তমব্রুতে আবার ভারী অস্ত্রসহ মিয়ানমারের সেনা, বাংকার খনন

0
300

খবর৭১: বান্দরবানের তমব্রু সীমান্ত থেকে প্রত্যাহারের একদিন পরই ফিরেছে মিয়ানমারের সেনারা। এবারও ভারী অস্ত্র নিয়ে এসেছে তারা। খোড়া হয়েছে বাংকারও।

তবে কৌশল বদলে তারা সীমান্তের শূন্য রেখা থেকে বেশ কিছুটা দূরে বাংকারে অবস্থান নিচ্ছে। মাঝে মাঝে কাঁটাতারের কাছে টহল দিচ্ছে।

রবিবার সকালে ট্রাক ও মোটরসাইকেলযোগে নতুন সেনা সদস্যরা এসে আগে থেকে অবস্থান করা সেনাদলের সঙ্গে যোগ দেয়।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদেরকে যখন নিজ দেশে ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে, সেই সময় বৃহস্পতিবার বান্দরবানের তমব্রুতে দুই দেশের শূন্য রেখায় অবস্থান নেয় কয়েকশো সেনা।

এই শূন্য রেখাতেই অবস্থান করছে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা, যাদেরকে দিয়েই প্রত্যাবাসন শুরুর কথা। আর সেখানে মিয়ানমারের সেনা মোতায়েনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।

এ পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারই বাংলাদেশে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করে সরকার। আর শুক্রবার মিয়ানমারের শান্তিরক্ষী বাহিনী বিজিপির সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সঙ্গে পতাকা বৈঠকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় মোতায়েন হয়েছে সেনা।

তবে, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপিকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ জানায়, রোহিঙ্গাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান সালভেশন আর্মি-আরসাকে মোকাবেলাতেই এই সেনা মোতায়েন হয়েছিল।

ওই পতাকা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, মিয়ানমার বাংলাদেশ সীমান্তে কোনো পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশকে অবহিত করবে আগে। আবার আগামী ২৭ মার্চ থেকে সীমান্তে দুই দেশের যৌথ টহল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। আর তার আগেই সেনা সরিয়ে নেয় মিয়ানমার।

দুই পক্ষের বৈঠকের পর সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে আসার পর পরিস্থিতি পাল্টাতে ২৪ ঘণ্টাও সময় লাগল না।

রবিবার সকাল থেকে সাতটি ট্রাকে করে সেনা সদস্যরা তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অবস্থান নেয়। তারা সেখানে বাংকারও খনন করছে। প্রতি ২০-২৫ গজ পর পর এই বাংকার খনন করে ভারী অস্ত্র মজুদ করা হচ্ছে। কিছু সেনাসদস্য কাঁটাতারের পাশের পাহাড়ে চৌকিতে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে অস্ত্র তাক করে থাকেন। এ সময় পাহাড়ের ঢালুতে কিছু লোককে বালুর বস্তা ফেলে পরিখা খনন করতে দেখো গেছে। তবে বেলা দেড়টার দিকে টহলরত সেনা ও বিজিপি সদস্যরা পাহাড়ে ঢুকে পড়েন।

স্থানীয় গুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘১ মার্চ সীমান্তে সাত ট্রাক সেনা বৃদ্ধি করা হয়। ২ মার্চ সকালে সেনা সদস্যরা সরে যায়। পরে পতাকা বৈঠক শেষে আবারও তারা সীমান্তে অবস্থান নেয়। আজ আরও শতাধিক সেনা সদস্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের মনে আতঙ্ক বেড়েছে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ জানান, সীমান্তের জিরো লাইনে বিজিবি তিনটি সিসি ক্যামেরা বসানোর পর মিয়ানমার তাদের সেনাবাহিনীকে সরিয়ে নেয়। শুক্রবারের পর থেকে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে সেনাবাহিনীকে দেখা যায়নি। কিন্তু রবিবার সকাল থেকে বেশ কয়েকটি ট্রাকে করে শতাধিক সেনা সদস্য অবস্থান নিয়েছে।

এ ব্যাপারে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক বলেন, ‘সেনা বৃদ্ধির খবরটি জানতে পেরেছি। তবে এটা ওদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিজিবির কক্সবাজারস্থ ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খাঁন বলেন, ‘বিজিবির পক্ষ হতে সীমান্ত পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এতে বিজিবিও সর্বোচ্চ সর্তকাবস্থায় রয়েছে। যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবি পালটা জবাব দেবে।’

জিরো লাইনের রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার দিল মোহাম্মদ, বলেন, ‘মিয়ানমার কোন প্রতিশ্রুতি ঠিক রাখে না। তারা বৈঠকে এক কথা বলে আর করে আরেকটা। এটি আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি।’

গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। আর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ছুটে আসে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা।

এদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে দিতে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। গত ১৬ জানুয়ারি করা ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট চুক্তি অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষই জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে।

সবশেষ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি তমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায় অবস্থান করা আট হাজার ৩২ জনের তালিকা মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দলের হাতে তুলে দেয়া হয়। এদেরকে দিয়েই প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা।

তবে গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল অং সো মাইকিং করে ঘোষণা করেন, নো-ম্যানস ল্যান্ড বা শূন্য রেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভূমির মালিক মিয়ানমার। তাই রোহিঙ্গাদের সেখানে অবস্থান করা আইনত অবৈধ। এখান থেকে সরে না গেলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের রাখাইনের ঢেঁকিবুনিয়া বিজিপি ক্যাম্পে বিভাগীয় কমিশনার পর্যায়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে শূন্য রেখায় অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here