তাড়াশে বিপর্যস্ত কৃষিঃ উর্বর কৃষি জমিতে পুকুর খনন

0
317

জহির রায়হান-সিরাজগঞ্জঃ
সিরাজগঞ্জ জেলার শষ্য ভান্ডার নামে খ্যাত তাড়াশে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর থেকে উর্বর ফসলি জমি কেটে পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। সরকারী বিধি বিধান ও ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘন করে বিগত ৫-৬ বছরে কমপক্ষে সহস্রাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে তাড়াশ উপজেলা জুড়ে।অপরিকল্পিতভাবে ও অব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে পুকুর নির্মান করায় ইরি ধান উতপাদনকারী কৃষকেরা পানি সেচ নিয়ে বিপাকে রয়েছে বলে জানা যায়।

সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ধান , সরিষা, অন্যান্য ফসল উৎপাদনে যথেষ্ট শ্রম ব্যয় ও অর্থ বিনিয়োগ করেও কাক্সিক্ষত মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা আর তাই অধিক লাভের আসায় উর্বর ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করে তুলনামূলক ঝামেলাহীন অর্থ উপার্জনে অতি উৎসাহী হয়ে উঠছেন তারা। এসব পুকুরে নিজেরা মাছচাষ করছেন, আবার কেউবা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মৎস্যচাষীদের কাছে লিজ দিচ্ছেন। পুকুর খননের ফলে একদিকে যেমন ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে। অন্যদিকে শস্যভান্ডাার হিসাবে খ্যাত চলনবিল অধ্যূষিত তাড়াশ উপজেলায় খাদ্য উৎপাদন ব্যাপক হারে কমতে শুরু করেছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘন করে সংশ্লিষ্টদের চোখের সামনে এসব কর্মযজ্ঞ ঘটে চললেও প্রতিকারে নেই কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ।
খাল-বিল, নয়নজুলি ও জলধারাগুলো ক্রমান্বয়ে দখল ও ভরাটের কারণে যেমন করে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, তেমনি পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। গণহারে ব্রিজের মুখে মাটি ফেলে মাছ চাষ ও বসত ভিটা তৈরি করা হচ্ছে। আর সড়কের ধারে যে সব পুকুর খনন হচ্ছে সেখানে সড়কগুলোকে পুকুরের পাড় হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার ২৫ হাজার হেক্টর ফসলি জমি।

উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, বিগত ৫-৬ বছরে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ৫শ’ ১৫টি পুকুর খনন হয়েছে। ২০১৬ সালে জলাবদ্ধতায় দুই হাজার দুইশ হেক্টর জমিতে রবিশস্য আবাদ করা সম্ভব হয়নি। ২০১৭ সালে আরো তিন হাজার হেক্টর রবিশস্য আবাদ কম হয়েছে জলাবদ্ধতার প্রতিবন্ধকতায়। অনুরূপ কারণে একই বছর ২৯ হাজার বিঘা জমির রোপা আমন ধান পানিতে তলিয়ে একেবারে পচে যায়।

এদিকে কৃষকের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে চুক্তিভিত্তিক বা লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে চড়া দামে মাটি বিক্রি করছেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। ড্রাম ট্রাকে করে এসব মাটি বিভিন্ন স্থানে বহনের সময় ট্রাকের পেছনের ঢাকনা খোলা থাকায় এবং ওভার লোডিংয়ের কারণে মাটি পড়ে নষ্ট হচ্ছে সরকারি পাকা সড়কগুলো। ঘনকুয়াশা বা সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে পড়ে থাকা মাটি ভিজে গেলেই যানচলাচলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। কখনো কখনো পাকা সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে পায়ে হেঁটে চলাও মুশকিল হয়ে পড়ে। কেউ কেউ এসব মাটি পরিষ্কার করতে গিয়ে কোদাল দিয়ে পাকা সড়কের কার্পেটিং তুলে সড়কগুলো নষ্ট করে ফেলে। জনসম্মুখে জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকান্ড ঘটে চললেও একেবারেই নীরব সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন হয় তাড়াশে। ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা লঙ্ঘন করে পুকুর খননের ফলে ফসলি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে আসায় ফলস উৎপাদন প্রতি বছর হ্রাস পাচ্ছে। আর খাল-বিল, নয়নজুলি দখল ও ভরাট করায় পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে অসময়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আহসান হাবীব জিতু বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী অনুমতি ছাড়া ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। শিগগিরই এসব বন্ধে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here