রামের ৩৯ পরিবার এবং থেতরাই ইউনিয়নের হোকডাঙ্গার হিন্দু পাড়া ও ডাক্তার পাড়া গ্রামের ৫০টি পরিবারসহ দুই শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে সদ্য নির্মিত টি বাঁধ সহ ৮ গ্রামের ২০ হাজার মানুষ। অবিরাম ভাঙ্গনের মুখে ঘরবাড়ী সরাতে হিমশিম খাচ্ছে ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষজন। গত কয়েকদিন থেকে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। সেইসাথে পাল্লা দিয়ে ভাঙ্গছে নদী।
জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের সাতালস্কর এবং থেতরাই ইউনিয়নের হোকডাঙ্গা গ্রামে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার নদী ভাঙ্গনের ভয়াবহ রুপ। চোখের সামনে ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল হোকডাঙ্গা গ্রামের পদ্ম বালার বসত ভিটা। নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে দালাল পাড়া, কড়াই পাড়া গ্রাম। তিস্তা নদী অববাহিকার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নেফরা, নন্দু নেফরা, বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা, বাধেঁর বাজার, ও বগুলাকুড়া গ্রামেও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত নাগড়াকুড়া টি-বাঁধ সহ ৫টি গ্রাম ও পাইকর পাড়া শ্যামলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২টি মন্দির। হোকডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক আব্দুল বারী সহ ভুক্তভোগি অনেকেই জানান, গতবছর থেকে এসব এলাকায় ভাঙ্গন শুরু হলেও কর্তৃপক্ষ ভাঙ্গন রোধে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় এ বছর ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানান তারা।
থেতরাই ইউনিয়নের ডাক্তার পাড়া গ্রামের বাসিন্ধা সংরক্ষিত মহিলা সদস্য তারামনি রাণী জানান,৭ দিন ধরে ওই এলাকায় তিস্তার ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত ২ দিনের ভাঙ্গনে তার বাড়ীসহ পুরো হিন্দু পাড়া ও ডাক্তার পাড়া গ্রাম দু’টি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমার বসতবাড়িও নদীতে চলে গেছে। চলতি ভাঙ্গনে শতাধিক পরিবার ও গত বছর ভাঙ্গনে ৫০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙ্গনের ঝুকিতে পড়েছে আরো ৫০টি পরিবার। ভাঙ্গনে ঘরবাড়ী হারিয়ে মানুষজন দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। হিন্দু পাড়া ও ডাক্তার পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৬৫), মনোরাম চন্দ্র বর্মন (৭৫) ও করিমল চন্দ্র বর্মন (৫৫) জানান, চলতি ভাঙ্গনে বাড়ীঘর হারিয়ে তারা নিঃস্ব হয়েছেন। অর্থের অভাবে বাড়ীঘর করতে পাচ্ছেন না। এলাকাবাসির দাবী রিলিপ চাই না, ভাঙ্গনরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা চাই।
বজরা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ রেজাউল করিম আমিন জানান, ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখে দেখেছি। ভাঙ্গন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। বিষয়টি মৌখিকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। তালিকা তৈরী করা হচ্ছে, দ্রুত জমা দিবো।
থেতরাই ইউপি চেয়ারম্যান আইযুব আলী সরকার জানান, ভাঙ্গনরোধে আবেদন করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা চাওয়া হয়েছে, তালিকা পেলে ক্ষতিগ্রস্থদের প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করা হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ওই এলাকার ভাঙ্গনরোধে ৩৫ কিঃ এলাকায় ৭টি ”টি বাঁধ” নির্মানের জন্য ২‘শ ৪২ কোটি টাকার প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে প্রকল্প অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here