তালার প্রাচীণ স্থাপত্যে প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের অনুসন্ধান ॥ অস্তিত্ব মিলেছে আদি-মধ্য যুগের

0
217

সেলিম হায়দার ॥
পুরাকীর্তির সন্ধানে সাতক্ষীরার তালায় প্রথম বারের মত খনন কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ। উপজেলার আগোলঝাড়া ও ডাঙ্গা নলতার মধ্যবর্তী ঝুঁড়ি ঝাড়ার মাঠের উঁচু মাটির ঢিবিতে গত ৭ নভেম্বর ক্যাম্প স্থাপন ও ১১ নভেম্বর থেকে শুরু করেছে এই খনন কাজ। এর আগে ২০১২ সালে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ নিজেদের আওতায় নিয়ে স্থানটি সংরক্ষণ করে। জেলার প্রথম শুরু হওয়া খননে ইতোমধ্যে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ ধারণা করছে,আদি ও মধ্য যুগের মাঝামাঝি সময়ের স্থাপনা এটি। গত ৬ দিনের খননে তারা ঐসময়ের মৃৎ শিল্পের কিছু নমুনা বা নিদর্শণ ও ব্রিটিশ শাষনামলের একটি কয়েন (মুদ্রার) সন্ধান পেয়েছে। তবে সেখানে প্রাপ্ত বাড়ির নক্সা ও ইটের গাথুনি দেখে ধারণা করা হচ্ছে,এর আগে ১ শ’ বছর বা তার কিছু সময় আগে-পরে গুপ্ত ধন কিংবা অন্য যেকোন কারণে সেখানে খনন বা তছরুপ করা হয়েছিল।
প্রতœতত্ত্ব বিভাগ খুলনার পরিচালক(ভারপ্রাপ্ত) একেএম সাইফুর রহমান জানান,ভরত-বায়নার পর এ পর্যন্ত এ জনপদে তারা বিশেষ কোন খনন কাজ কিংবা কোন পূরাকীর্তির সন্ধান পায়নি। তবে তালার এ খননে তাদের কাছে আশা স ারিত হয়েছে। অভিজ্ঞতার আলোকে নমুনা দেখে তারা ধারণা করছেন,এটা আদি ও মধ্য যুগের মাঝামাঝি সময়ের কোন স্থাপত্য এটি।
তিনি জানান,২০১২ সালে সেখানকার ৫০ শতাংশ জমি করায়ত্ব করে তারা সংরক্ষণ করে আসছে। তবে জনবল থেকে শুরু করে নানা সংকটে এর প্রায় ৬ বছর পর তারা খনন কাজ শুরু করল।
এলাকাবাসী প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের পূরাকীর্তির অনুসন্ধান বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন,সহযোগীতা করছেন অধিদপ্তরকে। স্থানীয় থানা পুলিশও নিরাপত্তা দিচ্ছেন তাদেরকে জানাচ্ছিলেন, অধিপ্তরের এ কর্মকর্তা।
সাইফুল ইসলাম বলছিলেন,তাদের খনন কাজ দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এসে ভীঁড় করছে। তরুণদের অনেকে এসে তাদের কাছে জানতে চাইছেন,এপর্যন্ত তারা কোন পূরাকীর্তি নিদর্শণ উদ্ধার করতে পেরেছেন কিনা কিংবা কোন সময় বা আমলে তাদের জনপদে মানব সভ্যতা গড়ে উঠেছিল? ইত্যাদি সব কৌতুলী প্রশ্ন তাদেরকেও প্রতি মূহুর্তে মূল কাজে অনুপ্রাণিত করছে। তিনি বলেন,মোট ৯ জন সদস্য প্রতি দিন সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত নিরলস পরিশ্রম করছেন খনন কাজে।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফীরন বলেন, সরকারের অনুমতিক্রমেই প্রতœতত্ত্ব বিভাগ কাজ করছেন। খননকাজ শেষ হলেই বিস্তাারিত জানা যাবে।

প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর খুলনা আ লিক কার্যালয়ের সহকারী কাস্টরিয়াম মো.শাহিন আলম জানান,বহু বছরের পুরনো এই মাটির ঢিবিটি এলাকায় ঝুঁড়ি-ঝাড়ার মাঠ নামে পরিচিত। এলাকাবাসী অবশ্য এলাকাটির নাম করণ নিয়ে নানা প্রচলিত উপাখ্যানের কথা বলেন,অনেকের দাবি তাদের (পূর্ব পূরুষদের ভাষ্যমতে) প্রাচীণকালে সংঘবদ্ধ জিন চক্র এক রাতে পাশের একটি পুকুর কেটে সেখানকার মাটি ঝুঁড়ি ঝাড়েন সেখানে। অনেকে আবার বাগেরহাটের খাঁজা খানজাহান আলীর শীষ্য বা অনুসারীদের ধর্ম প্রচারে জনপদে আসলে বিভিন্ন সময় তাদের অলৌকক ক্ষমতা বলের নিদর্শন স্বরুপ বাড়িটি নির্মিত হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করেন।
তবে বাস্তবতা প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের আশংকাকেই মূল্যায়ন করছে অন্যভাবে। ইতোমধ্যে খননকৃত ধ্বংশাবশেষের মধ্যে ব্রিটিশ আমলের একটি কয়েন পাওয়ায় এবং ভবনটির বিভিন্ন ওয়াল এলাপাথাড়িভাবে আগেই অস্তিত্বহীন থাকায় ধারণা করা হচ্ছে,১ শ’বছর কিংবা তারও আগে-পরে সেখানে রতœ ভান্ডার বা অন্যকোন উদ্দেশ্যে ধ্বংস যজ্ঞ চালানো হয়েছিল।
তবে সেখানে যাই ঘটুক,আদি কিংবা মধ্যযুগের মাঝামাঝি সময়ে সভ্য মানুষের বসবাস ছিল তারই বার্তা বহন করে। তবে সেটি কোন সময় বা কোন বংশের শাষনামলে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে অপেক্ষা করতে হবে আরো বেশ কিছু দিন। ততক্ষণে আমাদের সাথেই থাকুন।

তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফীরন বলেন, সরকারের অনুমতিক্রমেই প্রতœতত্ত্ব বিভাগের কাজ করছেন। খননকাজ শেষ হলেই বিস্তাারিত জানা যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here