খবর৭১,সেলিম হায়দার,তালা:
আবহমান বাংলার চিরাচরিত অতীত ঐতিহ্য নৌকা। একসময় নৌকাই ছিল মানুষের যাতায়াতের একমাত্র সম্বল। রাজা বাদশাহদের আমলেও বিয়ের কাজে যাতায়াত সহ নৌকাই ছিল যেন একমাত্র ভরসা। নদীমাতৃক বাংলাদেশে সবুজ প্রকৃতির বুকে মাঝ নদীতে পাল তুলে নৌকা চালানো যেমনই মানুষের মনকে মুগ্ধ করতো তেমনই নৌকায় যাতায়াত এবং ভ্রমণ ছিল এক অন্যরকম আনন্দের বিষয়। চিত্রজগতের পুরাতন পর্দায় নায়ক-নায়িকাদের নৌকার দৃশ্য যেন দর্শক নন্দিত হয়ে উঠত। আবার জেলে জীবনে নৌকায় ছিল যেন মৎস্য আহরণের একমাত্র অবলম্বন। মাঝ নদীতে জাল পেতে মাছ শিকার করা কিংবা সাগরের তলদেশ হতে মাছ মারা ছিল এদেশের মানুষের প্রাচীন কর্ম।
কালের বিবর্তনে আজ যেন সেগুলোর সবই বিলুপ্ত হতে বসেছে। নদ-নদী হারিয়ে যেতে বসার সাথে সাথে পেটের তাগিদে মানুষের কর্মের পরিবর্তন হয়ে গেছে। নদীগুলো যেমন মরা খালে পরিণত হয়েছে তেমনই নৌকার কদর কমে যাওয়ার সাথে সাথে নির্মাণ শ্রমিকরগণ তাদের আয়ের উৎস পাল্টে ফেলেছে।
সরেজমিনে বেশ কয়েকদিন ধরে তালা উপজেলার পাটকেলঘাটাসহ বিভিন্ন বাজারে বেশ জোরে শোরে ব্যস্থতার মাঝে নৌকা তৈরী করতে দেখা মেলে। এতোটাই তড়িৎ গতিতে কাজ করছেন যেন শ্রমিকের ঘাটতি পড়ায় বাইরে থেকে নৌকার কারিগর নিয়ে এসে কাজ করাতে বাধ্য হচ্ছেন।
পাটকেলঘাটার বলফিল্ড মোড়ে এমনই নৌকা তৈরীতে ব্যস্থতার সময় অতিবাহিত করতে দেখা যায়। গত কয়েকদিন ধরে বিশেষত শ্রাবণে অতিবৃষ্টির কারণে অধিকাংশ জায়গা বিশেষত নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াতের লক্ষ্যে নৌকা ক্রয়ের জন্য প্রতিনিয়ত খরিদ্দার আসছে। শুধু এখানেই নয়, বাইরের অঞ্চল বিশেষত কেশবপুর, তালা সহ বন্যা কবলিত জলাবদ্ধ এলাকায় নৌকায় যেন একমাত্র ভরসা হয়ে দাড়িয়েছে। সাথে সাথে ঘের বেড়ি তলিয়ে যাওয়ায় ঘেরে যাতায়াত এবং নদীতে মাছ শিকার করার লক্ষ্যে বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ফলোশ্রুতিতে নৌকার কারিগরদের দিন-রাত পরিশ্রম করে নৌকা তৈরীতে ব্যস্থতার সময় পার করছে। এমনই কারিগর পাটকেলঘাটার বলফিল্ড মোড়ের আবুল কালাম, তরিকুল ইসলাম জানান, এবছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই নৌকার বিক্রির বেশ হিড়িক পড়েছে। তাছাড়া অনেক জেলা এবং উপজেলার নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রুপ নেয়ায় নৌকায় এখন সম্বল হয়ে পড়েছে বলে ক্রেতা সাধারণ জানাচ্ছেন। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে তাই এ কাজে সকলে মিলে ঠক ঠক শব্দে সময় পার করছি।
খবর৭১/জি: